খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ নই, তবে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেছেন, আগে মানুষ এক দিন-দুই দিন খেতে পেত না। এখন দিনে অন্তত দুই মিল খেতে পারে।
রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আদর্শ প্রাণিসেবার উদ্যোগে ‘প্রাণিসম্পদ খাতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি ও প্রাণিবিমা সম্প্রসারণে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব প্রযুক্তির ভূমিকা: আমাদের অবস্থান ও করণীয়’ সম্পর্কিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে এখনও ২০ ভাগ মানুষ বা তারও বেশি দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। বাংলাদেশে জনসংখ্যার হিসাবে এটি প্রায় তিন কোটি। আগে মাথাপিছু জমি ছিল ২৮ ডেসিমেল, এখন সেটি কমে ১০ ডেসিমেল হয়েছে।’
তার পরও দেশে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ডিমের উৎপাদন বেড়েছে। দুধের উৎপাদন ২০-৩০ লাখ টন ছিল, সেটা বেড়ে ১ কোটি ৩০ লাখ টন হয়েছে। মাংসের উৎপাদন এখন ৯০ লাখ টন।
‘আমি মনে করি, মাছ-মাংসে আমাদের যে প্রযুক্তি রয়েছে, অবকাঠামো রয়েছে, সেগুলো যদি আমরা বাড়াতে পারি তাহলে মাংসে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হব। আমরা কিন্তু দুধে-মাংসে এখনও স্বয়ংসম্পূর্ণ না।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা যদি টেকসই উন্নয়ন করতে চাই, অর্থনীতির কোন কোন খাতে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে, সেটি নির্ধারণ করতে হবে। প্রাণিসম্পদের অবদান জিডিপিতে ২ শতাংশ হলেও এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এই খাতের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। স্কিলড লেবার দিয়ে যদি লাইভস্টক খাতটা পরিচালনা করা যায়, এই খাত অনেক দূর এগিয়ে যাবে৷’
বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে এসডিজি সূচকের সবগুলো শর্ত বাংলাদেশ ২০১৫ সালের মধ্যে অর্জন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাথাপিছু আয় ৩০ সালের মধ্যে ৫ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আপনারা ইন্স্যুরেন্সের কথা বলছেন। একটা গাভীর দাম এখন ৮-১০ লাখ টাকা। এ ছাড়া একটা গাভী কতটা ভালনারেবল সেটা বিবেচনায় নিলে অবশ্যই এটি গুরুত্বপূর্ণ। ইন্স্যুরেন্স কতটা ক্লায়েন্টবান্ধব, সেটিও আমাদের বিবেচনা করতে হবে৷’
খাদ্যে ভর্তুকি দেয়ার প্রশ্নে আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা বলেন, ‘দেশে সারের দাম ইতিহাসে এখন সর্বনিম্ন আছে। বিএনপির আমলে ৯২ টাকার সার এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা ১৬ টাকায় নিয়ে এসেছি। এই যে খাদ্যে এত উন্নতি, এটি আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ফলেই সম্ভব হয়েছে৷
‘আজকে খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ে কথা হচ্ছে, এই যে খাদ্যের এত দাম, আমি যদি সারেই ভর্তুকি দিই, তাহলে খাদ্যে ভর্তুকি আমি কেন দেব?’
বর্তমানে বাজারে ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে, এই দাম খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কমে যাবে বলে জানান মন্ত্রী।
আলোচনা সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, ‘২০৪১ সালে আমাদের দেশ উন্নত হবে। যার একটি গরু আছে, সেও উন্নত দেশের নাগরিক হবে। কৃষি উদ্যোক্তাদের কৃষি ঋণ পরিশোধে এটিচিউড চেঞ্জ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিমার ব্যাপারে আমরা সচেতন নই। বিমাবান্ধব হতে হবে। এ দেশে ৮১টি বিমা কোম্পানি আছে। কিন্তু সে অনুপাতে পলিসি গ্রহণ করছেন না মানুষ। জিডিপিতে বিমার অবদান মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। আমরা এই খাতে পিছিয়ে আছি।’
ভারতে রাষ্ট্রীয় প্রিমিয়াম বিমা যোজনে, সেখানে প্রাদেশিক সরকার ১ শতাংশ, রাষ্ট্রীয় সরকার ১ শতাংশ, ১ শতাংশ কৃষক দেয়। ফলে তাদের বাধ্যতামূলক বিমার আওতায় নিয়ে এসেছে বলে জানান তিনি।
আমাদের বিমা করার হার খুবই কম জানিয়ে এটি বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
দুটি সেশনে বিভক্ত আলোচনা সভার প্রথম সেশনে আলোচনা করেন ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী, ড. মো. গোলাম রাব্বানী, ইমপ্যাক্ট বিজনেসের নির্বাহী সহকারী চেয়ারম্যান শুভাশীষ বড়ুয়া, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কায়সার হামিদ, ফিনটেক ও ডিজিটাল পেমেন্ট, বেসিসের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান এ কে এম ফাহিম মাশরুর।