বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জালিয়াতির খ্প্পরে নওগাঁর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস

  •    
  • ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৮:৩৫

দলিল তৈরির সময় ১২০০ টাকা করে ‘নজরানা’ আদায়ের অভিযোগ তো আছেই, সেই সঙ্গে দলিলের রেকর্ড জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে নওগাঁর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে।

নওগাঁয় সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসের একটি চক্র কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের সঙ্গে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর যোগসাজশ রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্য মতে, গত বছর এ অফিসে ৯ হাজার দলিল তৈরি করা হয়েছে। চলতি বছরও প্রায় একই পরিমাণ দলিল সম্পাদন হতে পারে। তবে প্রতি মাসে একই হারে দলিল সম্পাদন হয় না।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েক জন জমির ক্রেতা জানান, দলিল তৈরির সময় সরকারি ফি ছাড়া প্রতি দলিলে বাড়তি ১২০০ টাকা ‘নজরানা’ দিতে হয়, নইলে দলিল সম্পাদন হয় না। এ ছাড়া দলিলের ভুল ত্রুটি ধরে মোটা টাকার বিনিময়ে রফা করা হয়। তারা অভিযোগ করেন, নওগাঁ সদর সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসের কিছু অসাধু কর্মকতা-কর্মচারী এভাবে হয়রানি করেন।

সম্প্রতি জালিয়াতির একটি অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। নওগাঁর জেলা রেজিস্ট্রার প্রাথমিকভাবে সাত জনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।

জেলা রেজিস্ট্রার ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবর এ অভিযোগ দায়ের করেন নওগাঁ শহরের কোমাইগাড়ি মহল্লার আজগর আলীর ছেলে সোহেল রানা। এতে বলা হয়, ১৯৮৩ সালের ৩ জুলাই ৮৩৫১ নম্বর দলিল মোতাবেক নওগাঁ শহরের কোমাইগাড়ি মৌজার আট জন দাতা মিলে কিছু সম্পত্তি নওগাঁ শহরের খলিসাকুড়ি মহল্লার তাছের উদ্দিন মন্ডলের ছেলে এ কে এম আজাদ হোসেনের বরাবর কবলা রেজিস্ট্রি করে দেন। সম্প্রতি সোহেল রানা ওই ক্রয়কৃত সম্পত্তির দলিলের জাবেদা নকল ওঠান। তিনি দেখতে পান মূল দলিলের সঙ্গে জাবেদা নকলের কোনো মিল নেই। দলিলের ভিতরে দাতা-গ্রহিতার নাম পরিবর্তন করে তফশিল সংযোজন করা হয়েছে।

সোহেল রানা জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ করেন। পরে অনুসন্ধান করে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে ১৬৩ নম্বর ভলিউম বইয়ের ওই পাতাগুলোই পুরোপুরি বদলে ফেলা হয়েছে। দলিল বাংলা অথবা ইংরেজি যে কোনো একটি ভাষায় সম্পাদিত হয়ে থাকে। কিন্তু ঐ দলিলটি একই সাথে বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় সম্পাদিত।

এ ঘটনায় নওগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে তোলপাড় শুরু হলে জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য নওগাঁর বদলগাছির সাব-রেজিস্ট্রার পারভেজ মাসুদকে দায়িত্ব দেন। তার তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে এ ঘটনায় সম্পৃক্ত নকলনবিশ শামিমা সিদ্দিকা, আবুল কালাম আজাদ, জুলকার নাইন, মো. রাশেদুল ইসলাম, নকল তুলনাকারী মো. রাশেদুল ইসলাম রাজু, মৌসুমী আকতার, নকল পাঠক ফারহানা ইয়াসমিনকে দোষী সাব্যস্ত করে জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই সাত জনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন জেলা রেজিস্ট্রার।

বরখাস্ত সাত জনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তারা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মোহরার গোলাম সামদানীর দলিল সূচি তৈরির দায়িত্ব পালন করেন। দলিলের জালিয়াতি তার নজরে আসার কথা। এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।

তদন্ত বিষয়ে নওগাঁ সদর সাব-রেজিস্ট্রার রবিউল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সারা দিন দলিল, জাবেদা নকলসহ তাকে প্রচুর কাগজে স্বাক্ষর করতে হয়। এত কিছু দেখার পরিস্থিতি থাকে না। শুধু সরকারি রাজস্ব জমা হয়েছে কিনা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মচারি ও রেকর্ড কিপারের স্বাক্ষর আছে কিনা– তা দেখে তিনি স্বাক্ষর করেন।

এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালামের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, আপাতত সাময়িকভাবে সাত জন নকলনবিশকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত শেষে আইজিআর বরাবরে প্রতিবেদন পাঠালে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

এই প্রক্রিয়ার সাথে মোহরার, রেকর্ড কিপার (মোহরার) জড়িত থাকেলও তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে কেবল নকলনবিশদের বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ হওয়ায় অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর