বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রতি ইভিএমে খরচ পৌনে ৪ লাখ টাকা

  •    
  • ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২২:৪২

এর আগের দফায় কেনা প্রতিটি ইভিএম ইউনিটের পেছনে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ খরচ হয়েছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। ডলারের দাম বাড়ার কারণে প্রতি ইউনিটে ১ লাখ টাকা থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো খরচ বাড়ছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমপক্ষে দেড় শ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের লক্ষে নতুন একটি প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রকল্পটিতে ভ্যাট ও ট্যাক্স ছাড়া প্রতি ইউনিট ইভিএমের খরচ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে শুল্ক ও ট্যাক্স হিসেব করলে খরচ প্রতি ইউনিটে প্রায় পৌনে ৪ লাখ টাকা দাঁড়াবে বলে হিসাব পাওয়া গেছে।

২ লাখ ইভিএম কেনা সংক্রান্ত পুরো প্রকল্পটির পেছনে ব্যয় হবে ৮ হাজার ৭শ ১১ কেটি ৪৪ লাখ টাকা। তবে এ প্রকল্পে ইভিএম রাখার জন্যে গুদামঘর, লোকবল ও প্রশিক্ষণসহ আরও বিভিন্ন খাতে ব্যয় সন্নিবেশিত আছে।

প্রকল্পে ইউনিটপ্রতি ইভিএমের পেছনে ব্যয়ের অঙ্কটি নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

প্রতিটি ইভিএমে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২৩ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট ও ট্যাক্স খরচ হতে পারে বলে জানান নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। এ খাতে ব্যয় ১৫ শতাংশ হলে প্রতি ইউনিট ইভিএমে খরচ পড়তে পারে সাড়ে ৩ লাখ টাকার বেশি। তবে ভ্যাট ও ট্যাক্সের পেছনে ব্যয় ২৩ শতাংশ হলে এ খরচ দাঁড়াবে ৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।

নির্বাচন কমিশনকে নতুন ইভিএম সরবরাহ করবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)।

সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকে শুরু করে বিএনপিসহ সমমনা বেশ কয়েকটি দল ভোটে ইভিএম মেশিন ব্যবহারের বিরোধিতা করে আসছে। তবে বর্তমান কমিশন ভোটের দেড় বছর আগেই কমপক্ষে দেড়শ আসনে ইভিএম ভোট করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় সাংবিধানিক এ সংস্থা।

এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম কেনার জন্য কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের দেয়া প্রস্তাবে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস করেছিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সেবার প্রতি ইভিএমের পেছনে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ খরচ হয়েছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির ফলে ইভিএমপ্রতি ১ লাখ টাকা থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো খরচ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

ভ্যাট ট্যাক্স ছাড়া প্রতি ইভিএমে গতবারের তুলনায় খরচ বাড়ছে ৭১ হাজার টাকা। অন্যদিকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট-ট্যাক্স খরচ হলে প্রতি ইভিএমের পেছনে গতবারের তুলনায় ব্যয় বৃদ্ধি পাবে ১ লাখ ১৬ হাজার টাকার বেশি। যদি ২৩ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট-ট্যাক্সে ব্যয় হয়, তাহলে প্রতি ইভিএমে খরচ বাড়বে ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

তবে একই প্রকল্পের আওতায় ১০টি ওয়্যারহাউজ (গুদামঘর), ৫৩৪টি পিক-আপ ভ্যান, চারটি গাড়ি, ১ হাজার ৩৩৭ জন লোকবল নিয়োগ এবং এদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে পুরো প্রকল্পের আকার দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭১১ কেটি ৪৪ লাখ টাকা।

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ নিউজবাংলাকে বলেন,‘নতুন এ প্রকল্পে ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড়া ইভিএম প্রতি খরচ হবে ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। এই দামে ২ লাখ ইভিএম কেনা হবে। এ ছাড়া একই প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৩৩৭ জন দক্ষ জনবল নিয়োগ করা হবে।’

একটি ইভিএমের তিনটি অংশ আছে। এগুলো হলো কন্ট্রোল ইউনিট, ব্যালট ইউনিট ও ডিসপ্লে ইউনিট। ভোটারের নিজেদের পরিচয় নিশ্চিত করতে আঙুলের ছাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিসপ্লেতে ওই ভোটারের ছবিসহ যাবতীয় তথ্য চলে আসে। ব্যাটারির মাধ্যমে ইভিএম চলবে। চার্জ থাকবে ৪৮ ঘণ্টা। ইভিএমের সঙ্গে বাইরের কোনো ইন্টারনেট বা এ ধরনের কোনো সংযোগ থাকবে না। ফলে এটি হ্যাক করার কোনো সুযোগ নেই।

সোমবার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নিজেদের সপ্তম সভায় ‘নির্বাচনি ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএম এর ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) অনুমোদন দেয়। পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তারা প্রকল্পের আকার ঘোষণা করেন। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় সিইসি এ সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

২০১১ সালের পর থেকে বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। তবে তখন ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএমে নির্বাচন করার সামর্থ্য ছিল নুরুল হুদা কমিশনের।

এর আগে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন বাংলাদেশে প্রথম ইভিএম ব্যবহার করে। ওই ইভিএম তৈরি করেছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বুয়েটের তৈরি ইভিএমে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছিল। ওই ইভিএমে বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করার ব্যবস্থা ছিল না। ‘ভিভিপিএটি’ (ভোট দেয়ার নিশ্চিতির রশিদ) সুবিধাও ছিল না। বর্তমানের ইভিএমেও ‘ভিভিপিএটি’ সুবিধা নাই।

সোমবারের বৈঠক শেষে ইসি মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বর্তমানে আমাদের কাছে যে ইভিএম আছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ভোট করা সম্ভব। তাই ১৫০টি আসনে নির্বাচন করতে হলে নতুন করে ইভিএম কিনতে হবে।

‘এ জন্য ইসি সচিবালয় নতুন একটি প্রকল্প প্রস্তাব কমিশন সভায় তুলেছিল। আমরা এটার অনুমোদন দিয়েছি। এখন পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। এর আগে একটা কাজ আছে। সেটা হলো অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটা সভা করতে হবে। তারপর সেটা প্ল্যানিং কমিশনে পাঠানো হবে। একনেক এটা চূড়ান্ত অনুমোদন করবে কী করবে না, এটা তাদের বিষয়।’

দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৯৩ হাজারের মতো ইভিএম রাখা হয়েছে। নির্বাচনের সময় সেখান থেকে যন্ত্রগুলো পাঠানো হয়। আর বিএমটিএফে সংরক্ষিত আছে প্রায় ৫৫ হাজার যন্ত্র। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম ইসির কাছে রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর