বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার অন্যতম আসামির জেলে মৃত্যু

  •    
  • ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৩:২২

চট্টগ্রাম কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ বলেন, ‘শুক্রবার মধ্যরাতে কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি দীর্ঘদিন ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তাকে কয়েক দিন আগে চট্টগ্রাম কারাগারে আনা হয়।’

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মৌলভি জকোরিয়া চট্টগ্রাম কারাগারে মারা গেছেন।

শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

৫৩ বছর বয়সী মৌলভি জকোরিয়া উখিয়ার কুতুপাংয়ের ক্যাম্প-১ ইস্টের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন তিনি।

কক্সবাজার কারাগারের কর্মকর্তা জেলার কামাল উদ্দিন বলেন, ‘জকোরিয়া মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার ১৪ নম্বর আসামি। তাকে কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।’

চট্টগ্রাম কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ বলেন, ‘শুক্রবার মধ্যরাতে কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি দীর্ঘদিন ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তাকে কয়েক দিন আগে চট্টগ্রাম কারাগারে আনা হয়।’

এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার আসামিদের বিচার শুরু হয়। ১৩ জুন ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ।

রোববার দুপুরে সেই চার্জশিট আমলে নিয়ে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল।

মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বড় ভূমিকা ছিল তার। ঘটনার পর ১৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মধ্যে ৬ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

সাড়ে আট মাস তদন্তের পর ওই দিন দুপুরে ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট আদালতের ডকেট শাখায় জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার ওসি তদন্ত গাজী সালাউদ্দিন।

২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ায় লাম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুর্বৃত্তরা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় তার ভাই হাবিবুল্লাহ হত্যা মামলা করেন। তাতে অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি হামলাকারী কয়েকজনকে চেনার কথা সাংবাদিকদের জানালেও মামলায় আসামির তালিকায় কারও নাম দেয়া হয়নি।

মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গার অধিকাংশই রয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রয় শিবিরে। কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে সম্প্রতি নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থাপিত অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে সরিয়ে নেয়া হয়।

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমার চার বছর আগে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করলেও এখনও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি।

রোহিঙ্গাদের 'কণ্ঠস্বর’ হিসেবে পরিচিত মুহিবুল্লাহ ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় এসেছিলেন। জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্বও করেছিলেন তিনি।

মুহিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ, ইউএনএইচসিআর, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

কে এই মুহিবুল্লাহ

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ ১৯৯২ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তখন থেকেই টেকনাফ অঞ্চলে অবস্থান নিয়ে নানাভাবে রোহিঙ্গাদের সংগঠিত করতে থাকেন।

মুহিবুল্লাহ ২০০০ সালের শুরুতে ১৫ জন সদস্য নিয়ে গড়ে তোলেন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানরাইটস’ নামের সংগঠন, যা এআরএসপিএইচ নামে বেশি পরিচিত। অন্য দেশের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশি মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গেও গড়ে তোলেন গভীর যোগাযোগ। ধীরে ধীরে মুহিবুল্লাহ হয়ে ওঠেন প্রধান পাঁচ রোহিঙ্গা নেতার একজন।

বিদেশিদের কাছে আগে থেকে পরিচিত হলেও ২০১৭ সালে তিনি বনে যান রোহিঙ্গাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সে সময় কয়েক লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে তাদের যোগাযোগে ভূমিকা রাখতে থাকেন নিয়মিত।

মুহিবুল্লাহ কয়েক দফায় সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন। তার উত্থানে সহায়ক হয় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ২০১৮ সালে ইউএনএইচসিআরকে সংযুক্ত করার ঘটনা।

ইংরেজি ভাষা জানা ও রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের দক্ষতা মুহিবুল্লাহকে ধীরে ধীরে বিদেশিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিদেশি প্রতিনিধিরা যখনই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছেন, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি হিসেবে মুহিবুল্লাহ যোগ হয়েছেন। তার সঙ্গীদেরও প্রতিনিধি করেন।

মূলত বিদেশি সংস্থা ও সংগঠনগুলো দেশে ফেরার বিষয়ে যখন রোহিঙ্গাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছে তখনই মুহিবুল্লাহর সংগঠন এআরএসপিএইচ ভিন্ন কাজ করেছে। তারা ক্যাম্পে নানা প্রচারণা চালিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করেন এবং প্রত্যাবাসনে বাধার চেষ্টা চালিয়ে যান। কয়েক দফায় বিক্ষোভের আয়োজন করেন।

মুহিবুল্লাহ একপর্যায়ে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিবকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংলাপের প্রস্তাব দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ১৭ দেশের যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৭ প্রতিনিধি সাক্ষাৎ করেছিলেন, সেখানেও যোগ দিয়েছিলেন মুহিবুল্লাহ।

এ বিভাগের আরো খবর