বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পঞ্চগড় পাসপোর্ট অফিসে ঘুষ দিলে ফাইল নড়ে

  •    
  • ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২০:১৫

পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে কথিত একটি অভিযোগ বহুকাল থেকে। আমরা মানুষকে ঘুরাই এবং ঘুষ নিই। এটা আপেক্ষিক একটা অভিযোগ।’

পঞ্চগড় আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যলয়ে ঘুষ ছাড়া সহজে পাসপোর্ট মিলে না বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। ভুক্তভোগী অনেকেই বলছেন, পাসপোর্ট প্রতি ১ হাজার টাকা ঘুষ না দিলে ফাইল জমা নেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এমনকি ঘুষ না পেলে বিভিন্ন অজুহাতে পাসপোর্ট না দিয়ে মানুষকে দিনের পর দিন অপেক্ষায় রাখেন বলেও অভিযোগ আছে। এতে যেমন মানুষের হয়রানি বেড়েছে, তেমনি পাসপোর্ট না করতে পারায় অনেকেই প্রবাসে যেতে পারছেন না বলে জানান স্থানীয়রা।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, শর্ত পূরণ করে প্রথমে অনলাইনে ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যুক্ত করে অফিসে জমা দিতে হয়। জমা দেয়ার পর তাদের ছবি তোলা হয়। এরপর পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়ার একটি তারিখ দেয়া হয়।

কিন্তু পাসপোর্ট গ্রহিতাদের অভিযোগ, নানা জটিলতা সৃষ্টি করে ঘুষ দাবি করা হয় দালালের মাধ্যমে।

পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পঞ্চগড়ের অধিকাংশ পাসপোর্ট প্রত্যাশী শহরের পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন গড়ে ওঠা বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে অনলাইনে আবেদন পূরণ করেন। তবে অফিসে গেলে ফরমে অনেক ভুল ধরে সেটি শুধরে আনতে বলা হয়। তার জন্য একটা তারিখ দেন কমকর্তারা। এভাবে শুধু ফরম জমা দেয়ার জন্যই ৩ থেকে ৪ দিন ঘুরতে হয়।

বিপরীতে কম্পিউটারের দোকানগুলোতে অনলাইন ফরম পূরণ করে ১ হাজার টাকা ঘুষ দিলে তারা সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে অফিসে জমা দেয়ার ব্যবস্থা করেন।

এসব কম্পিউটারের দোকানদারদের দাবি, তাদের নেয়া টাকার একটা অংশ পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেয়া হয়।

তেঁতুলিয়া উপজেলার বৈরাগীগজ গ্রামের লুৎফর রহমান বলেন, ‘বাবাকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাব। এ জন্য পাসপোর্ট নবায়ন করতে এসে কয়েকদিন ঘুরতে হয়। পরে মামুনি কম্পিউটার দোকানে গেলে মিলন হোসেন জানান, অফিসে ১ হাজার টাকা দিলে আজকেই জমা নেবে। তাকে ১ হাজার টাকা দিলে ওই দিনই পাসপোর্ট জমা নেয়।’

আমজুয়ানী এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া জালাল হোসেন জানান, তার সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও ঘুরতে হয়েছে তিন দিন। আমার কাছে অপরিচিত একজন দালাল ১ হাজার টাকা চেয়েছিল। যাওয়া আসা করতেই তার ২ হাজার টাকা খরচ। পরে একজন প্রভাবশালী ব্যাক্তির হস্তক্ষেপে ফাইল জমা দিয়েছেন।

মামুনি কম্পিউটারের মালিক মিলন হোসেন বলেন, ‘পাসপোর্ট করতে এসে অনেকে হয়রানির শিকার হয়। তখন তারা আমাদের অনুরোধ করে। আমরা তখন প্রতি পাসপোর্টে ১ হাজার টাকা নিয়ে পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহকারী শাহরিয়ার আহমেদকে দেই। তিনি অফিসের অন্য কর্মকর্তাদের দেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমাদের যেসব কম্পিউটারের দোকান আছে, সবাই এভাবেই টাকা নিয়ে দেয়। ১ হাজার টাকা তাদের হাতে দিলেই ফাইল জমা নেন।’

শাহরিয়ার আহমেদ ঘুষের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের নাম ভাঙিয়ে অনেকে টাকা নিতে পারেন। এর দায় আমার নয়। অফিসে কেউ টাকা নেয় না।’

তবে নিজেরা পাসপোর্টপ্রত্যাশীদের আচরণে হয়রানি বেশি হচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।

পঞ্চগড় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে কথিত একটি অভিযোগ বহুকাল থেকে। আমরা মানুষকে ঘুরাই এবং ঘুষ নিই। এটা আপেক্ষিক একটা অভিযোগ।’

তার দাবি, ‘পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালা খুব কঠিন, যা সুনিপুনভাবে সম্পাদন করতে হয়, সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ খুবই উদাসীন। আমাদের অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘুষ নেয়, এই অভিযোগ সত্য নয়। তারপরও বিষয়টি সত্য হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

পাসপোর্ট করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের হয়রানির বিষয়টি গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের মাসিক উন্নয়ন সভায় তুলে ধরেন ভুক্তভোগীরা। এসময় জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তাকে হয়রানি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

এ বিভাগের আরো খবর