বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে উধাও কারবারি

  •    
  • ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২০:২০

জাজিরা থানার ওসি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতারণার শিকার এক নারী থানায় অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।’

স্বর্ণ বন্ধক রেখে স্বল্প সুদে টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ। তাদের কাছ থেকে বন্ধক নেয়া প্রায় দেড় শ ভরি স্বর্ণ নিয়ে পালিয়েছেন উপজেলার নয়াবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মিঠুন মণ্ডল।

কিছুদিন ধরে মিঠুনের স্বর্ণের দোকানে তালা ঝুলতে দেখে প্রতারণার বিষয়টি টের পান ভুক্তভোগীরা। অনেক খোঁজখুঁজি করেও মিঠুনের হদিশ না পেয়ে জাজিরা থানায় অভিযোগ করেছেন তারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্রামের নারীদের টার্গেট করে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে মিঠুন হাতিয়ে নিয়েছেন বন্ধক রাখা প্রায় দেড় কোটি টাকার স্বর্ণ।

পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা জানান, প্রায় ৮ বছর ধরে জাজিরার নয়াবাজারে স্বর্ণালঙ্কারের ব্যবসা করে আসছিলেন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানার মধ্যপাড়ার রঞ্জিত মণ্ডলের ছেলে মিঠুন। বিভিন্ন সময়ে তিনি বিপদগ্রস্ত মানুষকে মাত্র দেড় থেকে দুই শতাংশ সুদে টাকা দিয়ে স্বর্ণালঙ্কার বন্ধক রাখতেন।

এভাবে গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে বিপদে পড়ে মিঠুনের কাছে প্রায় দেড় শ ভড়ি স্বর্ণ বন্ধক রেখে টাকা নিয়েছেন বড়কান্দি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক নারী পুরুষ। কিন্তু ২ মাস আগে নয়াবাজারে মিঠুনের স্বর্ণের দোকানটি হঠাৎ তালাবদ্ধ দেখতে পান তারা। এত দিন পরও দোকান না খোলায় এবং মিঠুনের হদিশ না পেয়ে তারা প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

এ অবস্থায় বাজার কমিটির পরামর্শে গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাজিরা থানায় লিখিত অভিযোগ দেন রানু বেগম নামে এক ভুক্তভোগী। ওই দিনই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টির তদন্ত শুরু করে।

সোমবার বিকেলে সরেজমিনে নয়াবাজারে গিয়ে দেখা যায়, তালাবদ্ধ থাকা মিঠুনের স্বর্ণের দোকানের সামনে ২০ থেকে ২৫ জন নারী-পুরুষের হট্টগোল। তাদের মধ্যে ৪৫ বছর বয়সী বড়কান্দি ইউনিয়নের ভানুমুন্সি কান্দি গ্রামের রাণু বেগম বলেন, ‘৮ মাস আগে ছেলেকে সৌদি আরব পাঠানোর সময় জরুরি টাকার প্রয়োজন হয়। পরে মিঠুনের কাছে ১২ ভরি স্বর্ণের গয়না বন্ধক রেখে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিই। ২ মাস আগে বোনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা মিঠুনকে পরিশোধও করি। পরদিন বাকি টাকা দিয়ে আমার স্বর্ণ ফিরিয়ে নেয়ার কথা ছিল। কথা মতো বাকি টাকা নিয়ে এসে দেখি দোকান বন্ধ।’

রাণু আরও বলেন, ‘স্বর্ণ বন্ধক রেখে স্বামীর চাপে আছি। আর গয়না ছাড়িয়ে কিছু গয়না বোনকে দেয়ার কথা বলে তার থেকে টাকা এনেও বিপদে পড়েছি। পারিবারিক চাপে এখন আমি প্রায় বাড়িছাড়া। প্রতিদিন মিঠুনের দোকনের সামনে এসে বসে থাকি।’

নয়াবাজার এলাকার ভ্যানচালক মো. আজিত জানান, ছেলেকে দেশের বাইরে পাঠানোর জন্য দেড় ভরি স্বর্ণ বন্ধক রেখে মিঠুনের কাছ থেকে তিনি ৪০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন।

আজিত বলেন, ‘বউয়ের গয়না রাইখা পোলারে বিদেশ পাঠাইছি। পোলা এখনও ঠিকমতো কামাই রোজগার করতে পারে না। আমি ভ্যান চালাইয়া খাই। আমার সারা জীবনের কামাই দিয়াও আর বউরে এই গয়না বানিয়ে দিতে পারবো না। আমি তার বিচার চাই।’

বাজারের ব্যবসায়ী রত্না জুয়েলার্সের মালিক রমেন পোদ্দার জানান, মানুষ বিপদে পড়ে প্রায়ই স্বর্ণালঙ্কারের ব্যবসায়ীদের কাছে স্বর্ণ বন্ধক রেখে টাকা নেন। এক্ষেত্রে সবাই তিন থেকে সাড়ে তিন শতাশং সুদ হারে টাকা দিয়ে স্বর্ণালঙ্কার বন্ধক রাখলেও মিঠুন দেড় থেকে দুই শতাশং সুদে টাকা দিতেন। কম সুদ হওয়ায় তাই অনেকেই মিঠুনের কাছে স্বর্ণ বন্ধক রেখে টাকা নিয়েছেন।

নয়াবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দলিল উদ্দিন বলেন, ‘মিঠুন ৮ বছর ধরে এই বাজারে ব্যবসা করে। আগে লেনদেন ভালো করে সবার আস্থা অর্জন করায় মানুষ তাকে বিশ্বাস করে স্বর্ণ বন্ধক রেখেছে। সম্প্রতি সে গ্রাহকের বন্ধক রাখা এক কোটি টাকারও বেশি মূল্যের স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমি কমিটির পক্ষ থেকে মুন্সিগঞ্জে মিঠুনের বাড়িতে লোক পাঠিয়েছি। কিন্তু ওখানে তাকে পাওয়া যায়নি।’

জাজিরা থানার ওসি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতারণার শিকার এক নারী থানায় অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর