নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার মাদক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি জাকিরের ছদ্মবেশ ধারণ করে সাজাভোগ করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন জুয়েল নামে আরেকজন।
বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষের নজরে এলে জানানো হয় আদালতে। শনাক্ত হয় মূল আসামি। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শামছুর রহমানের আদালতে বৃহস্পতিবার বিষয়টি শুনানি হয়। পরবর্তী তারিখে দুজনকে একসঙ্গে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এক আইনজীবীকে সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
মাদক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেন জাকির ওরফে সোহেল ওরফে গাজী। ৪১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বন্দর উপজেলার নূরবাগ এলাকার সামাদ ওরফে সামেদ মিয়ার ছেলে।
তার হয়ে কারাগারে যেতে চাওয়া মো. জুয়েল বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জের আলাউদ্দিনের ছেলে।
মামলায় বলা হয়, ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জের রসূলবাগ এলাকা থেকে ২০টি ইয়াবাসহ জাকিরকে আটক করে পুলিশ। তিনি পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেন যে, তিনি বিদেশ থেকে ফিরে মাদক বিক্রি শুরু করেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করেন তৎকালীন বন্দর খানার উপপরিদর্শক মোকলেছুর রহমান।
সে মামলায় গ্রেপ্তারের পর কারাগারে যান জাকির।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজামান জানান, ওই বছরের ৩ মে পর্যন্ত আদালত থেকে জামিন পান জাকির। এর পর থেকে হাজিরা দিচ্ছিলেন। ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট আদালতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পংকজ কান্তি সরকার।
বিচার চলাকালে ২০১৭ সালের ১২ অক্টোরর সর্বশেষ আদালতে হাজির দেন জাকির। এর পর থেকে তিনি পলাতক। এ কারণে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
কোর্ট ওসি জানান, আটজন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে ২০২২ সালের ১০ আগস্ট রায় ঘোষণা করে আদালত। রায়ে আসামি জাকিরকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ১০ দিনের বিনাশ্রম সাজা ঘোষণা করা হয়।
আদালতের চেঞ্চ সহকারী জহিরুল ইসলাম জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর এক ব্যক্তি আদালতে আত্মসমর্পণ করে নিজেকে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি জাকির বলে পরিচয় দেন। তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন। তবে বিচারক জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠান।
তিন দিন পর কারা কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানায়, তাদের কাছে যাওয়া ব্যক্তি জাকির নন, তার নাম জুয়েল। এ নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ আদালতে একটি প্রতিবেদন পাঠায়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মাদক মামলায় ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট থেকে ৩ মে পর্যন্ত যে জাকির কারাগারে ছিলেন। তার সঙ্গে বর্তমানে আত্মসমর্পণ করা ব্যক্তির মিল নেই। নথিপত্র ও ছবিতেও অমিল রয়েছে।
কারাগারের রেজিস্ট্রারে পাওয়া গেছে আত্মসমর্পণ করা ব্যক্তির নাম জুয়েল। তিনি ২০১৬ সালের ৫ অক্টোকর থেকে ২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্য আরেকটি মামলায় জেলে ছিলেন। অর্থাৎ যখন মাদক মামলা হয়েছে তার অনেক আগে থেকেই তিনি জেলে রয়েছেন।
একজনের সাজা আরেকজন ভোগ করতে যাওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করেন নারায়ণগঞ্জের জেলার শাহ্ রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েল তাদের বলেছেন, তিনি জাকিরের সাজা ভোগ করতে এসেছেন। আদালত তাদের দেয়া প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর শুনানি করে।
ওইদিন মূল আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য আবার পরোয়ানা জারি করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে মাদক মামলার মূল আসামি জাকিরকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা জানান, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাওয়ার পর পরই মূল জাকিরের খোঁজে নামে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে নবীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আদালতে নেয়া হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠান।
২৮ সেপ্টেম্বর দুজনকে একই সঙ্গে আদালতে হাজির করা হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রসিকিউশন) শাওন শায়লা। তিনি জানান, ওই দিনের শুনানিতে আদালত তাদের কাছ থেকে জানবেন কেন একজনের সাজা অন্য আরেকজন ভোগ করতে এসেছেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, আদালতে আইনের পরিপন্থি কার্যকালাপ করায় জাকির ও জুয়েলের বিরুদ্ধে মামলা করবেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (২য়) আদালতের বেঞ্চ সহকারী।