বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বামপন্থায় কীভাবে দীক্ষিত হচ্ছে কওমি ছাত্ররা?

  •    
  • ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৪:৪৬

দিনাজপুরের কয়েকটি মাদ্রাসার কিছু শিক্ষার্থীকে দলে ভিড়িয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একাংশ। ছাত্র সংগঠনটির দিনাজপুর শাখার সভাপতি আবু হাসনাত বলেন, ‘কোনো ভালো কাজ করতে গেলে নানান ধরনের কথা উঠে আসে। ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে গেলে অনেক কথা উঠবে। আমরা ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে অনেক বাধা ও নানা কথার সম্মুখীন হয়েছি। তবে আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে চেষ্টা করছি যে, আমরা তাদের জন্য কাজ করছি।’

সাধারণ শিক্ষার মতো কওমি মাদ্রাসায়ও শিক্ষার্থীদের ব্যয় বেড়ে গেছে অনেকটাই। খরচ সামলাতে হিমশিম খাওয়া শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টিকে কাজে লাগিয়েই তাদের মধ্যে বামপন্থার দীক্ষা দেয়ার কৌশল নিয়েছে একটি সংগঠন।

এরই মধ্যে কওমি ছাত্রদের একটি মিছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে। উত্তরের জেলা দিনাজপুরে এই ছাত্রদের একটি মিছিলে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য দেয়া হয়েছে। ব্যানারে ‘সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কওমি মাদ্রাসা শাখা’ লেখাটি ছিল বিরাট চমক।

এই শিক্ষাব্যবস্থার কয়েকজন ছাত্র ইসলামী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বদলে বামপন্থি রাজনীতিতে দীক্ষিত হওয়াটা কি দুই বিপরীত মেরুর মধ্যে দূরত্ব কমে আসার প্রমাণ নাকি কওমিপন্থিদের মধ্যে নতুন চিন্তা, এ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। বামপন্থিরাই বা কেন কওমি ছাত্রদের নিয়ে কাজ শুরু করতে গেল- এ নিয়েও তৈরি হয়েছে জিজ্ঞাসা।

বাংলাদেশে কওমি ঘরানায় সমাজতান্ত্রিক যেকোনো সংগঠনকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করা হয়। তাদের দৃষ্টিতে এই সংগঠনগুলো ধর্মবিরোধী। কাজেই তাদের থেকে দূরে থাকা শ্রেয়। সেই কওমি ঘরানায় ছাত্র ফ্রন্ট কবে, কীভাবে শাখা খুলল সেই বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ছাত্র ফ্রন্টের দুটি কমিটি। একটির মূল সংগঠন হলো বাসদ, আরেকটির মূল সংগঠন বাসদ মার্ক্সবাদী। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ মার্ক্সবাদী) কওমি মাদ্রাসায় কোনো কমিটি বা কার্যক্রম নেই। তবে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ২০১৭ সাল থেকে দিনাজপুরের কয়েকটি কওমি মাদ্রাসায় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এতদিন কোনো কমিটি না থাকলেও সম্প্রতি কমিটি গঠনের ব্যাপারে কাজও শুরু হয়েছে।

কওমি মাদ্রাসা শাখার সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

অবশ্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদের ছাত্রদের বাধা দিচ্ছে। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে বামপন্থি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হওয়া যাবে না।

গত শনিবার বিকেলে দিনাজপুর শহরে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কওমি মাদ্রাসা শাখা ব্যানারে সেই মিছিলটি বের হয়। শহরের সরকারি কলেজ মোড় থেকে বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মর্ডান মোড়ে শেষ হওয়া কর্মসূচিটি আকারে ছোট হলেও আলোচনায় বড় হয়ে গেছে।

কর্মসূচিতে শতাধিক মাদ্রাসাছাত্র অংশ নেয় বলে জানিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) দিনাজপুর জেলা সভাপতি আবু হাসনাত।

