বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আবহাওয়ার পরিবর্তনে কমেছে লোডশেডিং

  •    
  • ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৮:২২

রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এখন বিদ্যুৎ যায় না বললেই চলে, আর অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যেখানে দিনে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা লোডশেডিং হতো, সেসব এলাকায় এখন ২ ঘণ্টা করে লোডশেডিং চলছে।

তীব্র দাবদাহের পর গত কয়েক দিন ধরে দেশের আবহাওয়ায় পরিবর্তন এসেছে। মাঝে মাঝে স্বস্তির বৃষ্টি ভেজাচ্ছে পথ-ঘাট, প্রশান্তি ছড়াচ্ছে জনমনে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন যে শুধু তাপমাত্রাই কমিয়েছে তা-ই নয়, পাশাপাশি কমিয়ে দিয়েছে লোডশেডিং ভোগান্তিও৷

জ্বালানি তেলের সংকটের কারণে দেশব্যাপী চলা নিয়মিত লোডশেডিং এখন অনেকটাই কম। এর কারণ আবহাওয়া ঠান্ডা হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা কমে এসেছে। এ জন্য কিছুদিন ধরে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি থেকে অনেকটাই নিস্তার পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

বৃষ্টির কারণে ডেসকোর ইস্ট জোনে বিদ্যুতের চাহিদা ১১৪০ মেগাওয়াট থেকে সাড়ে ৯০০ মেগাওয়াটে নেমে এসেছে।।

তবে এ অবস্থা স্থায়ী নয়। তাপমাত্রা বাড়লে বাড়বে বিদ্যুতের চাহিদা। একইভাবে বাড়বে লোডশেডিংও। মধ্য অক্টোবরের আগে স্থায়ীভাবে লোডশেডিং কমার কোনো সুযোগ দেখছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জ্বালানি তেলের সংকটের কারণে ঘোষণা দিয়ে দেশব্যাপী লোডশেডিং করছে সরকার। কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং হবে, এর শিডিউলও তৈরি করা আছে। এই নিয়ম মেনেই রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে দিনে তিন থেকে ৪ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করে আসছিল বিদ্যুৎ বিভাগ।

বড় শহরগুলোর বাইরে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ অনেক বেশি। গত দুই মাস এভাবেই চলে আসছে। তবে সেপ্টেম্বরের শুরুতে বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে দেশের লোডশেডিং চিত্রেও।

রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এখন বিদ্যুৎ যায় না বললেই চলে, আর অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যেখানে দিনে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা লোডশেডিং হতো, সেসব এলাকায় এখন ২ ঘণ্টা করে লোডশেডিং চলছে।

রাজধানীর শান্তিনগর-বেইলি রোড-কাকরাইল-রমনা ও এর আশপাশের এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এসব এলাকায় গত দুই বছর কোনো লোডশেডিং না থাকলেও গত দুই মাসে প্রতিদিন গড়ে ২-৩ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছিল। তবে সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে আগের অবস্থা ফিরে এসেছে। এখন আর লোডশেডিং হয় না বললেই চলে। হলেও দিনে দু-একবার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য লোডশেডিং হয়।

শান্তিনগরের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল ওয়াহাব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শান্তিনগর এলাকায় লোডশেডিং কী জিনিস, তা তো আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম। এমন অবস্থা হয়েছিল যে কোথাও আড্ডা দিতে বসলে বা সরকারের প্রশংসা করতে হলে সব সময় বিদ্যুৎ খাতের উদাহরণ দিতাম। আর গত তিন মাস যে পরিমাণ লোডশেডিং দেখলাম, তাতে গত কয়েক বছরের যে লোডশেডিং হয়নি সেটা মনে হয় পুষিয়ে নিয়েছে। তবে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে আবার একটু স্বস্তি পাচ্ছি, কারণ লোডশেডিং অনেক কমেছে।’

