মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় সরকারি শেখ হাসিনা একাডেমি অ্যান্ড উইমেন্স কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর তোলা যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ তদন্তে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কলেজের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় বৃহস্পতিবার বিকেলে এ কমিটি গঠন করা হয় বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ জাকিয়া সুলতানা।
তদন্ত কমিটির অহ্বায়ক করা হয়েছে কলেজের সংস্কৃত বিভাগের প্রধান সিনিয়র শিক্ষক সন্ধ্যা রানী দাসকে। বাকি ৬ সদস্য হলেন- প্রভাষক বিবেকানন্দ দাশ, নাসরিন খানম, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ রহমান, মো. সালাউদ্দিন, হুমায়ন কবির ও শেখ মাহবুবুল আলম।
আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে শিক্ষক কর্তৃক যৌন হয়রানির অভিযোগের দুই মাস হতে চললেও কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ার ফলে ভয়ে কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছে ওই ছাত্রী।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও কয়েকবার বিভিন্ন কারণে কলেজ থেকে শোকজ করা হয়। সবশেষ এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। যদিও ওই শিক্ষকের দাবি, তার বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
অভিযোগকারী ছাত্রীর ভাষ্য
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আবদুস সামাদ তালুকদার কলেজের ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসেই ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়াতেন। গত ২৪ জুলাই ওই ছাত্রী প্রাইভেট পড়তে গেলে ওই শিক্ষক তাকে নিয়ে ক্যাম্পাসের ২০৪ নম্বর কক্ষে যান। পড়ানো শেষে ওই ছাত্রীকে আটকে রেখে তিনি যৌন হয়রানি করেন। পরে ওই ছাত্রী কৌশলে ওই কক্ষ থেকে পালিয়ে বেগম রোকেয়া ছাত্রীনিবাসে চলে যায়। এরপর শিক্ষকের বিচার চেয়ে ১ আগস্ট অধ্যক্ষের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেয় ওই ছাত্রী।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলে, ‘আমি স্যারকে খুব শ্রদ্ধা করতাম। স্যার আমাকে একা প্রাইভেট পড়াতেন। ওই দিন আমাকে তিনি জড়িয়ে ধরেন এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। অনেক কষ্টে নিজেকে রক্ষা করি।
‘পরে তিনি আমার পায়ে ধরে বলেন, এ ঘটনা তুমি কাউকে বলবা না। আমিও কাউকে বলব না। আমি তোমার কলেজের সব বিষয় সাহায্য করব। কিন্তু এরপর সেই কলেজের কম্পিউটার অপারেটরকে দোষ চাপিয়ে বিষয়টা থানায় গড়াল। পরে আমি কলেজ হোস্টেল ছেড়ে বাড়ি চলে আসছি।’
কম্পিউটার অপারেটর হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি অধ্যক্ষকে জানানোর পর সামাদ স্যার আমার উপর ক্ষেপে যান। আমার নামে হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে ডাসার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন তিনি।
‘বিষয়টি তদন্ত করে বিচার দাবি করছি। যাতে কলেজের সব মেয়েরা ঠিকঠাকভাবে পড়ালেখা করতে পারে, কারও কোনো অসুবিধা না হয়।’
অভিযুক্তের দাবি ‘ঘটনা সাজানো’
লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৫ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ জাকিয়া সুলতানা। নয়দিন পর দেয়া নোটিশের জবাবে অভিযুক্ত বলেন, তার বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পুরো ঘটনা সাজানো।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রভাষক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনা সত্য নয়, আমি তাকে একা প্রাইভেট পড়াতাম। অধ্যক্ষের কাছে যে অভিযোগ দিয়েছে, আমি তার উত্তর দিয়েছি।’
থানায় সাধারণ ডায়েরির কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘ওই মেয়ের সঙ্গে হাফিজুর রহমানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। হাফিজ আমাকে হুমকি দিয়েছে, তাই থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছি।’
এ বিষয়ে ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষকের জিডির বিষয়টি বিজ্ঞ আদালতকে অবহিত করা হয়েছে। আদালত থেকে নির্দেশনা পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ওই শিক্ষকের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ জাকিয়া সুলতানা।