বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মিয়ানমার ইস্যুতে এবার আসিয়ানবহির্ভূত দূতদের ডাকা হচ্ছে

  •    
  • ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২০:৪২

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ঢাকায় আসিয়ানবহির্ভূত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের মঙ্গলবার ডেকে মিয়ানমার পরিস্থিতি কূটনৈতিকভাবে সমাধানের চেষ্টার কথা তুলে ধরা হবে। এর আগে সোমবার আসিয়ান দেশগুলোর দূতদের ডাকা হয়।

মিয়ানমার সীমান্তে সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসনে কূটনৈতিক পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে এবার অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) বহির্ভূত দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঢাকায় দায়িত্বরত প্রতিনিধিদের ডাকছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার এসব রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারকে ডাকা হচ্ছে।

এর আগে সোমবার আসিয়ান সদস্য দেশগুলোর দূতদের সঙ্গে বৈঠক করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকায় দায়িত্বরত আসিয়ানের বাইরের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের মঙ্গলবার দুপুরে ডেকে মিয়ানমার সীমান্তে সংঘাতময় পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফ করা হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টার কথা তুলে ধরা হবে।

সোমবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ডাকা হয় আশিয়ানভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের। তবে সেখানে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়নি।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ডাক পাওয়া রাষ্ট্রদূতদের জানানো হয়েছে যে বর্তমান মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন। এই পরিস্থিতি স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে, যা কোনোমতেই সহনশীল পর্যায়ে নেই।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আসিয়ানের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম মিয়ানমার ইুস্যুতে সীমান্তে যেসব ঘটনা ঘটছে সে সম্পর্কে জানান।

বৈঠকে দূতদের কোনো বিষয়গুলো ব্রিফ করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আঞ্চলিকভাবে তাদের (আসিয়ান) গুরুত্বটা বেশি। তারা ওই ফোরামের সদস্য। সে কারণে তারা বিশেষ গুরুত্ব রাখে।

‘আমরা তাদের বলেছি, মিয়ানমারের মর্টারের গোলা এসে পড়ছে, এয়ার ফায়ারিং হচ্ছে, আমাদের আকাশ সীমা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় এদিকে প্রাণহানি ঘটছে, জান-মালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। জীবিকার ওপর প্রভাব পড়ছে। আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। সেখান থেকে মানুষকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এগুলো কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

আসিয়ানের দূতদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা (দূতরা) বলেছেন, এগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত। এর সঙ্গে বাংলাদেশ কোনোভাবেই সম্পক্ত নয়। তারা বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের প্রশংসা করেছেন। একইসঙ্গে জানিয়েছেন যে তারা আমাদের সহযোগিতা করবেন।’

মঙ্গলবার ডাক পাওয়া রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের কাছেও বাংলাদেশ একই অবস্থান তুলে ধরবে।

আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা বৈঠকে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তারা নিজ নিজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাবেন। উদ্দেশ‍্য, তারা যেন বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে।

আশিয়ান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দশটি রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্থা। ১৯৬৭ সালের ৮ আগস্ট ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড নিয়ে গঠিত হয় এই সংস্থা। তারপর ক্রমান্বয়ে ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম এ সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে।

এদিকে সীমান্তে মিয়ানমারের অব্যাহত সামরিক তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দেশটি থেকে মর্টার শেল ছোড়ার ঘটনায় রোববার চতুর্থবারের মতো দেশটির রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে তলব করে ঢাকা। তাকে মিয়ানমারের কর্মকাণ্ডের জন্য কড়া প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি এগুলো বন্ধ নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমারের দূত পৌঁছলে তাকে ১৫ মিনিটের মতো বসিয়ে রাখা হয়। এরপর মিয়ানমার অনুবিভাগের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক নাজমুল হুদা নোট ভারবালের মাধ্যমে বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এড়াতে দৌড়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ত্যাগ করেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত।

তলবের পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির দূত দাবি করেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মর্টার শেল ছুড়েছে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গোলাবারুদ চুরি করে বাংলাদেশে গুলি করছে, যাতে করে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়; বাংলাদেশ মিয়ানমারকে অবিশ্বাস করে।

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব খোরশেদ আলম রোববার বিকেলে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।

একই সময়ে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের আচরণ নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের দ্বারস্থ হবে বাংলাদেশ। আসিয়ানের যে রাষ্ট্রদূতরা ঢাকায় আছেন তাদের ডেকে এই ঘটনা ব্রিফ করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বার বার প্রতিবাদ জানিয়েও মিয়ানমারের সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না।

‘মিয়ানমার এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। প্রতিবেশী হিসেবে আমরা চাই না এর পুনরাবৃত্তি ঘটুক। আমরা এসব ঘটনা থেকে মিয়ানমারকে বিরত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাব।’

বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে বেশ কিছুদিন ধরে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াই চলছে মিয়ানমার সেনাদের। এই লড়াইয়ের মধ্যে মিয়ানমার সেনাদের ছোড়া বেশ কিছু মর্টার শেল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে।

সবশেষ শুক্রবার রাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু কোনারপাড়া সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া চারটি মর্টার শেল এসে পড়ে। এতে শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক যুবক নিহত হন। আহত হন রোহিঙ্গা শিশুসহ পাঁচজন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, একের পর এক আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে চলেছে মিয়ানমার। একাধিকবার আকাশসীমা লঙ্ঘন, বাংলাদেশের ভূমিতে মর্টার শেল, গোলা ও গুলি এসে পড়ছে।

মিয়ানমারের আকাশসীমা লঙ্ঘনের বিষয়টি বাংলাদেশ দুর্ঘটনা হিসেবে দেখে আসছিল। কারণ সীমান্ত সরল রেখায় নেই, আঁকাবাঁকা। ফলে আকাশসীমা লঙ্ঘন হয়েছে। কিন্তু একই ঘটনা যখন বার বার ঘটে তখন সেটিকে আমলে নিতেই হয়। আর বাংলাদেশের ভেতরে যখন মাইন পুঁতে রাখার বিষয়টি আসে তখন তা শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এ বিভাগের আরো খবর