পূর্বঘোষণা ছাড়াই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের একাংশের অবরোধে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
অনেকের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। মাঝপথে ফিরে যেতে হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীকে।
হঠাৎ এমন অবরোধ কতটুকু যৌক্তিক, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অবরোধের ডাক দেন সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী ছাত্রলীগের ছয়টি গ্রুপের নেতা-কর্মীরা। গ্রুপগুলো হলো ‘ভিএক্স’, ‘কনকর্ড’, ‘আরএস’, ‘বাংলার মুখ’, ‘এপিটাফ’ ও ‘উল্কা’।
অবরোধের কারণে ক্যাম্পাস থেকে কোনো শিক্ষক বাস ছেড়ে যায়নি। অন্যদিকে অবরোধকারীদের বাধার মুখে বন্ধ রাখা হয় সাড়ে ৭টা ও ৮টার শাটল ট্রেন। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস।
চবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ফিশারিজ, সংস্কৃত, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, মাইক্রোবায়োলজি, পালি, মার্কেটিং, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, দর্শন, আরবি, ম্যানেজমেন্ট, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে সোমবার পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
এগুলোর মধ্যে সংস্কৃত, মার্কেটিং, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, দর্শন, ম্যানেজমেন্ট ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চলমান পরীক্ষাগুলো হয়েছে। পরীক্ষা স্থগিত করেছে বাকি বিভাগগুলো।
এদিকে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সব ইউনিটের ওয়ার্ড কোটা, শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটা ও দলিত কোটার সাক্ষাৎকারের তারিখ ছিল সোমবার। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা উপস্থিত হতে পেরেছেন, তাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে।
আজ উপস্থিত থাকতে না পারা শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন অ্যাকাডেমিক শাখার উপ-রেজিস্ট্রার এস এম আকবর হোছাইন।
কী বলছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা
হঠাৎ অবরোধে বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। তাদের একজন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্রী কানিজ ফাতেমা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সব ক্লাস, পরীক্ষা ক্যানসেল করে দিয়েছে। অর্ধেক পথ আসার পরই জানতে পারি ক্লাস হবে না। তাই আবার ফিরে যেতে হয়েছে।’
মাসুম হোসেন নামের এক ছাত্র বলেন, ‘হুটহাট ফটক বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের বিপাকে ফেলার অর্থ কী? এখন পরীক্ষার সময়। এ সময়ে ক্যাম্পাসে গণ্ডগোল হলে পরীক্ষা স্থগিত হয়, পিছিয়ে যায়। এতে আমাদেরই লস হয়, তাদের (রাজনৈতিক কর্মী) কিছু হয় না।’
কেন এই অবরোধ
চবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও ভিএক্স গ্রুপের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, ‘পদবঞ্চিত কর্মীরা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আমাদের এই দাবি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দাবি আদায় করতে হলে রাজপথে আন্দোলন করে দাবি আদায় করতে হবে। এখানে যারা আন্দোলন করছে, তারা সবাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মী।
‘চবি ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন, সংগ্রাম, দাবি আদায়ের জন্য যা প্রয়োজন, তারা করছে। আমরা তাদের সঙ্গে আছি।’
প্রশাসনের ভাষ্য
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘নিয়ম হচ্ছে কোনো পরীক্ষার্থী যদি আসতে না পারে, তাহলে সেই পরীক্ষা নেয়া হয় না। আর শিক্ষক না এলে ক্লাস কীভাবে হবে? এটা বিভাগের সিদ্ধান্ত।’
প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘এটা আসলে প্রশাসনের কাছে কোনো দাবি না। এটা সাংগঠনিক বিষয়। তারা সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টির সমাধান করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে বাধা দেয়া যুক্তিযুক্ত নয়।’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নেবে, তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর হতে পারছে, কিন্তু তারা যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আমরা তাদের বুঝিয়ে আন্দোলন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছি।
‘যদি তারা না বোঝে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক হ্যান্ডস (উপায়) আছে। সেগুলোই ব্যবহার করার চেষ্টা করবে।’