চামেলীবাগ এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থী শাম্মী আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত দুই মাস ছিল আমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। ওই সময়টায় পড়াশেনা করতে এতো কষ্ট হয়েছে বলে বোঝাতে পারব না। সারা দিন এক ঘণ্টা পরপর ইলেকট্রিসিটি চলে যেত, রাতেও থাকত না। এভাবে একদমই পড়াশোনা হয়নি। তবে পরীক্ষার আগের এক সপ্তাহ থেকে আর এমনটা হয়নি। তাই এ সময়টা পড়তে পেরেছি।’

রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা হাসানুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন আর লোডশেডিং নেই বললেই চলে। যা হয় তাও না হওয়ার মতোই– মাঝে মাঝে সন্ধ্যার পর আধাঘণ্টা লোডশেডিং হয়। আর দিনে লোডশেডিং হয় কিনা তা খেয়াল করে দেখিনি। হলেও এত কম সময়ের জন্য হয়, যা খেয়ালই করা হয় না।’

খিলক্ষেত-উত্তরার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়ও নেই তেমন লোডশেডিংয়ের প্রভাব। ফার্মগেট-ধানমন্ডি-কারওয়ানবাজার-মহাখালী-গুলশান-বনানী এসব এলাকাও লোডশেডিংমুক্ত হয়েছে।

তবে রাজধানীর কুড়িল-যাত্রাবাড়ী-উত্তরার দিয়াবাড়ী-মিরপুরের কালশী, পল্লবী-ডেমরা-জুরাইন এসব এলাকায় এখনও দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। রাজধানীর কড়াইল বস্তির বাসিন্দা ভ্যানচালক আবদুর রহমান বলেন, ‘কারেন্ট অহন একটু কমই যায়, তাও ধরেন দিনে ৪ ঘণ্টা তো থাকেই না। তাও ভালা আগে তো সারা দিনই কারেন্ট থাকত না।’

জুরাইন এলাকার গৃহিণী হালিমা আক্তার বলেন, ‘সারা দিন তো বাসায় থাকি। ঘরের কাজ শেষ করে একটু টিভি দেখি। কিন্তু এখন ঠিকমতো বিদ্যুৎ থাকে না। কি আর টিভি দেখব, বাসার ভিতর দিনেও অন্ধকার রাতেও অন্ধকার।’

এখন কিছুটা উন্নতি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন মনে হয় একটু কমই যায়, তাও তো দিনে তিন চার বার প্রতিবার যায় ১ ঘণ্টা কোনো খবর থাকে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অপারেশন) মির্জা আবু নাসের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্বে জ্বালানি তেলের সংকটের কারণে আমাদের দেশের জ্বালানি সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য আমাদের তেলে চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আপাতত কম ব্যবহার হচ্ছে। মধ্য অক্টোবরে এই সংকটের সমাধান হবে আশা করা যাচ্ছে। তার আগ পর্যন্ত শিডিউল লোডশেডিং চলবেই।

‘এই কদিন ওয়েদার ঠান্ডা হওয়ায় নাগরিকদের বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কমে গেছে। কারো এসি চালানো লাগছে না। ডেসকোর ইস্ট জোনে কিছুদিন আগেও বিদ্যুতের চাহিদা ছিল প্রায় ১১৪০ মেগাওয়াট, আর বৃষ্টি শুরু হবার পর তা নেমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯০০ মেগাওয়াট।

‘এই অবস্থায় আমাদের লোডশেডিং দেয়া লাগছে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হয়। সে জন্য কিছু কিছু এলাকায় আবার একটু লোডশেডিং দিতে হয়। তবে সব জায়গায় লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তাপমাত্রা বাড়লে চাহিদা আবারও বৃদ্ধি পাবে। তখন আবার লোডশেডিং দিতে হবে।’

রাজধানীর মতো দেশের প্রায় প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একই চিত্র। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনা বিভাগের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যমতে, বিভাগীয় শহরগুলোতে লোডশেডিং নেই বললেই চলে। কিন্তু জেলার অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতের অধীন এলাকায় দিনে ৩ থেক ৪ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে, যা গত দুই মাসে আগেও দিনে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা ছিল।

এ বিভাগের আরো খবর