বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিএনপিকে ভোটে আনতে এবার কোনো উদ্যোগ নেবে না আ.লীগ

  •    
  • ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১২:২২

ক্ষমতাসীন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান মনে করেন, বিএনপি গতবারের মতোই ভোটে আসবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব কৌশল থাকে। বিএনপি ও তাদের মিত্ররা নিশ্চয় সে রকম কোনো কৌশল আঁটছে। কেননা নির্বাচনে আসা ছাড়া বিএনপির কোনো বিকল্প নেই।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন না করলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়া বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে এবার সরকার বা আওয়ামী লীগের বিশেষ কোনো উদ্যোগ থাকবে না।

একই দাবি জানাতে থাকা বিএনপিকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আসতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বারবার সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির করা জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনাও হয়েছিল।

তবে সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, এমন অভিযোগ তুলে বিএনপি তার পুরোনো দাবিতে ফিরে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরাসরি বলছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আর ফেরানোর সুযোগ নেই।

মাস কয়েক আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একবার বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসার আহ্বানের কথা বলেছিলেন বটে, তবে এরপর এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আর কিছুই বলছে না।

তত্ত্বাবধায়কসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ফাইল ছবি

এর মধ্যে দুবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবির প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। দুবারই বলেছেন, কেউ ভোটে আসতে না চাইলে তার কিছু করার নেই।

সর্বশেষ ভারত সফর নিয়ে বিস্তারিত ডাকা সংবাদ সম্মেলনে গত ১৪ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা ইঙ্গিত দেন বিএনপিকে ভোটে আনতে বিশেষ কোনো উদ্যোগ বা চেষ্টা করা হবে না। তিনি বলেন, ‘সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক এটাই আমরা চাই। আর যদি কেউ না করে, সেটা যার যার দলের সিদ্ধান্ত। এর জন্য আমাদের সংবিধান তো আমরা বন্ধ করে রাখতে পারি না। সংবিধানের যে ধারা, সে অনুযায়ী গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত থাকবে।’

শেখ হাসিনা সেদিন ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে জটিলতার পর দুই বছরের ছদ্ম সেনা শাসনের বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। জরুরি অবস্থা জারির পর দুই বছর যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছিল, সেটি যে সেনা সমর্থিত, সেটি শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল এমন: ‘এখন যারা তত্ত্বাবধায়ক বলে চিৎকার করছে, তারা ওয়ান-ইলেভেনের কথা ভুলে গেছে? ২০০৭-এর কথা ভুলে গেছে? যে কী অবস্থাটা সৃষ্টি হয়েছিল?’

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। সংবিধানের বাইরে গিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করতে কোনা ছাড় দেয়া হবে না।

নেতারা জানান, বিএনপি যে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে, তাকে কথার কথা হিসেবেই দেখছেন তারা। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে আর সেই নির্বাচনের এক বছর পূর্তির পর ২০১৫ সালে সরকার পতন আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপি আন্দোলনে তৃতীয় দফায় এসে সফল হতে পারবে বলে মনে করেন না ক্ষমতাসীনরা।

আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিষয়টি নিয়ে মীমাংসা হয়েছে উচ্চ আদালতে। এরপর সংসদও সেই সরকার রাখতে একমত হয়নি। ফলে আইনতও এর সুযোগ নেই বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এই অবস্থায় তাদের দৃষ্টিতে ‘দুর্বল’ বিএনপিকে ছাড় দেয়ার কিছু নেই।

ক্ষমতাসীন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহল সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান মনে করেন, বিএনপি গতবারের মতোই ভোটে আসবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব কৌশল থাকে। বিএনপি ও তাদের মিত্ররা নিশ্চয় সে রকম কোনো কৌশল আঁটছে। কেননা নির্বাচনে আসা ছাড়া বিএনপির কোনো বিকল্প নেই।’

তিনি দাবি করেন, বিএনপির বড় বড় নেতা মনে করেন, তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত।

বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত ভোটে নাও আসে, তাহলেও কোনো সাংবিধানিক সংকটের আশঙ্কা করছে না আওয়ামী লীগ। তারা বলছে, ২০১৪ সালের নির্বাচন হয়েছে বিরোধীদের বর্জনের মুখে। সেই সরকার পাঁচ বছরের মেয়াদও শেষ করেছে। এরপর আরও একটি নির্বাচন হয়েছে, সেই সরকার এখন চলমান এবং মেয়াদ শেষ করার অপেক্ষায়। কাজেই বিএনপির না আসার ঘোষণাকে পাত্তা দেয়ার কিছু নেই।

ভোটে আনতে আগের উদ্যোগ

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশ নেয়ার জন্য ক্ষমতাসীনরা বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করতে একাধিক প্রস্তাব দেয়। এমনকি ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন করে তার বাসভবন গণভবনে এসে আলোচনার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। এরপরও প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানাভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছিল।

