দেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজেরা মারামারি করে সরকারের ওপর দায় চাপাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের এক যৌথসভার আগে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজেরা মারামারি করে সরকারের ওপর দায় চাপাচ্ছে। বরিশালে আর চট্টগ্রামে মারামারি করেছে কারা? বরিশালে তারা নিজেরা নিজেদের ওপর হামলা করেছে, চট্টগ্রামেও চেয়ার ছোড়াছুড়ি করেছে।’
দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নেত্রীর নির্দেশনার বাইরে কেউ যদি এসব হামলা জড়িয়ে পড়েন, আমরা কিন্তু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। এখানে কেন্দ্রের কোনো নির্দেশ নেই।’
তিনি বলেন, ‘বিচ্ছিন্নভাবে এখানে-ওখানে দু-একটা ঘটনা ঘটিয়ে আজকে সরকারের দুর্নাম, আওয়ামী লীগের দুর্নাম। এগুলো যারা করবে সহ্য করা হবে না।
‘আর এইটার সুযোগ নিয়ে বিএনপি আমাদের অপবাদ দেবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে তারা চলে যায় বিভিন্ন দূতাবাসে। গিয়ে নালিশ। দেশের মানুষের কাছে যতটা না করে, তার চেয়ে বেশি বিদেশিদের কাছে।’
ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যে বিএনপির কাছে জানতে চান, তাদের এত পাকিস্তানপ্রীতি কেন?
বিএনপি এই দেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যারা পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে নির্বাসনে পাঠাতে চেয়েছিল; তাদেরই প্রেতাত্মারা... তাদেরই দলের সেই সৈনিকরা, সেই দল বাংলাদেশকে আবারও পাকিস্তান বানাতে চায়।
‘মির্জা ফখরুল মনের কথা গোপন রাখতে পারেননি। তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে যে পাকিস্তান আমলে ভালো ছিলাম।’
বিএনপি মহাসচিবকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শুনেছি পাকিস্তান ফিরে পেতে চান। এই মুক্তিযুদ্ধের দেশে আমরা আমাদের প্রিয় জন্মভূমিকে পাকিস্তানপন্থিদের হাতে তুলে দেব না। এই শপথ আমাদের নেতৃবৃন্দ নিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা আবার বলে পাকিস্তানের নাম শুনলেই আওয়ামী লীগের গাত্রদাহ হয়। হ্যাঁ গাত্রদাহ হয়। গাত্রদাহ তো হবেই। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমি স্বাধীন। আমার গাত্রদাহ হবে না?’
‘যে পাকিস্তান আমার ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে, আমার মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করেছে; তাদের প্রতি আপনার এত পেয়ার-পিরিতি কেন? কেন এত মহব্বত। এই হত্যাকাণ্ডের কথা ভুলে গেছেন? আমাদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়নি। আমাদের ওপর কয়েক লাখ বিহারিকে আমাদের ঘাড়ে বোঝা করে গেছে। তাদের নাগরিক, তারা ফিরিয়ে নেয়নি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘৫০ বছর পরও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার জন্য পাকিস্তান ক্ষমা চায়নি। একাত্তরের প্রতিশোধ নিতেই জিয়াউর রহমান পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার মাস্টারমাইন্ড ছিল। সেটাই তো প্রমাণিত হয়।’
বৈঠকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।