কওমি ছাত্রদের দলে ভেরানোর এই চেষ্টাটা সহজ ছিল না।

আবু হাসনাত বলেন, ‘কোনো ভালো কাজ করতে গেলে নানান ধরনের কথা উঠে আসে। ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে গেলে অনেক কথা উঠবে। আমরা ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে অনেক বাধা ও নানা কথার সম্মুখীন হয়েছি। তবে আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে চেষ্টা করছি যে, আমরা তাদের জন্য কাজ করছি।’

তবে এই বোঝানোর কৌশলের বিস্তারিত প্রকাশ করতে চান না ছাত্রফ্রন্ট নেতা। তবে তার বক্তব্যে এটা উঠে এসেছে যে, মাদ্রাসায় খরচের বিষয়টি তারা সামনে আনছেন। এক যুগ আগেও প্রচার চালানো হতো যে, এসব মাদ্রাসায় বিনা মূল্যে পড়াশোনা করা যায়। কিন্তু এখন এই বিষয়টি নেই বললেই চলে। সাধারণ শিক্ষার তুলনায় মাদ্রাসায় ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি টাকা দিতে হয়। কারণ সেখানে আবাসিকব্যবস্থায় তাদের রাখা হয়।

কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তো সাধারণত বামপন্থিদের পছন্দ করে না। আপনারা কীভাবে তাদের কাছে গেলেন এবং বোঝাতে সক্ষম হলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’

এর পরই বলেন, ‘বর্তমানে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা বাণিজ্যিক হয়ে পড়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাও এর বাইরে নয়। আমরা মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনীতি করি। শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার। এই অধিকার থেকে কেউ বঞ্চিত না হয় সেই জন্য ছাত্র ফ্রন্ট কাজ করছে। তাই আমরা মাদ্রাসাগুলোতে গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলছি।

‘আমরা যতই বাম সংগঠন হই না কেন, আমরা তো রাজনীতি করি সাধারণ মানুষের জন্য। সাধারণ মানুষের শিক্ষার জন্য কাজ করি। আজ যাদের বেশি টাকা আছে, তারা বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। আবার যাদের টাকা কম আছে তারা ভালো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থাও একই।’

বেশ কিছু ছাত্রকে দলে ভেরানোর পর এবার কমিটি গঠনেও মন দিয়েছে ছাত্রফ্রন্ট। আবু হাসনাত বলেন, ‘আমরা বহুদিন ধরে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে কমিটি গঠনের বিষয়ে চেষ্টা করে আসছি। গত কয়েক মাস ধরে নতুন করে জোর চেষ্টা শুরু করছি।’

বাধা দিচ্ছেন শিক্ষকরা

ছাত্রফ্রন্টের মতো বামপন্থি সংগঠনে কওমি ছাত্রদের ভেড়ার বিষয়ে কথা হয় দিনাজপুর শহরের ছানাপীর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক ওসমান গনির সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত কাওমি মাদ্রাসা চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার নির্দেশনা মোতাবেক পরিচালিত হয়। কওমি মাদ্রাসার কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থী বামপন্থিসহ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবে না। আমরা ইসলাম ধর্ম নিয়ে কাজ করি ও প্রচার করি। আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারি না।’

তিনি বলেন, ‘বামপন্থিদের মিছিল ও সমাবেশে যেসব মাদ্রাসার ছাত্র দেখা গেছে, তাদের বিষয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। আমরা মনে করি, তারা কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হতে পারে না।’

সুইহারী খালপাড়ার মাদরাসাত সাওতিল কুরআনের সহকারী প্রধান শিক্ষক রাসেল ইসলাম বলেন, ‘যখন যেই সরকার ক্ষমতায় আসে, তার সঙ্গে সমন্বয় করে আমাদের মাদ্রাসা পরিচালনা করতে হয়। কিন্তু আমরা কোনো ধরনের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারব না। কেননা আমরা ধর্ম নিয়ে কাজ করি।’

এ বিভাগের আরো খবর