বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শরীফুলকে অব্যাহতি দেয়ার পেছনে আসলে কী?

  •    
  • ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২১:০৩

বর্ধিত সভায় হট্টগোলকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির পদ তো গেছেই সংগঠন থেকেই অব্যাহতি পেয়েছেন শরীফুল ইসলাম। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জানান, শনিবারের হট্টগোল ছাড়াও আরও অনেক কারণ আছে এর পেছনে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কিশোরগঞ্জ শাখায় বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে সভাপতি মো. শরীফুল ইসলামকে অব্যাহতির পেছনে কেবল পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেয়া আর তার সঙ্গে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের হাতাহাতিই কারণ কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

শনিবার সন্ধ্যায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ অব্যাহতি দেয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শরীফুলের কর্মকাণ্ডে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

আগের দিন বিকেলে জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে বর্ধিত সভা ডাকা হয়। সেখানে দুই পক্ষের স্লোগান দেয়াকে কেন্দ্র করে সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদের ওপর হামলা করে সভাপতি শরীফুল ইসলামের অনুসারীরা। এতে ওই সভা পণ্ড হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়ে মঞ্চ ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা।

শামীম ও তার অনুসারীরা বাইরে এলে সেখানেও হামলা চালানো হয়। এ সময় সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

যেভাবে হাতাহাতি শুরু

বর্ধিত সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল ৪ টায়। সভাপতি শরীফুল ইসলাম আসতে দেরি করায় শুরু হয় আধাঘণ্টা পরে। তিনি এসেই স্বাগত বক্তব্য দিয়ে সভা পরিচালনার জন্য সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদের নাম ঘোষণা করেন।

বর্ধিত সভার শুরুতেই জেলার সাংগঠনিক প্রস্তাব পেশ করছিলেন শামীম। সাংগঠনিক প্রস্তাব পেশ করার আগেই শরীফুল ইসলাম তাকে ব্যক্তিগতভাবে বলে রেখেছিলেন কমিটি সংক্রান্ত সমস্যাগুলো যেন উপস্থাপন করা না হয়। সদর উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামও যেন ঘোষণা করা না হয় এ বিষয়ে শরীফুলের সমর্থক তন্ময় নিষেধ করে রেখেছিলেন।

কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা প্রথমেই জানতে চান কোন কোন এলাকায় কমিটি আছে, কোথায় কমিটি নাই, কোথায় কী সমস্যা- এ বিষয়গুলো যেন সাংগঠনিক প্রস্তাবে অবগত করা হয়।

এ সময় শামীম আহমেদ বলেন, ‘২০১৬ সালে জেলা কমিটি হয়েছে। অথচ আমরা এখনও কোথাও একটি উপজেলা কমিটি করতে পারিনি। আমাদের কমিটি হওয়ার আগে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা এবং পৌর কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। আর কোথাও কোনো কমিটি নাই।’ এ সময় শরীফুলের সমর্থক তন্ময় এবং প্রচার সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নিলয় বাধা দেন। তিনি বলেন, ‘সদরের কমিটি অবৈধ। আপনি তাদের নাম আনলেন কেন?’

তর্ক শুরু হলে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। খানিকটা পরেই কটিয়াদী এবং তাড়াইলে কমিটি নাই বলার পর দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকেন দুই জন। তারা দাবি করেন সেখানে কমিটি আছে এবং তারা সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা।

এ সময় শামীম বলেন, ‘আমার জানামতে তাড়াইল বা কটিয়াদীতে তো কমিটি নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমি জানিও না, সভাপতি সাহেব তার পছন্দমতো একক সাক্ষরে কোথাও কোনো কমিটি দিয়ে থাকলে সেটা তো বৈধ হতে পারে না। গঠনতন্ত্রে এমন সিস্টেমের কথা কোথাও উল্লেখ নেই।’

এ কথা বলতেই শামীমের উপর চড়াও হয় সভাপতি শরীফুলের অনুসারীরা।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা মিলনায়তন ত্যাগ করেন। তখন শরীফুল ও তার অনুসারীরাও বের হয়ে যায়।

