রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে দেখা দিয়েছে গ্যাসের তীব্র সংকট। বেশ কিছুদিন ধরে চলা এ সংকট দিন দিন আরও তীব্র হচ্ছে। এই সংকট সহসাই কাটবে, এমন আশ্বাস দিতে পারেনি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
সকাল ৮টার আগেই গ্যাস চলে যায়, আসে সন্ধ্যার পর। কোনো কোনো এলাকায় দিনভর গ্যাসের সরবরাহ মিলছে না। এ অবস্থায় অনেকেই সিলিন্ডারজাত এলপিজি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে এই বাড়তি খরচ তাদের জন্য গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা গিয়েছে।
রাজধানীতে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় রাজধানীর বাসাবাড়িতে গ্যাসের এই সংকট দেখা দিয়েছে। সরবরাহ না বাড়লে এই সংকট সহসা দূর হচ্ছে না।
রাজধানীর মোহাম্মাদপুরের কাদিরাবাদ হাউজিংয়ের ৭ নম্বর রোডের বাসিন্দা মারিয়া মীম গ্যাস সংকটে নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরেন নিউজবাংলার কাছে। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে সকাল ৮টার আগেই গ্যাস চলে যায়, সন্ধ্যার পর চুলায় গ্যাসের সরবরাহ পাওয়া যায়। কখনও কখনও রাত ১০টার পর গ্যাস আসে। তা-ও আবার চাপ কম থাকায় চুলা জ্বলে টিম টিম করে।’
একই অভিযোগ আদাবরের বাসিন্দা সাকিব হাসানের। তিনি বলেন, ‘আমাদের আদাবর পিসি কালচার হাউজিংয়ে দিনের বেশির ভাগ সময় গ্যাস থাকে না। রান্নার কাজটা সারতে হয় ভোরে, নয়তো রাতে। স্বামী-স্ত্রী দুজনই কর্মজীবী হওয়ায় দিনে রান্নার আয়োজন তেমন একটা থাকে না। তবে সমস্যা হয় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। সে জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার কিনে নিয়েছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহাম্মাদপুরের মতোই মিরপুর, বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, মালিবাগ, শান্তিবাগ, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকা, উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা গ্যাস সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
মিরপুরের শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা মৌসুমী ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই এলাকায় গ্যাস সংকট চলছে। সকালে কিছুটা গ্যাস পাওয়া গেলেও দুপুরে চুলা জ্বলে না। কোনো কোনো দিন সন্ধ্যার পরও থাকে একই অবস্থা। আবার গ্যাস থাকলেও চাপ খুবই কম থাকে, যা দিয়ে রান্না করা কঠিন হয়ে পড়ে।’
বাড্ডার বাসিন্দা সুমনা খাতুন বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ ধরে আমাদের এলাকায় গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। আগে সকাল ৯টা পর্যন্ত গ্যাস থাকত। এখন তা-ও মিলছে না। কয়েক দিন ধরে তো গ্যাসই পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে এলপিজি সিলিন্ডার কিনেছি। ওদিকে গ্যাসের বিল তো ঠিকই দিতে হচ্ছে। এতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
দক্ষিণ বনশ্রীর বাসিন্দা জয় জাকারিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয় যে শুধু শুধুই বাসায় গ্যাসের সংযোগ নিয়েছি। কারণ গ্যাস সংকটে সারা মাসই সিলিন্ডার গ্যাসে রান্নার কাজ করতে হচ্ছে। এমনিতেই বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়ে গেছে। তার ওপর সিলিন্ডারের পেছনে ব্যয় করতে হচ্ছে।
ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করে দেশের শীর্ষ গ্যাস বিতরণকারী সরকারি কোম্পানি তিতাস। তারা বলছে, গ্যাসের এই সংকট দুই-এক দিনে সমাধান হবে না। রাজধানীতে এখন দিনে ১৮০ থেকে ১৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ মিলছে ১৬০ কোটি ঘনফুটের মতো। গ্যাস সরবরাহ না বাড়লে এই সংকট থেকেই যাবে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (টিজিটিডিসিএল) পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী মোহাম্মাদ সেলিম মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পেট্রোবাংলা আমাদের যতটুকু গ্যাস দেয় আমরা ততটুকুই সাপ্লাই করি। তারা সাপ্লাই কম দেয়ায় আমরাও গ্রাহকদের কম সাপ্লাই দিচ্ছি। গ্যাস সাপ্লাই বাড়াতে আমরা ইতোমধ্যে পেট্রোবাংলাকে কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। তারা যখন এই সাপ্লাই বাড়াবে আমরাও গ্রাহকদের সাপ্লাই ঠিক রাখতে পারব।
‘তবে ঢাকার সব জায়গায় গ্যাসের সংকট আছে বিষয়টা তেমন নয়। কিছু কিছু জায়গায় সংকট আছে। আমি বলব, বেশির ভাগ জায়গায়ই গ্যাসের সরবরাহ ঠিক আছে।’
তিতাসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সরবরাহ কম থাকার পাশাপাশি আরেকটি কারণেও বাসাবাড়িতে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক জায়গায় আমরা একতলা বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দিয়েছিলাম। এখন সেখানে পাঁচ-ছয়তলা বাড়ি হয়ে গেছে। অনেক গলিতে আমরা হয়তো তিন-চারটি বাড়িতে সংযোগ দিয়েছিলাম। এখন সেই গলিতে ২০-২৫টি বাড়ি হয়ে গেছে। যেখানে কানেকশন হওয়ার কথা ১০টি, সেখানে হয়ে গেছে ৪০টি। এ কারণে ওই এলাকায় গ্যাসের প্রেসার কম থাকে।
‘সব মিলিয়ে এটুকু বলতে পারি, পেট্রোবাংলা যেদিন আমাদের চাহিদামতো গ্যাস দিতে পারবে, সেদিনই এই সংকট কেটে যাবে।’