সীমান্তে উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কের মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষা দিল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের তিনটি বিদ্যালয়ের ৪১৬ শিক্ষার্থী।
সীমান্তবর্তী ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে তাদের পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও চলমান সীমান্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষা নেয়া হয়েছে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে।
শুক্রবার ঘুমধুমের কেন্দ্রটি কক্সবাজারে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় তুমব্রু সীমান্ত এলাকার তিনটি বিদ্যালয়ের ৪১৯ জন শিক্ষার্থীর কেন্দ্র ছিল। তার পরিবর্তে উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে এ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। ৪১৯ জনের মধ্যে তিনজন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল।
‘আমরা রাতেই প্রশাসনের নির্দেশনা পেয়ে এই কেন্দ্রে পরীক্ষার সব প্রস্তুতি নিয়েছি। শনিবার যথাসময়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে প্রবেশ করেছে। এখানে বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তারা। যে তিনজন অনুপস্থিত ছিল, তারা প্রথম পত্রের পরীক্ষাও দেয়নি।’
প্রায় এক মাস ধরে নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল, গোলাগুলিসহ নানা ভারী অস্ত্রের আওয়াজে এপারের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু ও বাইশপারী এলাকার মানুষ দিন কাটাচ্ছে আতঙ্কে।
বেশ কয়েকবার মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের পাহাড় থেকে ছোড়া মর্টার শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডেও এসে পড়েছে।
সবশেষ শুক্রবার রাতে তমব্রুর কোনারপাড়া সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক যুবক নিহত হন। আহত হন রোহিঙ্গা শিশুসহ ৫ জন।
এর আগে একই দিন দুপুরে এই সীমান্তেই হেডম্যানপাড়ার ৩৫ নম্বর পিলারের ৩০০ মিটার মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে অভ্যন্তরে মাইন বিস্ফোরণে আহত হন বাংলাদেশি এক যুবক।
গত ২৮ আগস্ট তমব্রু উত্তরপাড়ায় একটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ে। সেদিনই সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান চক্কর দিতে দেখা যায়।
এরপর ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া দুটি গোলা ঘুমধুম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় পড়ে। সেগুলো অবিস্ফোরিত থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এসব ঘটনায় আতঙ্কের মধ্যেই শুরু হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা। সীমান্ত এলাকার স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও রয়েছে দুশ্চিন্তায়।
পরিস্থিতি বিবেচনায় শুক্রবার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রটি সরিয়ে উখিয়ায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
জালিয়াপালং ইউনিয়নের কুতুপালংয়ের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের নির্দেশে এসব শিক্ষার্থীর সার্বিক নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে এই কেন্দ্রে আমরা পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করেছি।’
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘চার শতাধিক পরীক্ষার্থীকে দুইটি বাসে করে সীমান্ত এলাকা থেকে কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে আনা হয়েছে। তাদের আবার কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় পৌঁছে দেয়া হবে।’