গাজীপুরের টঙ্গীতে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ তদন্তের জন্য মৃতের মরদেহ বাড়ি থেকে নিতে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ।
টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে বিকেলে হোসেন মার্কেট এলাকার ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়ে ওই মৃত লাভলী আক্তারের স্বজনরা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করতে থাকে। তবে পুলিশকে না জানিয়েই তারা মরদেহ বাড়ি নিয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে তদন্তের জন্য মরদেহ আনতে গেলে বাধা দেয় এলাকাবাসী। তখনই সংঘর্ষ হয়।
টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম এসব নিশ্চিত করেছেন।
মৃত নারীর নাম লাভলী আক্তার। টঙ্গীর এরশাদনগর ৩ নম্বর ব্লকে তার বাবার বাড়ি। স্বামী মিজানুর রহমান টিটুর সঙ্গে তিনি থাকতেন একই এলাকার ৭ নম্বর ব্লকে। লাভলী গর্ভবতী ছিলেন। সন্তান প্রসবের পরই তিনি মারা যান।
লাভলীর খালাতো বোন নাজমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘লাভলী টঙ্গী সরকারি কলেজে স্নাতক শেষ বর্ষে পড়তেন। গেল মঙ্গলবার তিনি স্নাতক পরীক্ষায় অংশ নেন। বুধবার দুপুরে প্রসব-ব্যথা নিয়ে ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন অস্ত্রোপচারে (সিজার) তার মেয়েশিশু জন্ম নেয়।
‘হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক সালমা নাহার অচেতন না করেই লাভলীর সিজার করিয়ে সন্তান প্রসব করান। সিজারের পর পরই লাভলীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে সন্ধ্যায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার সকালে ফের লাভলীকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে। এখানেই বিকেলে আইসিইউতে লাভলী মারা যান।’
লাভলীর স্বামী মিজানুর রহমান টিটু বলেন, ‘ল্যাবএইড হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তাররা বলেন কোনো সিজারের রোগী এভাবে লাফানোর কথা না। যে চিকিৎসক সিজার করেছে সে-ই বলতে পারবে কীভাবে সিজার করেছে রোগীকে।’
ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান হাসমত আলী ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ নাকচ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সালমা নাহার খুব ভালো মানের একজন চিকিৎসক। এ পর্যন্ত তিনি অনেক রোগীর সিজার করছেন, কিন্তু এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। সিজারের পর রোগীর খিঁচুনি শুরু হওয়ায় অবস্থার অবনতি হয়েছে।’
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে স্বজন ও এলাকাবাসী। তারা পরে মরদেহ নিয়ে বাড়ি চলে যায়।
ওসি শাহ আলম বলেন, ‘ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে- এমন খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে আমিও হাসপাতালে যাই। যেহেতু চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ উঠেছে তাই আমরা লাশ ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নিই।
‘কিন্তু মৃতের স্বজনরা ও উচ্ছৃঙ্খল এলাকাবাসী পুলিশকে না জানিয়ে হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিয়ে যায়। এরশাদনগর এলাকা থেকে স্বজনদের বুঝিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ আনতে গেলে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়।
‘একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা চালায়। পরে পুলিশ ৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’