বাইরে গিয়ে শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মূল ফটকে আবার হামলা প্রস্তুতি নিতে থাকে সভাপতির অনুসারীরা। শামীমও তার লোকজন নিয়ে বের হতেই শরীফুলের উপস্থিতিতে অনুসারীরা হামলা করে তার উপর। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মূল সমস্যা গ্রুপিং

শরীফুল ইসলাম মূলত রাজনীতি করেন সৈয়দ পরিবারের। তিনি বর্তমানে কিশোরগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি সমর্থক। অপরদিকে শামীম রাজনীতি করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুনের।

২০১৬ সালের ১৪ জুলাই শরীফুল ইসলাম শরীফকে সভাপতি ও শামীম আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১২ সদস্যদের কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় কমিটি। ছয় বছরে কোনো উপজেলা কমিটি তো দূরের কথা একটা বর্ধিত সভা পর্যন্ত করতে পারেননি তারা।

ছয় বছরে একটি কমিটিও গঠন করতে না পারার কারণ সম্পর্কে শামীম বলেন, ‘যেখানেই একটা কমিটি গঠনের বিষয়ে কথা বলেছি, সেখানেই সভাপতি সাহেব তার ব্যক্তিগত লোকের চিন্তা করেন। আর না হলে অনুপ্রবেশকারীদের নাম প্রস্তাব করেন। অথবা নিজেই পুরো কমিটি প্রস্তুত করে আমাকে সই করতে বলেন। কারও বিষয়ে কোনো আপত্তি তুললেই সমস্যা। তার ইচ্ছে সবগুলো কমিটি তিনিই করবেন, আমি শুধু সই করব।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন উপজেলা নেতা জানান, উপজেলা কমিটিগুলো না হওয়ার পিছনে মূল সমস্যা জেলা কমিটির গ্রুপিং। আর এই গ্রুপিংয়ের মূল পয়েন্ট কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সদর উপজেলা ও হোসেনপুর উপজেলা। এই দুই উপজেলাতে সভাপতি ও চান তার নিজের লোক, সম্পাদকও চান তার নিজের লোক। দুই জনেরই মূল উদ্দেশ্যে নিজেদের নেতার পছন্দের লোককে নেতা বানাতে। আর এই দুই উপজেলাতে কমিটি হচ্ছে না বলেই বাকি ১০ উপজেলার কমিটিও আটকে আছে।

ছয় বছরে ছয়দিনও এক সঙ্গে থাকেননি তারা

জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, ২০১৬ সালে কমিটি ঘোষণার পর কিছুদিন এক সঙ্গে মিলেমিশে থাকলেও ছয়টি কর্মসূচিও একসঙ্গে পালন করেননি জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

তিনি জানান, শরীফুল ইসলামের চেয়ে বয়সে অনেক ছোট শামীম আহমেদ। এ কারণে শামীমকে কখনও মেনে নেননি তিনি। এ ক্ষেত্রে তার মধ্যে খানিকটা অহংকার কাজ করত।

তিনি বলেন, ‘সভাপতির ভেতরে লালন করা এই অহংকারের কারণে আর কর্মীদের মারমুখি আচরণের কারণে আজ পদ থেকে অব্যাহতি পেতে হলো।’

নিউজবাংলাকে শামীম বলেন, ‘তিনি (শরীফ) টাকার বিনিময়ে একক স্বাক্ষরে কিশোরগঞ্জ সদর, কটিয়াদী ও তাড়াইল উপজেলার কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন, যা গঠনতন্ত্র বহির্ভূত। সাংগঠনিক প্রস্তাব পেশ করার সময় এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে সভাপতি আমাকে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু আমি সত্য প্রকাশ করে বক্তব্য শুরু করলে তারা আমার ওপর হামলা চালায়।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শরীফুল বলেন, ‘আমি স্বাগত বক্তব্য দিয়ে আসরের নামাজ পড়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মসজিদে চলে যাই। নামাজ শেষে ফেরার সময় দেখি সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য নিয়ে পাল্টাপাল্টি শুরু হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘শামীম আমার ছোট ভাই। তার ওপর হামলা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।’

এ বিভাগের আরো খবর