বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিশু রূপনার মধ্যে রত্ন দেখেন শান্তি মনি ও বীরসেন

  •    
  • ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৯:৪৯

‘রূপনা অসহায় এক মায়ের সন্তান। বাবাকেও জীবনে দেখেনি। সেই রূপনা আজ আমাদের গ্রামের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে। সে এখন দেশের গর্ব এবং আগামী প্রজন্মের পথপ্রদর্শক।’

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভূঁইয়ো আদাম এলাকায় জন্ম নারী সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের গোলরক্ষক রূপনা চাকমার। দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রেষ্ঠ এই গোলরক্ষককে নিয়ে দারুণ খুশি গ্রামের মানুষ।

সোমবার নেপালে স্বাগতিকদেরকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। এই টুর্নামেন্টে এই একটিবারই রূপনাকে ফাঁকি দিতে পেরেছে বল।

রূপনার এই অর্জনের পেছনের গল্পটি সংগ্রামের। জম্মের আগেই মারা যান বাবা গাছা মনি চাকমা। তাকে ছাড়াই নিজেকে গড়ে তুলতে হয়েছে রূপনাকে।

ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি ছিল মনোযোগ। হাজাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থেকে নানিয়ারচরে ফুটবল খেলতে গিয়ে মন কেড়ে নেয় শিক্ষক বীরসেন চাকমার। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তিনিই তাকে নিয়ে যান ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানেই দেন গোল রক্ষকের প্রশিক্ষণ।

এ সেতু পার হয়েই যেতে হয় রূপনা চাকমার বাড়ি। ছবি: নিউজবাংলা

ভূঁইয়ো আদামের আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে একটি কাঠের সেতু পার হয়ে যেতে হয় তার বাড়ি। গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা কুঁড়ে ঘরে আছেন মা আর ভাইরা।

দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট রূপনা। ছোটবেলার জীবন কেটেছে মা, ভাই বোনদের ছেড়ে। মেয়েটি এবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাড়িতে আসছে- আনন্দ উচ্ছ্বাস করবে ভেবে পথ চেয়ে এলাকাবাসী।

বড়ভাই জীবন চাকমা বলেন, ‘রূপনা ছোটবেলা থেকে খেলা পছন্দ করত এবং খেলার জন্যই ছেলেদের সঙ্গে মিশত। বিকেলে কাজের থেকে ফিরে মায়ের থেকে শুনি বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গ্রামের লোকেরা রূপনাকে নিয়ে প্রশংসা করছে। তার এতদূর আসার পেছনে মূল কারিগর হলেন ঘাগড়ার শান্তি মনি চাকমা ও বীরসেন চাকমা।

‘রূপনা ছোটবেলায় হাজাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে যাবতীয় খরচ বহন করে ঘাগড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন। রূপনার এতদূর কখনও আসতে পারত না যদি তার ছাঁয়া হয়ে শান্তি মনি চাকমা ও বীরসেন চাকমা না থাকতেন।’

বীরসেন চাকমা বলেন, ‘২০১২ এবং ২০১৩ সালে রূপনাকে ঘাগড়াতে আনতে চেয়েছিলাম। ২০১৪ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তাকে নিয়ে আসা হয়। তার এ অর্জন পুরো দেশবাসীর।’

প্রথম জীবনে রূপনার প্রশিক্ষণ নেন শান্তি মনি চাকমার কাছে। তিনি বলেন, ‘তাদের এ বিজয় মুখে বুঝিয়ে বলা সম্ভব নয়। তাদের বিজয় মানে আমার বিজয়। কেননা তাদেরকে আমি প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’

তবে তাদের এ অর্জনের পেছনে বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি কোচ সুইলা মং মারমা ও শিক্ষক বীরসেন চাকমার কথাও স্মরণ করলেন শান্তি মনি।

রূপনার মা কালা সোনা চাকমাও স্মরণ করলেন তার মেয়ের শৈশবের দুই শিক্ষকের ভূমিকার কথা। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে সে খেলাধুলা করত। ২০১২ সালের দিকে সে নানিয়ারচরে ফুটবল খেলতে গিয়েছিল। সেখানে তার খেলা পছন্দ হয়ে বীরসেন চাকমা ও শান্তি মনি চাকমা তাকে ঘাগড়াতে নিয়ে যায়। সেখানে তার জীবনের উন্নতির সূচনা।’

বীরেসন ও শান্তি মনি যে স্কুলে রুপনাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, সেই স্কুল থেকে জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছেন আরও চার ফুটবলার। এর মধ্যে আছেন রাঙ্গামাটির কাউখালি উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাঝড়ি গ্রামের রিতুপর্ণা চাকমা, আছেন, খাগড়াছড়িতে থেকে আসা আনাই মগিনি, আনুচিং মগিনি, মনিকা চাকমা।

এদের মধ্য রিতুপর্ণা ঘাগড়ায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে বিকেএসপিতে চলে যান। বাকিরা এখান থেকেই এসএসসি পাস করেন।

নারী সাফ ফুটবলের সেরা গোলরক্ষক রূপনা চাকমার বাড়ি। ছবি: নিউজবাংলা

গর্বের পাশাপাশি আছে আক্ষেপও

ভূঁইয়ো আদাম গ্রামের বাসিন্দা আলো বিকাশ চাকমা বলেন, ‘রূপনা অসহায় এক মায়ের সন্তান। বাবাকেও জীবনে দেখেনি। সেই রূপনা আজ আমাদের গ্রামের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে। সে এখন দেশের গর্ব এবং আগামী প্রজন্মের পথপ্রদর্শক।

‘সে দেশ ও জাতির সম্মান এনে দিয়েছে। সে হিসেবে জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সব মহলের উচিত রূপনা চাকমার পরিবার ও তাকে সহযোগিতা করার।’

রূপনা চাকমার মা কালা সোনা চাকমার কণ্ঠে আক্ষেপও ঝরে পড়ে। তিনি বলেন, ‘গতবারেও অনূর্ধ্ব ১৪ তে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন কেউ দেখতে আসেনি, তার পাশে দাঁড়ায়নি। শুধুমাত্র শান্তি মনি চাকমা ও বীরসেন চাকমাই তার পাশে ছিলেন।’

মেয়ের খেলা দেখেছেন কি না-এই প্রশ্নে মা বলেন, ‘মোবাইলে দেখেছি। আমি খুবই খুশি। বাবাহারা মেয়ে আমার। সে এখন দেশে বিদেশে ঘুরছে। গ্রামবাসীরা তাকে নিয়ে প্রশংসা করছে। আমার মেয়ে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাক সবার কাছ থেকে আশীর্বাদ কামনা করছি।’

ওই এলাকার গ্রাম প্রধান সুদত্ত বিকাশ চাকমা চান সরকার এই তরুণীর পাশে দাঁড়াক। তিনি বলেন, ‘সরকার চাইলে রূপনার জন্য অনেক কিছু করতে পারে।’

ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নারী প্যানেল চেয়ারম্যান বাসন্তী চাকমা বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে তাকে যদি সহায়তা করা হয় তবে অনেক ভালো হয়। কেননা তার বাবা নেই। ছোটবেলা থেকে সে তার বাবকে দেখেনি।’

এ বিভাগের আরো খবর