চার বছর আগে কুড়িগ্রামে মেয়েদের ফুটবলের বিরোধিতা করে মিছিল বের করেছিলেন যারা, তারা বাংলাদেশের নারী ফুটবলের সাফল্য নিয়ে এখন আর কোনো কথা বলতে চাইছেন না। বরং সেই সময়ের ছবি সামনে আনার কারণে রাগ দেখাচ্ছেন তারা।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় মেয়েদের ফুটবল বন্ধের দাবিতে ২০১৮ সালে সেই বিক্ষোভটি করেছিল ইসলামী আন্দোলন। সোমবার নেপালে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়নের ফাইনালে জয়ের পর পর মেয়েদের ফুটবলবিরোধী সেই বিক্ষোভের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে।
ওই বছরের ৮ মার্চ শুরু হয় নাগেশ্বরী উপজেলার কলেজ মাঠে রোমানা স্পোর্টিং ক্লাবের আয়োজনে মেয়েদের ফুটবল টুর্নামেন্ট। এই খেলা বন্ধের দাবিতে ১৪ মার্চ বিক্ষোভ করে প্রশাসনের কাছে স্মাররকলিপি দেয় ইসলামী আন্দোলনের স্থানীয় কমিটি।
মেয়েরা ফুটবল খেলে বাংলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে আনার পর ইসলামী আন্দোলনের নাগেশ্বরী উপজেলা শাখার সভাপতি রফিকুল ইসলামের প্রতিক্রিয়া জানতে চায় নিউজবাংলা। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় পর্যায় নারী ফুটবল খেলা বন্ধের দাবি জানাইনি। আমাদের এই অঞ্চল ধর্মভীরু এলাকায় হওয়ায় আমরা এই আন্দোলন করেছিলাম।’
এই ছবি নতুন করে প্রকাশ করায় ভীষণ রাগ তার। বলেন, ‘দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই এতদিন পর সেই বিক্ষোভের ছবি ভাইরাল হচ্ছে।’
বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা নেপালে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দেশ জুড়ে আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে
মেয়েদের ফুটবল টুর্নামেন্টের বিরোধিতা করার কারণ হিসেবে চার বছর পর এসে নতুন অভিযোগ তুলেছেন একই দলের নাগেশ্বরী শাখার সাধারণ সম্পাদক জি এম এম আনছার আলী রয়েল। তিনি বলেন, ‘সেই সময় নাগেশ্বরীতে একটি ক্লাবের আয়োজনে নারী ফুটবল খেলা হয়। এই খেলাকে কেন্দ্র করে ক্যাসিনোর মতো জুয়া শুরু হয়। টিকিট ছিল ৫শ হতে ৭শ টাকা। খেলোয়াড়দের নিয়ে বাজি শুরু হয়।’
তার দৃষ্টিতে ফুটবলার মেয়েদের পোশাক শালীন নয়। তিনি বলেন, ‘মেয়েদের অশালীন পোশাকের কারণে সামাজ নষ্ট হওয়ায় আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম।’
এই পোশাক পরেই তো মেয়েরা টুর্নামেন্ট খেলে প্রশংসিত হচ্ছে। এতে সমাজ কেন নষ্ট হবে- এমন প্রশ্নে এই নেতা আর কথা বাড়াতে চাননি। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নিদের্শনা ছাড়া এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই।’
ইসলামী আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘২০১৮ সালে নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট বন্ধের দাবি কেন্দ্রীয় নির্দেশে হয়নি। স্থানীয়ভাবে পরিস্থিতি দেখে তারা প্রতিবাদ করেছিল।’
বাংলাদেশের মেয়েদের সাফল্যকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন- এই প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি এই নেতাও। বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছাড়া এই বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
এই ফাঁকে জানিয়ে রাখলেন, ‘অসামাজিক’ কার্যক্রমকে সমর্থন করেন না তিনি।
মেয়েদের ফুটবলকেই কি অসামাজিক কার্যক্রম বলছেন কি না-সেটি অবশ্য স্পষ্ট করেননি এই নেতা।
মেয়েদের ফুটবল নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্র কী ভাবছে- জানতে দলের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্রিকেট টিম যখন জেতে তখন তো প্রতিক্রিয়া নেন না। ফুটবল টিম জিতলেও নেন না। নারীরা খেলাধুলা করল প্রতিক্রিয়া কেন চান?’ এগুলো আমাদের কাছে আসলে ওই রকম ফ্যাংশন না। এসব নিয়ে আমরা ওতটা মাথা ঘামাই না।’
মেয়েদের ফুটবল ভালো কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ভালো-খারাপের বিষয় না। এসব বিষয় নিয়ে আমরা আসলে চিন্তা কম করি। দেশের কম সমস্যা ওগুলো নিয়ে চিন্তা করেই তো কুল পাই না। খেলাধুলা নিয়ে কখন ভাবব।’