২০১৪ সালের নির্বাচন ঘিরে সহিংসতায় অংশ নেয় বিএনপি। ফাইল ছবি

সেই নির্বাচনের আগে যে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছিল, সেই সরকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় বিএনপিকে দেয়ার প্রস্তাবও এসেছিল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।

২০১৮ সালে বিএনপি তার ২০ দলীয় জোটের পাশাপাশি নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে যখন আগাচ্ছিল, সে সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের আহ্বান আর প্রত্যাখ্যান করেনি। অন্য সব দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে গণভবনে যায় ঐক্যফ্রন্ট নেতারাও।

এবার কোনো প্রস্তাব নয়

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ মনে করছেন, এবার আর বিএনপিকে প্রস্তাব দিয়ে নির্বাচনে আনতে হবে না। দলটি নিজের প্রয়োজনেই নির্বাচনে আসবে।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেয়া যেমন আওয়ামী লীগের অধিকার, তেমনি বিএনপিরও। সেখানে আওয়ামী লীগকে কেন বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে উদ্যোগ নিতে হবে?

ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কোনো ভূমিকা থাকবে কি না জানতে চাইলেও ‘না’ বোধক জবাব দেন তিনি। বলেন, ‘সরকার আর দল আলাদা বিষয়। নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। আর সরকার সে সময় রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, কে নির্বাচনে আসল না আসল, সেটা আওয়ামী লীগের বিষয় না।’

তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে জটিলতা বিএনপির আমলে

১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরের বছরের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। ১৯৯৪ সালে ঢাকার মিরপুর ও মাগুরায় দুটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ ওঠার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামে আওয়ামী লীগসহ সে সময়ের বিরোধী দলগুলো।

আন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচন হয়। তাতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জিতে এসেও বিএনপি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি। একপর্যায়ে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা করে আবার জাতীয় নির্বাচন দেয়।

তখন সিদ্ধান্ত হয়, সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান। তিনি রাজি না হলে সব দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে একজন হবেন এই সরকারের প্রধান। আর আলোচনায় কাউকে পাওয়া না গেলে হবেন রাষ্ট্রপতি।

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সেই ভোটে জিতে ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো সরকার পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ২০০১ সালে।

ওই বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে জিতে বিএনপি-জামায়াত জোট আসে ক্ষমতায়। তবে সেই সরকারের আমলে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বাড়ানো নিয়ে তৈরি হয় রাজনৈতিক বিরোধ।

২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার কথা হয় অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের। তিনি এককালে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ফলে তাকে মেনে নিতে রাজি ছিল না আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ অভিযোগ করতে থাকে, বিএনপি তার সাবেক নেতাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করতে গিয়ে বিচারপতিদের অবসরের বয়স বাড়িয়েছিল।

আন্দোলনের একপর্যায়ে কে এম হাসান জানান, তিনি এই পদের জন্য আগ্রহী নন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের পদে কে আসবেন, এ নিয়ে বিরোধের মীমাংসা না হওয়ার পর বিএনপির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের ওপর বর্তায় সেই দায়িত্ব।

ইয়াজউদ্দিনের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট যায় আন্দোলনে। কিন্তু একবার পিছিয়ে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়।

একতরফা নির্বাচনের দিকে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন ভোটের ১১ দিন আগে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। ইয়াজউদ্দিন আহমেদ জরুরি অবস্থা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের পদ ছেড়ে দেন। দায়িত্ব নেন ফখরুদ্দীন আহমেদ।

২০০৭ সালে রাজনৈতিক বিরোধের মধ্যে ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ জরুরি অবস্থা জারি করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ফখরুদ্দীন আহমেদ। এই সরকারের মেয়াদ ৯০ দিন হলেও তারা থাকে প্রায় দুই বছর। ফাইল ছবি

২০০৭ সালে রাজনৈতিক বিরোধের মধ্যে ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ জরুরি অবস্থা জারি করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ফখরুদ্দীন আহমেদ। এই সরকারের মেয়াদ ৯০ দিন হলেও তারা থাকে প্রায় দুই বছর।

এই সরকারের আমলে প্রথমে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং পরে গ্রেপ্তার হন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গ্রেপ্তার হন খালেদাপুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানও। তারেককে আটক করে নির্যাতনের অভিযোগ এখনও করে থাকে বিএনপি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা দুর্নীতির দুটি মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার ১৭ বছরের সাজা হয়েছে, অর্থ পাচার মামলায় সাত বছরের সাজা ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে তারেক রহমানের।

সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ছিল ৯০ দিন। তবে ফখরুদ্দীনের সরকার দায়িত্ব পালন করে দুই বছর। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর যে ভোট হয়, তাতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে বলতে গেলে উড়িয়ে দেয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট।

এরপর থেকে রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান নড়বড়ে হয়।

এ বিভাগের আরো খবর