চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইউসুফ গাজীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।
রোববার বিকেল ৫টার দিকে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান এই ঘোষণা দেন।
রিটার্নিং অফিসার জানান, ওই প্রার্থী চাইলে মনোনয়নপত্র বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে আগামী তিন দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার তোফায়েল হোসেন জানান, দিয়াশলাই ফ্যাক্টরিতে কাঠ সরবরাহের যৌথ ব্যবসার প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ইউসুফ গাজীর বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন স্থানীয় হুমায়ুন কবির।
ওই মামলায় আদালত আসামিকে খালাসের রায় দিলেও ২০০৮ সালে রায়ের বিরুদ্ধে খুলনা দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদী। আপিল শুনানি শেষে ইউসুফ গাজীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর তাকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
আদালতের রায়ে বলা হয়, এ রায় গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে। সেই সঙ্গে আসামিকে ৩০ দিনের মধ্যে খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়।
এরপর ওই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হলে হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ রুল জারি করে দণ্ডাদেশে স্থগিতাদেশ দেয়।
২০১৭ সালে রিট পিটিশনটি পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে বিচারপতি মাইনুল হোসেন চৌধুরী এবং বিচারপতি জে বি এম হাসানের আদালত দণ্ডাদেশের স্থগিতাদেশ বাতিল করে পাঁচ বছরের সাজা ও অর্থদণ্ড বহাল রাখে। এরপর ইউসুফ গাজী উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে ২০১৭ সালে একটি পিটিশন দিলেও আদালত দণ্ডাদেশ স্থগিত না করে ১০ সপ্তাহের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু পিটিশন করার নির্দেশ দেয়। অন্যথায় তা খারিজ হবে বলে উল্লেখ করে। লিভ টু আপিল করা হয় ২০১৯ সালে।
তার মনোনয়নপত্র বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন সদ্য পদত্যাগী চাঁদপুর জেলা পরিষদ প্রশাসক এবং আগামী নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ওচমান গনি পাটওয়ারী। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউসুফ গাজীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
ওচমান গনি পাটওয়ারী অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘আসামি যেহেতু আপিল আদালতের রায় অনুযায়ী আত্মসমর্পণ না করে পলাতক থাকেন এবং রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির মাধ্যমে সাজা পরোয়ানা জারি করতে দেননি। আইনের চোখে তিনি বর্তমানে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হিসেবে চিহ্নিত।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী ‘নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধের ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার যোগ্য হবেন না।’ এ অবস্থায় তার নির্বাচনি মনোনয়নপত্র বাতিলযোগ্য। তিনি নির্বাচন করার অযোগ্য।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই শেষে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩২ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১২ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান পদে একজন, সাধারণ সদস্য পদে ৭ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে একজনের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।