বাংলাদেশকে সাফের শিরোপা এনে দিয়েছেন যে মেয়েরা, তাদের মধ্যে রাঙ্গামাটির দুই তারকার পরিবারকে পুরস্কৃত করেছে জেলা প্রশাসন। আরও নানা কিছু দেয়ার অঙ্গীকারও করেছে। এমন কিছু অঙ্গীকার করা হয়েছে, যার সুবিধা কেবল এই দুই ফুটবলার নন, পাবে এলাকাবাসীও।
বাংলাদেশের গোলরক্ষক রূপনা চাকমার বাড়ি যে এলাকায়, সেখানে একটি সেতু করে দেবে জেলা প্রশাসন। অন্যদিকে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার রিতুপর্ণা চাকমার বাড়ি যে এলাকায়, সেখানে সড়ক তৈরি করে দেয়ার ঘোষণা এসেছে।
রূপনা চামকা ও রিতুপর্ণা চাকমার পরিবারের হাতে এরই মধ্যে দেড় লাখ করে তিন লাখ টাকা তুলে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। রূপনাকে বাড়ি করে দেয়ার ঘোষণাও এসেছে।
সোমবার নেপালে বাংলাদেশের মেয়েদের যে দলটি স্বাগতিকদের ধরাশালী করে সাফের শিরোপা জিতে এনেছে, সেই দলের দুই জন সদস্য রাঙ্গামাটির।
নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভূঁইয়ো আদাম এলাকা থেকে উঠে এসেছেন দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ গোলরক্ষক পুরস্কার পাওয়া রূপনা চাকমা।
নারী সাফ ফুটবলের সেরা গোলরক্ষক রূপনা চাকমার বাড়ি। ছবি: নিউজবাংলা
অন্যদিকে রিতুপর্ণা চাকমার বাড়ি কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়ি গ্রামে। দুই জনেরই ফুটবলে হাতেখড়ি হয়েছে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে।
এই স্কুল থেকে উঠে এসেছেন আরও তিন ফুটবলার। এরা হলেন আনাই মগিনি, আনুচিং মগিনি, মনিকা চাকমা। তাদের বাড়ি খাগড়াছড়িতে। তারা সবাই ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন।
অন্য দুজনের মধ্যে রিতুপর্ণা চাকমা ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে বিকেএসপিতে চলে যান।
বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের পর রাঙ্গামাটিবাসী রূপনা ও রিতুপর্ণাকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেলে দুই জনের বাড়িতেই যান জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান। তিনি এই ফুটবলারদের স্বজনদের কাছে দেড় লাখ টাকা করে মোট তিন লাখ টাকা পুরস্কার তুলে দেন।
এ সময় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলুল রহমানসহ জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য দপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
রিতুপর্ণা চাকমা ও রূপনা চাকমা । ছবি: সংগৃহীত
জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘রিতু ও রূপনা আমাদের রাঙ্গামাটির গর্ব। তাদের এ অর্জন পুরো বাংলাদেশের মানুষ গর্বিত। তাদের এ কৃতিত্বের জন্য তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, এই আর্থিক পুরস্কারই শেষ হয়, রূপনা চাকমাকে বাড়ি করে দেয়া হবে। তার পরিবারকে আর ভাঙা বাড়িতে থাকতে হবে না।
ভূঁইয়ো আদামের আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে একটি কাঠের সেতু পার হয়ে যেতে হয় রূপনার বাড়িতে। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এলাকাবাসীর সুবিধার জন্য একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।’
দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট রূপনা। তার বাবা নেই। একটি ভাঙা ঘরে থাকে অন্যরা। খেলাধুলার জন্য মেয়েটির ছোটবেলার জীবন কেটেছে মা, ভাই বোনদের ছেড়ে।
অন্যদিকে রিতুপর্ণার বাড়ি যেতে সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। এই কষ্ট লাঘবের ঘোষণা দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সেখানে এমন সড়ক নির্মাণ করা হবে, যেন সেখানে গাড়ি যেতে পারে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’