বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রওশনের অপসারণ: স্পিকারের দিকে তাকিয়ে জাতীয় পার্টি

  •    
  • ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১১:১১

বাংলাদেশের ইতিহাসে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতাকে অপসারণের নজির নেই। জাতীয় পার্টি রওশন এরশাদকে অপসারণের সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়ে এখনও জবাবের অপেক্ষায় আছে।

জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে পদ থেকে সরাতে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের স্পিকার বরাবর চিঠি দেয়ার পর দলে সংকট ঘনীভূত হয়েছে। সেই চিঠি দেয়ার ২০ দিন হয়ে গেলেও স্পিকারের দপ্তর থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, ওই অপসারণ প্রক্রিয়ায় নিয়ম অসুরসণ করা হয়নি। বিষয়টি তিনি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে অপসারণের জন্য জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে চিঠি দেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা (এমপি)। দলটির ২৬ এমপির মধ্যে রওশন এরশাদ এবং তার ছেলে সাদ এরশাদ ছাড়া বাকি ২৪ জন এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়ে এতে সই করেন। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, রওশন দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে সংসদের বাইরে আছেন।

চিঠি দেয়ার পরপরই মসিউর রহমান রাঙ্গা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রওশন এরশাদকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না।

গত ১৫ সেপ্টেম্বরের ওই বক্তব্যের কারণে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। ফাইল ছবি

কোনো দলের সংসদীয় নেতা নির্ধারণ হয় সেই দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে। অপসারণের ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়। সংসদীয় দল কোনো সিদ্ধান্ত নিলে স্পিকার সেটি অনুমোদন করেন, তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার অপসারণের নজির নেই।

রওশন এরশাদের অপসারণের বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও এমপি মুজিবুল হক চুন্নু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো কিছু জানি না। অপসারণ তো হওয়ার কথা। নিয়ম তো তাই।

‘কারণ আমরা সংসদীয় দল যে সিদ্ধান্ত দেব, সেটাই তো হবে। স্পিকার মহোদয় সেটাতেই চূড়ান্ত অ্যাপ্রুভাল দেবেন। এ প্রস্তাব উনার কাছে আছে। আমরা খবর নিইনি। দেখা যাক কী হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘(পরবর্তী) অধিবেশন তো দেরি আছে। এত ইমার্জেন্সির কিছু না। কাজেই হোক না।’

জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও এমপি মুজিবুল হক চুন্নু। ফাইল ছবি

রওশন এরশাদকে অপসারণের বিষয়ে সর্বশেষ কিছু জানেন কি না জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির এমপি ফকরুল ইমাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওটার ব্যাপারে তো কোনো প্রগ্রেস নেই।’

কী কারণে অগ্রগতি নেই জানতে পেরেছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি একটু ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহে আছি। এ জন্য কারণটি জানতে পারিনি।’

জাতীয় পার্টিতে সমস্যা শুরু হয় গত ৩১ আগস্ট জাতীয় দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ হঠাৎ করে ২৬ নভেম্বর দলের সম্মেলন ডাকার মধ্য দিয়ে। তিনি দলের গঠনতন্ত্র মতে এমনটা করতে পারেন না বলে জানান দলটির নেতারা। এর পরদিন জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল বৈঠক করে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরানোর জন্য স্পিকার বরাবর চিঠি দেন।

এরই মধ্যে রওশনের অপসারণের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তোলেন চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। ১৪ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রাঙ্গাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংবাদ সম্মেলন করে রাঙ্গা বলেন, ‘দেখলাম, চুন্নু সাহেব (জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক) তাড়াহুড়ো করে একটা রেজল্যুশন লিখে নিয়ে আসলেন। উনি আমাকে বললেন, এটা সই করে আপনি দিয়ে আসেন স্পিকারের কাছে। আমি বললাম, আমি তো এই রেজল্যুশনের সঙ্গে একমত না। উনি (রওশন) অসুস্থ মানুষ, আর কদিন বাঁচবেন, উনি আসুক।’

রাঙ্গা নিজেই সেই চিঠি স্পিকারের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

বিরোধীদলীয় চীফ হুইপের স্বাক্ষরে রওশন এরশাদের অপসারণের জন্য স্পিকার বরাবর চিঠি দেয়ার পর এখন রাঙ্গা নিজেই যখন বিরোধিতা করছেন, তখন রওশনের অপসারণের চিঠি বৈধ হবে কি না—সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে চুন্নু বলেন, ‘দেখলাম তিনি (রাঙ্গা) আজকে বলছেন, রওশন এরশাদকে বাদ দিয়ে তিনি জিএমকে রাখার পক্ষে। উনিই তো উত্তর দিয়েছেন। বলেছেন, জি এম কাদের থাকুক, আমার আপত্তি নেই।’

এ বিষয়ে রাঙ্গার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে তো সেদিন বৈঠকের এজেন্ডা জানানো হয়নি। বলল, আসেন একটা জরুরি মিটিং আছে। পরে সই নিয়ে আপনি বলতেছেন যে, এই এই রেজুলেশন করা হইলো। এটা হইল?’

রাঙ্গা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি তো স্পিকারকে জানিয়েছি যে, এটা নিয়মমতো হয়নি। সবকিছুর একটা নিয়ম আছে। নিময় বহির্ভূতভাবে করলে তো হবে না।’

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর আগে থেকেই জাতীয় পার্টিতে দুটি বলয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে একাংশের নেতৃত্ব দিতে থাকেন রওশন এরশাদ, তবে এরশাদ তার ভাই জি এম কাদেরকে দলের নেতৃত্ব দিয়ে যান। এরপর জি এম কাদের রওশনকে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক করেন। পাশাপাশি রওশন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা হন।

জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। ফাইল ছবি

সে সময় জি এম কাদের ও রওশনের মধ্যে এক ধরনের মীমাংসা হয় এবং সে অনুয়ায়ীই দল চলছিল, কিন্তু সম্প্রতি রওশন অসুস্থ হয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার পর দলের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট হন।

জি এম কাদের এবং তার অনুসারীরা খোঁজ না নেয়ায় গত ২ জুলাই দলের একটি মতবিনিময় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন রওশন। এর পরই গত ৩১ আগস্ট চিঠি দিয়ে কাউন্সিলের ডাক দেন তিনি।

রওশনের অপসারণে বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী, তা জানতে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিভাগের আরো খবর