চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলামের মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে তার বিজয় কামনা করে দলীয় নেতাদের সঙ্গে মোনাজাত করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
রেজিস্ট্রি ডাকে শনিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান এ নোটিশ পাঠান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রামের রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া না হলে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়, যেখানে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলামের মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে তার বিজয় কামনা করে দলীয় নেতাদের সঙ্গে মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এ সময় তিনি প্রার্থীকে পাশে বসিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বক্তৃতাও করেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার যেন আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়, সে জন্য বিএনপি-জামায়াতেরও দোয়া কামনা করেছেন।
এ কাজের মাধ্যমে রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১৬-এর ৭৯, ৮০ ও ৮১ বিধির লঙঘন করেছেন। এ বিধি লঙঘনের পরও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। এ অবস্থায় ১ থেকে ৪ নং নোটিশ গ্রহীতাকে অনুরোধ করা হচ্ছে, নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।
গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম শ খানেক নেতাকর্মী নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শফর আলী প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলামের বিজয় কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন। এতে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারকেও হাত তুলে অংশ নিতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে।
পরে জেলা প্রশাসক বক্তব্যে বলেন, ‘জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এ টি এম পেয়ারুল ইসলামের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করলাম। আজ যেন একটি সুযোগ পেয়েছি, এখানে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরের সব পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত আছেন, কিছু কথা বলি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা নস্যাৎ করতে দেশি-বিদেশি, আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র চলছে।
‘আপনারা জানেন, আড়াই বছরের মতো আমরা করোনায় পার করেছি, লকডাউন গেছে। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে সমস্ত বিশ্বে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। ইউরোপ-আমেরিকা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু আমাদের রপ্তানি তেমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আমাদের দেশের অর্থনীতিও এখনও সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এর পরও যারা সব সময় ইস্যু খোঁজে, তারা ইস্যু খুঁজবেই।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী বছর বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমি মনে করি, বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে এই নির্বাচনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। কারণ এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের পক্ষের শক্তির হাতে থাকবে নাকি স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির হাতে যাবে।
‘আমি মনে করি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে যদি থাকে, তাহলে আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ বলি, বিএনপি বলি, জামায়াত বলি, সবাই নিরাপদ থাকবে। আমি মনে করি, বিএনপি-জামায়াতেরও এখন দোয়া করা উচিত শেখ হাসিনা যেন আবার ক্ষমতায় আসেন।’