সাফ ফুটবলে খেলতে জাতীয় দল থেকে যখন ডাক আসলো, তখন এক মুহূর্তও নিঃশ্বাস ফেলার সময় ছিল না সাথী বিশ্বাসের। কারণ এসএসসি পরীক্ষার জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।
এ অবস্থায় মেয়ে পরীক্ষা দেবে, নাকি খেলায় অংশ নেবে- এমন সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েন সাথীর বাবা-মা দুজনই। শেষ পর্যন্ত দেশের জন্য খেলায় অংশগ্রহণকেই বড় মনে হলো তাদের।
মেয়েকে বোঝালেন- ‘পরীক্ষা তুমি পরেও দিতে পারবা, দেশের জন্য খেলাটাই এখন তোমার বড় বিষয়।’
সাফ ফুটবল জয়ের আনন্দে ভাসছে এখন সাথী বিশ্বাসের পরিবার। মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার গোয়ালদহ গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে সেই চিত্র। জয়ের পর রাতে আর ঘুমাতে পারেননি সাথীর বাবা বিদ্যুৎ বিশ্বাস। পেশায় তিনি একজন ছবি তোলার কারিগর। স্থানীয় বাজারে ছোট একটি কম্পিউটারের দোকান আছে তার।
বিদ্যুৎ বিশ্বাস জানান, সাথী বিকেএসপিতে ভর্তি হয় ক্লাস সিক্সে। সেখানেই পড়াশোনা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) অন্তর্ভুক্ত হন তিন বছর আগে। বাফুফে-তে যোগ দেয়ার পরই জাতীয় দলে ডাক পেতে শুরু করেন সাথী।
বিদ্যুৎ বলেন, ‘আমরা চেয়েছি ও ভাল কিছু করুক। ভাল খেলোয়াড় হয়ে সমাজের দৃষ্টান্ত হোক। আজ ওরা জিতে সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে। আমার মেয়ের স্বপ্নও সফল হয়েছে।’
সাথীর মা সুদেবী বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওদের জয়ের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে বারবার ডেকেছি। তার এবার এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। একটানা এতবছর পড়ে পরীক্ষা দেয়াটা তো সৌভাগ্যের। কিন্তু যখন ফোন করে ওর স্যারেরা একদিন বলল- সাফ গেমসে তাকে দলে প্রয়োজন!
‘তখন মেয়ে কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। ওর বাবার সঙ্গে কথা বললাম। দুজনই সিদ্ধান্ত নিলাম- মেয়ে খেলাতেই অংশ নিক। দেশের জন্য তাকে দলে নিয়ে যদি ভাল কিছু হয়, তবে তাই হোক।’
সুদেবী জানান, শিরোপা জয়ের পর পাড়া প্রতিবেশীরা ছুটে এসেছেন তাদের বাড়িতে। যারা একসময় মেয়েকে ফুটবলে নাম লেখানোর জন্য গালমন্দ করেছেন, তারাও এখন বলছেন, ওর জন্য গ্রামের মর্যাদা বেড়ে গেছে।’