ভারত, নেপাল, ভুটানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণভাবে মিয়ানমার ইস্যু সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আন্তর্জাতিক মৎস্য সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারও আমাদের প্রতিবেশী। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে একটা সমাধান বের করা হবে। একই সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করতে হবে, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। সুতরাং এটা কোনো বিবাদের বিষয় নয়, এটা সমাধানের বিষয়।’
এর আগে সিলেটের একটি কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মৎস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার, ভারতের সহকারী হাইকমিশনার নীরাজ কুমার জয়সওয়ালসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও গবেষণকরা।
সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কোরিয়াসহ ১০টি দেশ থেকে তিন শতাধিক গবেষক অংশ নেন।
তারও আগে বিকেলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ আয়োজিত দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, ‘এ দেশে অসাম্য আছে, বৈষম্য আছে, অবিচার আছে, বিধিবদ্ধ অন্যায় আছে। আইনে স্থাপিত ও প্রতিষ্ঠিত অন্যায় এই দেশে আছে। যেগুলো মানুষকে দীর্ঘদিন দারিদ্র্যের মাঝে রাখতে কাজ করে।
‘গ্রামাঞ্চলে বিল থাকে, সেখানে মাছও থাকে। আবহমান কাল ধরে গ্রামের মানুষ সেগুলো ধরে খায়। কিন্তু এখন আইন করে এসব জায়গা ইজারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাদের পুঁজি আছে, টাকা আছে তারা ইজারা নেয়। ইজারাদার সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দিয়ে নিজে খায়। এটা বিধিবদ্ধভাবে ও আইনিভাবে করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘এই বিলগুলো থেকে দরিদ্র মানুষগুলো পরিশ্রম করে মাছ ধরত এবং সেই মাছ থেকে একটু প্রাকৃতিক আমিষ পেত। এই সুবিধা থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।’
‘৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক ওই সম্মেলনে মন্ত্রী আরও বলেন, দেশের অর্জন ও সম্ভাবনা অনেক। তবে অনেক চ্যালেঞ্জও আছে।
চ্যালেঞ্জের দিকটি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘সবার আগে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দরকার। যেটা জীবনের জন্য এবং বাঁচার জন্য খুব প্রয়োজন। এটার বিকল্প নেই। কবিতা লিখে, গান লিখে, ছবি এঁকে পেট ভরবে না। অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ, আউটপুট ও উৎপাদনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের ৫০ বছরে অর্থনৈতিক পরিবর্তন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এবং পরবর্তী সময়েও এটাই বড় চ্যালেঞ্জ।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমদের দরকার ঐক্যবদ্ধভাবে চলা। সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য পারস্পরিক সহযোগিতারও প্রয়োজন রয়েছে। জীবনের শান্তির জন্য এটা দরকার। একই সঙ্গে পরিবেশ বিনাশী ও বিধ্বংসী কোনো কাজ আমরা করব না।’
সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সিলেট নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস।
সম্মেলনের সারাংশ উপস্থাপন করেন পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জায়েদা শারমিন। সমাপনী বক্তব্য দেন সম্মেলনের আহ্বায়ক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক দিলারা রহমান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ফারজানা সিদ্দীকা ও পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক জহিরুল হক শাকিল।