বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাংলাদেশের নারীর এ যেন এক স্পর্ধিত বিজয়গাথা

  •    
  • ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২১:৪৮

বিরুদ্ধ এক পরিবেশে থেকেও বাংলাদেশের নারীরা যে বিজয় ছিনিয়ে আনার অদম্য শক্তি রাখেন তারই প্রমাণ আরেকবার দেখল বাংলাদেশ। অজস্র প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে সাবিনা ও তার দল নেপালের মাঠে রচনা করলেন সেই অপরিমেয় বীরগাথা। 

নেপালের মাটিতে লাল-সবুজের নতুন গৌরবগাথা রচনা করলেন বাংলার নারীরা। শৈল্পিক ফুটবলের জাদুতে অর্জন করলেন দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্ব। সাফ নারী চ্যাম্পিয়ন এখন বাংলাদেশ।

কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে নেপালকে পরাভূত করা স্বপ্না, শামসুন্নাহার, কৃষ্ণারা যেন সব কিছুকে জয় করা বাংলাদেশের নারীদের প্রতিচ্ছবি।

বাংলার নারীর এই অমিত শক্তিকে বহু দিন আগেই রং-তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে চিত্রিত করেছিলেন চিত্রকর এস এম সুলতান। আনুচিং, সাবিনারা যেন সুলতানের সেই চিত্রকর্মের সার্থক রূপ দিলেন নেপালের মাটিতে।

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল এমন এক সময়ে এ বিজয় ছিনিয়ে আনল, যখন পোশাক বিতর্ক তুলে ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে নারীর মর্যাদা। বেশ কিছু ঘটনার মাধ্যমে নারীর স্বাধীন চলাফেরা ও পোশাকের স্বাধীনতাকে খর্বের হুমকি তৈরি করা হচ্ছে।

নরসিংদীর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়ানো এক তরুণীকে হেনস্তার মাধ্যমে নতুন করে এই প্রতিক্রিয়াশীলতার শুরু। জিন্স ও টপস পরা সেই নারী হয়েছেন দুর্ব্যবহার ও আক্রমণের শিকার। ওই ঘটনায় উচ্চ আদালতের এক বিচারকের মন্তব্য নিয়েও তৈরি হয় আলোচনা।

এরপর নারীর কথিত ‘ছোট পোশাকের’ বিরুদ্ধে মানববন্ধন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ভাষা থেকে স্বাধিকার কিংবা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীর পোশাকের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এমন অবস্থান প্রমাণ করছে একুশ শতক কিংবা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বারে দাঁড়িয়েও বাংলাদেশ নারীর অধিকার প্রশ্নে এখনও দ্বিধান্বিত।

এর আগে রাজধানীর ফার্মগেটের মতো ব্যস্ততম জায়গাতে টিপ পরার কারণে ‘রক্ষক’ পুলিশ সদস্যের হাতে হেনস্তার শিকার হন শিক্ষক লতা সমাদ্দার।

অন্যদিকে কলেজ শিক্ষার্থীকে মামুন হোসেনকে বিয়ে করার পর থেকে সমাজের টীপ্পনি বিষিয়ে তুলেছিল শিক্ষক খাইরুন নাহারের জীবন। আট মাসের মাথায় মৃত্যুকে বেছে নিতে হয় বিষণ্নতায় ভুগতে থাকা খাইরুনকে।

ছাদ থেকে পড়ে মারা যাওয়া ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সানজানা মোসাদ্দিকার মৃত্যুর পরই জানা গেছে বাবার হাতে নিয়মিত নির্যাতিত হতেন তিনি। এমন এক বিরুদ্ধ পরিবেশে থেকেও বাংলাদেশের নারীরা যে বিজয় ছিনিয়ে আনার অদম্য শক্তি রাখেন তারই প্রমাণ আরেকবার দেখল বাংলাদেশ।

অজস্র প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে সাবিনা ও তার দল নেপালের মাঠে রচনা করলেন সেই অপরিমেয় বীরগাথা।

প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে বুড়ুো আঙুল দেখিয়ে শিউলি, মারিয়া, সানজিদা, মনিকারা দেখিয়ে দিলেন তথাকথিত ছোট পোশাক বা বড় পোশাকের বাহাদুরিতে নয়; নারী নিজেই তৈরি করে নিতে সক্ষম বিজয়ের পথ।

‘এক নিশুতি রাতে ঝড়ের সাথে লড়ছিল বনলতা’- এই নারীরা খেলার মাঠে সেই যুদ্ধটাই যেন মঞ্চায়ন করেছেন। প্রতিটি গোলের জন্য তারা যখন নেপালের গোলপোস্ট নিশানা করছিলেন তখন যেন ভেঙে যাচ্ছিল মৌলবাদ, পুঁজিবাদ, পুরুষতন্ত্রের তৈরি সব কাঁচের দেয়াল।

সাফজয়ী বাংলাদেশের এই নারী ফুটবল দল যেন বাংলাদেশের বহুত্ববাদী সংস্কৃতিরও বর্ণাঢ্য প্রতিচ্ছবি। নানান ধর্ম, নানান নৃগোষ্ঠীর অপূর্ব এক সম্মিলন ঘটেছে এই বিজয় দলে। চাকমা, মারমা, বাঙালিসহ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ সব মিলিয়ে এক বহুমাত্রিক সম্মিলিত নারীশক্তির কাছে পরাভূত হয়েছে নেপাল।

অধিকারকর্মী এবং আমরাই পারি-এর জাতীয় সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক বিজয়ীদের অভিবাদন জানিয়ে ফেসবুকে তাই লিখেছেন, ‘এতো আনন্দ বহুদিন পর ♥️৩/১, একটা পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে, একটা মৌলবাদের বিরুদ্ধে, একটা পুঁজিবাদ এর বিরুদ্ধে।’

পলিটিকাল স্যাটায়ারিস্ট সিমু নাসের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আজকে যে দলটি নেপালকে হারাল সেই দলটি শুধু নেপালকেই হারায়নি, নারী হিসেবে বাংলাদেশের অনেক প্রতিবন্ধকতাকেও চ্যালেঞ্জ করে হারিয়েছে।

‘এদের গল্পগুলো কাল থেকেই পত্রিকায় পড়ছিলাম, কলসিন্দুরের মেয়েদের যুদ্ধের গল্পতো আগেই অনেক পড়েছি, এদের বিরুদ্ধে মিছিল পর্যন্ত হয়েছে— মেয়েরা কেন হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলবে—তাই এই জয়কে শুধু ৩-১ এর জয় হিসেবে দেখলে তাদের প্রতি অন্যায় করা হবে, এরা আসলে সব বাধা পেরিয়ে সত্যিকারের বিজয়ী হওয়ার সত্যিকারের উদাহরণ।‘

এ বিভাগের আরো খবর