দল গোছাতে গিয়ে নতুন বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে বরগুনা বিএনপিতে। সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর তারা ৯টি ইউনিটের কমিটি পুনর্গঠন করেছে। তবে এই কাজে নেতাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন দ্বন্দ্ব-বিভক্তি।
আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর বিএনপির একাংশ কর্মসূচিতে সক্রিয় হলেও বাকিরা দলীয় একেবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। জ্যেষ্ঠ নেতারা মনে করেন, বরগুনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটিতে হানা দিতে বিএনপির এক হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
আগের কমিটি বিলুপ্ত করে গত ৮ জুন মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লাকে আহ্বায়ক ও তারিকুজ্জামান টিটুকে সদস্য সচিব করে জেলা বিএনপির ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়।
আগস্টে বিএনপির উপজেলা ও পৌর ইউনিটের ১০টি কমিটি ভেঙে দিয়ে কমিটি পুনর্গঠন শুরু করে তারা। ইতোমধ্যে তারা ৯টি ইউনিটের কমিটি করেছেও।
তবে ১১ সেপ্টেম্বর বরগুনা প্রেস ক্লাবে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এ জেড এম সালেহ ফারুক সংবাদ সম্মেলনে এসব কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন। তার অভিযোগ, আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব স্বেচ্ছাচারিতা করছেন। অগঠনতান্ত্রিক ও অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিভিন্ন উপজেলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে দাবি করে এসব কমিটির প্রতি অনাস্থাও প্রকাশ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতারা ছাড়াও সহযোগী সংগঠনের প্রায় ২০ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে চলতি মাসে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
তবে তাদের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা। বলেন, ‘২০১৮ সালে জেলা বিএনপি কমিটি গত চার বছরে একটি ইউনিটের কমিটি গঠন করতে পারেনি। তিন মাসের মধ্যে আমরা সে কাজটি করেছি। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনামতে আমরা কমিটি দিয়েছি। নিষ্ক্রিয় ও বিতর্কিতদের কমিটিতে ঠাঁই না দেয়ায় তারা এসব অভিযোগ করেছে।’
২০০৯ সালে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লাকে সভাপতি ও এস এম নজরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫১ সদস্যের জেলা কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। ৯ বছর পর ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি সম্মেলেন ছাড়াই ফারুক মোল্লার ভাই নজরুল ইসলাম মোল্লাকে সভাপতি ও সাবেক জাতীয় পার্টি নেতা মো. হালিমকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা বিএনপির ৬৩ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটি অনুমোদন নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সম্মেলন ছাড়া কমিটি গঠন করায় মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লাসহ বিএনপির একাংশ নজরুল-হালিম কমিটি প্রত্যাখ্যান করে। তবে চার বছর নজরুল-হালিম কমিটি নিজেদের সমর্থকদের নিয়ে কোনোমতে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির শীর্ষ এক নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, জেলায় বিএনপির নেতারা তিনটি ভাগে বিভক্ত। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা ও সদস্য সচিব তারিকুজ্জামান টিটুর একটি পক্ষ। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি চাইছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ উজ জামান মামুন মোল্লা অথবা মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লাকে আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হোক। এ লক্ষ্যে তারা তরুণদের নিয়ে ইউনিটগুলো তৈরি করছে।
জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বরগুনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মনির সমর্থক জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নুরুল আমিন, ফজলুল হক মাস্টার এবং কে এম শফিকুজ্জামান মাহফুজ।
অন্যদিকে সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লার সমর্থক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হুমায়ুন হাসান শাহীন, জাফরুল হাসান জাফর, জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি মাইনুল ইসলাম মাইনুদ্দিনসহ একটি অংশ।
এই তিন পক্ষের নেতারা অন্য পক্ষের নেতাদের তো বটেই, তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়েও আপত্তি জানাচ্ছেন।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব তারিকুজ্জামান টিটু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তরুণ নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ উজ জামান মামুন মোল্লা আমাদের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জেলা বিএনপিকে সার্বিক সহযোগিতা করছেন। মামুন মোল্লা বরগুনায় জনপ্রিয়তা অর্জন করে আওয়ামী লীগের কাছে ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। আওয়ামীপন্থি বিএনপির কিছু ব্যক্তি আছে, এরা এটাকে মেনে নিতে পারছেন না বলেই আমাদের সমালোচিত করতে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে তার নির্দেশনায় তরুণনির্ভর দল গঠনের লক্ষ্যে আমরা বরগুনা জেলা বিএনপির ১০টি ইউনিট পুনর্গঠন শুরু করে ইতোমধ্যে ৯টি গঠন করেছি। সেখানে বিতর্কিতদের ঠাঁই না দেয়ায় দলের একাংশ সমালোচনা করছে।
‘আমরা দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনামতে দল গোছানোর কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমরা জেলায় বিএনপিকে সুসংগঠিত করে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে চাঙা করেছি। গত ২০ বছরেও বিএনপি বরগুনায় এভাবে সক্রিয় ছিল না। যারা সমালোচনা করছে, বিগত দিনে তারা ব্যর্থ ছিল।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি এখন ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা ঘরে বা অফিসে কার্যক্রম করছি না এখন আর। আমরা মাঠে লড়াই করছি। যারা ঘরে বসে রাজনীতি করত তাদের এটা সহ্য হয় না বলেই সমালোচনা করে। আমরা এসব কানে না নিয়ে সামনের সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে দল গুছিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’