ওপারে মিয়ানমার অংশে উত্তেজনার কারণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত থেকে স্থানীয় ৩০০ পরিবারের প্রায় দেড় হাজার সদস্যকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নেয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি আগেই জানিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াসমিন পারভিন।
তাদের সরিয়ে কোথায় নেয়া হবে, সে জন্য সোমবার কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন তিনি। তবে এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি বিবেচনা ও তুমব্রুবাসীর মতামতের পরই তাদের সরিয়ে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিসি।
সোমবার বেলা ১১টার পর ঘুমধুম থেকে সরিয়ে নেয়া কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন ও পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম। সেখান থেকে তারা যান তুমব্রু সীমান্ত এলাকায়। এখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে কোথায় নেয়া হবে, সে জন্য কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন।
এরপর ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তারা।
বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন বলেন, ‘পরিস্থিতি এখনো পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। গেল কয়েক দিনের গোলা বর্ষণের পর থেকে স্থানীয় কিছু বাসিন্দাদের সরানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। তবে ঝুঁকি বিবেচনা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামতের পর কখন তাদের সরিয়ে আনা হবে, তা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র সরিয়ে নেয়া হলেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাদের (মিয়ানমার) উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে যেন বাংলাদেশের নাগরিকরা হতাহতের শিকার না হয়, সেদিকেই বেশি জোর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামত নিতে। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আপাতত বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। আমরা শুধু আমাদের জনগণকে নিয়ে ভাবছি। তারাও মিয়ানমারের নাগরিক। তাদের বিষয় আন্তর্জাতিক মহল ভাববে।’
স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেছেন পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলামও। ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কী চলছে, তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। এখন আমাদের কাজ স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা দেয়া। আমরা জনগণকে নিয়ে ভাবছি। সব পয়েন্টে বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ তৎপর রয়েছে। ৪০ জন পুলিশ নিয়মিত এলাকায় টহল জোরদার রেখেছেন। পাশাপাশি এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তাও বজায় রেখেছেন।’
বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৩০০ পরিবারের প্রায় দেড় হাজার বাসিন্দাকে সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কবে নাগাদ তাদের সরানো হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে আজকের বৈঠকে। তিনি (ডিসি) আপাতত সতর্ক থাকা ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সীমান্ত লাগোয়া বাসিন্দাদের মতামত নিতে বলেছেন।’
গেল শুক্রবার মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলে সীমান্ত শূন্যরেখায় এক রোহিঙ্গা নিহতের পর সোমবার সকালেও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে দফায় দফায় বিকট গোলার শব্দ শোনা গেছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তুমব্রু বাজারের দোকানদার মোহাম্মদ আতিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভোর ৫টার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯ বার ভারী গোলার শব্দ শোনা গেছে। স্কুল শিক্ষার্থী, শিশুরা ভয় পায়।’
মাসখানেক ধরে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল, গোলাগুলিসহ নানা ভারী অস্ত্রের আওয়াজে এপারের ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু ও বাইশপারী এলাকার মানুষ দিন কাটাচ্ছে আতঙ্কে।
বেশ কয়েকবার মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের পাহাড় থেকে ছোড়া মর্টার শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডেও এসে পড়েছে।
গত ২৮ আগস্ট তুমব্রু উত্তরপাড়ায় একটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ে। সেদিনই সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমানকে চক্কর দিতে দেখা যায়।
এরপর ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া দুটি গোলা ঘুমধুম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় পড়ে। সেগুলো অবিস্ফোরিত থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
সবশেষ শুক্রবার রাতে তুমব্রুর কোনারপাড়া সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক যুবক নিহত হন। আহত হয় রোহিঙ্গা শিশুসহ ৫ জন।
এর আগে একই দিন দুপুরে এই সীমান্তেই হেডম্যানপাড়ার ৩৫ নম্বর পিলারের ৩০০ মিটার মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে মাইন বিস্ফোরণে আহত হন বাংলাদেশি এক যুবক।