বগুড়ায় সদরের ইউএনও সমর কুমার পালের বিরুদ্ধে আলমগীর হোসেন নামে তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে। মারধরের পর তাকে উপজেলা পরিষদের ক্যাম্পাসে ফেলে রাখা হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে সদর উপজেলা পরিষদে এ ঘটনা ঘটে। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা।
স্বজনদের দাবি, সালিস বিচারের নামে ইউএনও ও তার ব্যক্তিগত প্রহরীরা আলমগীরকে বেধড়ক পিটিয়ে উপজেলা পরিষদের ক্যাম্পাসে ফেলে রাখেন।
আলমগীর হোসেন সদর উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের নৈশপ্রহরী। তিনি সিরাজগঞ্জ সদরের মেহের আলীর ছেলে। বর্তমানে চাকরির সুবাদে উপজেলা পরিষদের কর্মচারীদের কোয়ার্টারে থাকেন।
এদিকে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে এক কর্মচারী অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকার একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
শজিমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আলমগীর বলেন, ‘আমার বউ গ্রামের বাড়িতে না থেকে আমার সঙ্গে থাকতে চায়। এ নিয়ে ১৫ দিন আগেও উপজেলা প্রকৌশলী স্যারের কাছে আমার নামে কমপ্লেইন দিয়েছে। এটা নিয়ে স্যার আমাকে তিনবার শো-কজ করেছেন। আমি জবাব দিছি। আজ ইউএনও স্যারের কাছে বউ গিয়ে আবার কমপ্লেইন দেয়।
‘এই কমপ্লেইনে ইউএনও স্যার আমাকে তার অফিসে ডাকেন। আমি গেলে আনসার সদস্যরা আমাকে ধরে তার (ইউএনও) কাছে নিয়ে আসে। মোটা মোটা লাঠিও আনে তারা।’
আলমগীর বলেন, ‘ইউএনও স্যার এগিয়ে এসে আমাকে লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করেন। ওই সময় তার দেহরক্ষী দুই আনসার সদস্য আমাকে ধরে রাখে।
‘আমি অনেক কাকুতি-মিনতি করেছি। কিন্তু স্যার আমাকে মারতেই থাকেন। একবার অচেতনও হয়ে পড়ি। তারপরও মারছেন আমাকে।’
আহত আলমগীরকে হাসপাতালে নেন তার মেয়ে জামাতা মাসুদ রানা। তিনি ঠিকাদারির কাজ করেন এবং বগুড়ার শাজাহানপুরের দুবলাগাড়ীতে বসবাস করেন।
মাসুদ রানা বলেন, ‘আমার শাশুড়ি শহীদা বেগমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সন্ধ্যায় ইউএনও সাহেব আমার শ্বশুর আলমগীর হোসেনকে ডাকেন। সেখানে গেলে তার কথা বিস্তারিত না শুনেই বেধড়ক মারধর করেন ইউএনও।’
মাসুদ রানা অভিযোগ করে বলেন, ‘সালিসের বিষয়ে আগেই জানিয়েছিলেন শ্বশুর। কিন্তু আমরা আসার আগেই মারধর করেন ইউএনও সমর কুমার পাল। সহ্য করতে না পেরে আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে তাড়াতাড়ি এসে বাঁচাতে বলেন শ্বশুর।’
আলমগীরের মেয়ে জামাই দাবি করেন, সন্ধ্যার পর উপজেলায় গেলে পরিষদের সামনে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন তার শ্বশুরকে। তখন প্রায় অচেতন ছিলেন আলমগীর।
মাসুদ রানা বলেন, ‘ওই সময় আমি ইউএনও সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে যাই। তিনি তখন ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্টে বসে ছিলেন। কিন্তু তার দেহরক্ষী আনসার সদস্যরা আমাকে দেখা করতে দেননি। পরে আমরা শ্বশুরকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।’
তবে মারধরের অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন সদর ইউএনও সমর কুমার পাল।
তিনি জানান, আলমগীর সদর উপজেলা প্রকৌশল অফিসের নৈশপ্রহরী পদে চাকরি করেন। বেশ কিছুদিন ধরে তার স্ত্রীর সঙ্গে ঝামেলা চলছে। আলমগীর তার বউকে উপজেলা ক্যাম্পাসে এনেছেন। রাতযাপন করেছেন। কিন্তু বউকে এখানে রেখে তিনি বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিষয়টি তিনি বুধবার জানতে পারেন।
ইউএনও বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) রাত ১২টার দিকে আলমগীরের স্ত্রীকে উপজেলার সিঁড়ির কাছে একটি বেঞ্চে বসে থাকতে দেখি। পরে খোঁজখবর করে জানতে পারি তার মেয়ের বাড়ি মাঝিড়াতে। এ কথা শুনে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তাকে সেখানে পাঠিয়ে দিই।
‘ওই ঘটনার পর আজ বিকেলে দেখি আলমগীর কোথা থেকে এসেছে। আমি তাকে ডেকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছি। আর তাকে বলেছি- তুমি এই সমস্যার সমাধান না করে এখানে আসবা না। এছাড়া উপজেলা প্রকৌশলীকেও বলে দিয়েছি- ভাই, এই ছেলেকে আপনি বদলি করেন।’
সমর কুমার পাল আরও বলেন, ‘এরপর দেখি সিমপ্যাথি নেয়ার জন্য আলমগীর আমগাছের নিচে শুয়ে পড়ে। সবাইকে বলছে তাকে মারধর করা হয়েছে। অনেকেই তার এ কাজে ইন্ধন দিচ্ছে। কিন্তু আমার দিক থেকে কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি।’
আলমগীরের স্ত্রী কোনো অভিযোগ করেছেন কিনা- এমন প্রশ্নে ইউএনও বলেন, ‘তাকে তো আলমগীর ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল। আমি পরিষদের নিরাপত্তার কারণে ও সুনাম রক্ষার স্বার্থে তাকে মেয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।’