সরকার পতনে সব রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ঘোষণা দিয়েছে ছোট ছোট ৭টি দল নিয়ে গড়া জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। এজন্য কমিশন গঠন করা হবে বলেও জানিয়েছেন জোটের নেতারা।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এমন তথ্য জানানো হয়।
সভায় জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘সরকার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা বিরোধী দলের কর্মসূচিতে হামলা করছে। আমরা সমাজের সবার সঙ্গে মতবিনিময় করব। বলা হচ্ছে নির্দেশ ছাড়া হামলা করা যাবে না। তাহলে বলা যায়, আগের হামলাগুলো নির্দেশ দিয়ে হয়েছে।’
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘পালানোর পথ পাবেন না। যাদের আত্মীয়-স্বজনকে মেরেছেন তারা ধরবে। আমরা বলে দেব ধরার জন্য।
‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক অবস্থা ভয়াবহ। সবাইকে সেখানে যেতে হবে। এই রাষ্ট্রে আর জনগণের রাষ্ট্র নেইয়। এই রাষ্ট্রের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি।’
রব বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে কথা বলে কমিশন গঠন করব। বিচারকদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলব। আমরা কমিশন গঠন করে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দেব না।
জেএসডি সভাপতি বলেন, ‘ডলার সংকটের সময়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ইভিএম কেনা হচ্ছে। এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে না। জনগণ এই নির্বাচন মেনে নেবে না। নির্বাচন না হলে এই ইভিএম দিয়ে কী হবে। এই ডলারের টাকা কে দেবে?
সরকারের সমালোচনা করে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এরা এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় যেখানে কোনো জবাবদিহিতা থাকবে না। তারা যা খুশি তাই করতে পারবে৷ যদি থাকতো রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনেক আগেই বাতিল হয়ে যেত। দেশে গণতন্ত্র নেই বলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হচ্ছে। গণতান্ত্রিক অধিকার না থাকায় কেউ তাদের দাবির কথা বলতে পারছে না।’
জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে; কিন্তু উন্নতি হচ্ছে না। চারদিকে অবনতির ধ্বংসস্তূপ দেখছি। অবনতির জন্য আমরা মহাসংকটে আছি। সমস্যা সমাধানে আমাদের রাজনৈতিক ঐক্য প্রয়োজন। সংকট নিরসনে সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট দফা নির্ধারণ করে কাজ করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করতে হবে।
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনির্বাচিত হলেও এর প্রতি মানুষের আত্মবিশ্বাস আছে। যারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবে তারা এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করবে। নির্বাচনই ক্ষমতা বদলের মাধ্যম। তবে সমস্যা সমাধানে শুধু একটি সুষ্ঠু নির্বাচনই যথেষ্ট নয়৷ বস্তুত নির্বাচন হলো পূর্বশর্ত। নির্বাচিত হওয়ার পর ক্ষমতাপ্রাপ্ত দল কী করে সেটা দেখার বিষয়।
সংকট নিরসনে তিনি ২১ দফা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন। এসব দফাতে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন, মনমানসিকতার পরিবর্তন। এটি সম্ভব হবে যদি ঐক্য হয়। নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সরকারের সংস্কার করতে হবে, স্বাধীন বিচার বিভাগ, সাম্প্রদায়িকতার অবসান, তরুণদের জন্য বিনিয়োগ, নারীর ক্ষমতায়ন, পার্বত্য শান্তিচুক্তির সঠিক বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন সংস্কার করতে হবে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘দেশের ১৫ আনা মানুষ কালই সরকারের পদত্যাগ চায়। সংবিধান পরিবর্তন না করে সরকার পরিবর্তন হলে যিনি সরকারে আসবেন তিনিও শেখ হাসিনার মতো কর্তৃত্ববাদী হবেন। তাই নির্বাচনের আগে সংবিধানের সংস্কার করতে হবে।
‘দেশের সবকিছু নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্বে চলছে। ব্যতিক্রম ছাড়া উচ্চ আদালতের বেঞ্চগুলো সরকারের নোটের দিকে তাকিয়ে থাকে কী রায় দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছে। কোনো মানুষই বিশ্বাস করে না যে এই সরকারের অধীনে সঠিকভাবে ভোট দিতে পারে। যেই সরকার মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে হামলা করে তাদের কাছে আর কী চাওয়ার আছে।’
অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে অন্তর্ভুক্তিকালীন সরকারের বিকল্প নেই। বলা হয় যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়টি সংবিধানে নেই। আমি বলতে চাই, তাহলে সংবিধানে কি গুম করার কথা বলা আছে? বাংলাদেশ ব্যাংক লুট করার কথা বলা আছে? সংবিধানের কথা যদি বলেন, তাহলে সেখানে পরিবর্তন করা যায়।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, হাসনাত কাইয়ুমসহ গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যান্য নেতা।