চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি কারখানার জেনারেটরের জ্বালানির ট্যাংক ফেটে ৩ হাজার লিটার ডিজেল ফসলি জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই জমির একাংশে ধানের বীজতলা ও ফসল থাকায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
বুধবার ভোরে উপজেলার টেরিয়াল বাজার এলাকায় সিপি বাংলাদেশ লিমিটেড নামের ওই কারখানার (হ্যাচারি) ৩ হাজার লিটার ডিজেল ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি ট্যাংক ফেটে যায়।
কারখানার ব্যবস্থাপক গাজী বিল্লাল হোসেন এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। কেউ ক্ষতিপূরণ চাইলে তা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আশরাফ উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই কারখানায় জেনারেটরের জ্বালানির একটি ট্যাংক ফেটে কৃষিজমিতে ডিজেল ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা ওই ডিজেলের নমুনা সংগ্রহ করেছি। ছড়িয়ে পড়া ডিজেলের কিছু কিছু কারখানা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা সংগ্রহ করে নিয়েছেন। তবু আমরা তাদের শুনানির জন্য ডেকেছি।’
ট্যাংক ফেটে ওই ডিজেল অন্তত এক একর জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা বারৈয়ারঢালা ইউপি চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিনের। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে সকালে অফিসে যাওয়ার সময় আমি দেখেছিলাম যে বেশ কিছু মানুষ ওই জমি থেকে তেল সংগ্রহ করছে। দেখে মনে হয়েছে তেল ছড়িয়ে পড়া জমির পরিমাণ অন্তত এক একর হবে।’
তেল ছড়িয়ে পড়া জমির একাংশ বর্গা চাষ করেন স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ওই জমিতে আমরা বীজতলা তৈরি করেছি। ধানের এ চারা নষ্ট হয়ে গেছে। চারাগুলো রোপণের জন্য পাশে ১০ শতকের মতো জমি তৈরি করেছি, ওই জমিতেও তেল গেছে। এখন আর চারা রোপণের উপযোগী নেই জমি। এ ছাড়া শিমের ক্ষেত ছিল, সেটাও নষ্ট হয়ে গেছে।’
যাদের জমিতে তেল ছড়িয়ে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সবাই ক্ষতিপূরণ চান জানিয়ে বলেন, ‘আমিসহ আরও ৪-৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা হলেন আবু জাফর, নিজাম উদ্দিন, আরিফ হোসেন ও কাশেম উদ্দিন। আমরা সবাই বসেছি। যেহেতু সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, আমরা ক্ষতিপূরণ দাবির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তবে কৃষিজমিতে ডিজেল ছড়িয়ে পড়লেও এর কারণে খুব বেশি ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিব উল্লাহ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কৃষি জমিতে ডিজেল গেলে দুটি ঘটনা ঘটতে পারে। একটি হলো এর ফলে মাটিতে থাকা পোকামাকড় চলে যাবে। দ্বিতীয়টি হলো গাছের ক্ষতি হতে পারে; তবে সেটা পর্যবেক্ষণের পর বলতে হবে। কারণ জমির পরিমাণ এক একর হলে প্রভাব খুব বেশি হওয়ার কথা না। যদি এমন হতো যে ১ শতাংশ জমিতে তেলগুলো পড়েছে, তাহলে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি ছিল।’
‘ওই জমিতে যদি পানি কমও থাকে, পরে পানি দিলে ডিজেল ভেসে উঠবে। সেগুলো সংগ্রহ করে ফের ব্যবহার করা যাবে।’
কারখানার ব্যবস্থাপক গাজী বিল্লাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ট্যাংক ফাটেনি, পাইপলাইনের লিকেজের কারণেই এটা হয়েছে। আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর আমরা ডিজেলগুলো সংগ্রহ করে নিয়েছি। আমরা ওই জমিতে চাষ করা কৃষকদের সঙ্গে আলোচনাও করেছি। কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা অফিশিয়ালি বিষয়টি ডিল করব। ক্ষতিগ্রস্ত কেউ ক্ষতিপূরণ চাইলে দেয়া হবে।’