রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রং মিশিয়ে বাসি মাংস বিক্রির দায়ে ‘মা জননী’ নামের দোকানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় ৯ প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বুধবার বেলা ১১টার দিকে এ জরিমানা করা হয়।
দুই ঘণ্টার অভিযানে নেতৃত্ব দেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের যুগ্ম সচিব শাহনাজ দিলরুবা খান।
অভিযানের একপর্যায়ে সংস্থাটির কর্মকর্তারা ‘মা জননী’ নামের মাংসের দোকানের পেছনে আইস বাক্সে পলিথিনে রাখা তরল লাল রং দেখতে পান। ওই সময় দোকানদার মোহাম্মদ খোরশেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
খোরশেদ বলেন, ‘এটা রং না স্যার, এটা পশুর রক্ত। মাংস অনেকক্ষণ বিক্রি না হলে ঝুলে থাকতে থাকতে যখন কালচে রং হয়ে যায়, তখন এই রক্ত মাংসে লাগিয়ে দিলে সেটা তাজা হয়ে যায়। তাই এই রক্ত আমরা বরফ দিয়ে রেখে দিই।’
পরে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের যুগ্ম সচিব বলেন, ‘এটা রক্ত নয়, এটা রং। আমাদের অভিযানে ডাক্তারও আছেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখেছেন, এটা রং। মাংসে রং লাগিয়ে বিক্রি করা একটা বড় অপরাধ। তাই আমরা এই দোকানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছি, তবে এখনই জরিমানার টাকা দিতে না পারায় আমরা দোকানদার মোহাম্মদ খোরশেদকে আমাদের হেফাজতে নিয়ে যাচ্ছি। সন্ধ্যার আগে তিনি জরিমানার টাকা দিয়ে দিলে আমরা তাকে ছেড়ে দেব।’
এরপর বেশ কয়েকটি মাছ-মাংসের দোকানে অভিযান চালায় দলটি। সেগুলোতে কিছু অনিয়ম পেলেও প্রাথমিকভাবে তাদের কোনো জরিমানা না করে সতর্ক করে দেয়া হয়।
ওই সময় হ্যান্ড মাইকে দোকানদারদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘আজ থেকে কেউ যেন পচা-বাসি মাছ-মাংস বিক্রি না করে। আজ শুধু সতর্ক করা হলো, কিন্তু আগামী ৭ দিন পর আবার এই অভিযান চলবে। তখন আর কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তখন জারিমানা, কারাদণ্ড উভয়ই দেয়া হবে।’
পরে ‘বাবুল দধি ভান্ডার’ নামের একটি দইয়ের দোকানে পচা-বাসি পণ্য পাওয়ায় দোকানদারকে সতর্ক করা হয়। দইগুলো নর্দমায় ফেলে দেয়া হয়।
ওই সময় মাছ ও মাংসের বাজারে অভিযান দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড় লেগে যায়। তাদের একজন সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকঢোল পিটিয়ে এই অভিযান করলে কিছুই হবে না। ২০ থেকে ৩০ জন মিলে অভিযান করে কী পেল?
‘মাত্র একটা দোকানকে জরিমানা করল। অথচ সরকারি এতগুলো সংস্থার এই অভিযান করতে কত খরচ হলো, তা আল্লাহই জানে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেশি বেশি মামলা, জরিমানা না করলে এই বাজারের ব্যবসায়ীরা কোনো দিনও ভালো হবে না। এর আগেও এই কারওয়ান বাজারে অসংখ্যবার অভিযান চলেছে, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তাই আজও হবে না বলে আমি মনে করি।’
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের যুগ্ম সচিব শাহনাজ দিলরুবা বলেন, ‘আজ আমরা একটা দোকানের বড় অপরাধ পেয়েছি। তাই তার বিরুদ্ধে জরিমানা করেছি। আর অন্যান্য দোকানকে সতর্ক করেছি। তা ছাড়া এখানে আমরা দেখেছি, বাজারের মধ্যেই মাংস ব্যবসায়ীরা পশু জবাই করে, যেটা অপরাধ।
‘পশু জবাইয়ের জন্য সিটি করপোরেশনের আলাদা জায়গা আছে, কিন্তু এরা সেখানে যায় না। তাই আমরা আজ তাদের কঠোরভাবে সতর্ক করে যাচ্ছি। তারা না শুধরালে ৭ দিন পর আমরা আবার অভিযান চালাব। তখন অনিয়ম পেলেই আমরা জেল-জরিমানা করব।’
অভিযানে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিট, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।