ভাদ্র মাসের শেষ সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপে সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি হচ্ছে পঞ্চগড়সহ উত্তরের জেলাগুলোতে। টানা বৃষ্টিতে স্বাভাবিক জনজীবনে কিছুটা ছন্দঃপতন হলেও আশার আলো দেখা দিয়েছে কৃষকের মনে।
শেষ বর্ষার বৃষ্টির পানিতে কচি আমন চারা বেড়ে উঠছে। কিছুদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিতে জমিতে পানি লেগে থাকায় গাঢ় সবুজ রং ধারণ করেছে আমনের ক্ষেত। সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির নিয়মেই গাছ থেকে শীষ বের হবে আর কয়েক দিন পর। এরই মাঝে দিগন্তজুড়ে সবুজ ক্ষেতে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন।
এ মৌসুমে আমন চাষে ধকল গেছে কৃষকের। আমন চারা রোপণের শুরুতে বৃষ্টির অভাবে সেচের পানি দিয়ে জমি চাষ আর সার সংকটের কারণে অতিরিক্ত দামে সার প্রয়োগের কারণে এবার খরচ বেড়েছে ধান চাষে। মৌসুমের মাঝামাঝি এসে আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।
পঞ্চগড়সহ আশপাশের জেলাগুলোর কৃষকদের প্রাণ প্রকৃতিনির্ভর আমন ধান। তুলনামূলকভাবে উঁচু জমি এবং মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি হওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষকদের একমাত্র ভরসা বৃষ্টি। এই আমন ধান কৃষকের সারা বছরের খাবারসহ পরিবারের খরচের জোগান দেয়।
গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় কৃষকরা এবার আগেভাগেই বীজতলায় আমন চারা বপন করেছেন। কিন্তু বিলম্বে বৃষ্টিপাত হওয়ায় কচি আমন চারা বীজতলাতেই নষ্ট হয়ে যায়। অনেকে জমিতে সেচ দিয়ে আমন চারা রোপণ করেন। তবে আগস্টের শুরু থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা পুরোদমে জমিতে আমন চারা লাগানোর কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে আমন চারা রোপণের কাজ শেষ করার পর চলছে আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগসহ পরিচর্যার কাজ। বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে আছে। এমন আবহাওয়া আর তিন থেকে চার সপ্তাহ বিরাজ করলে বাম্পার ফলনের সঙ্গে হাসি ফুটবে কৃষকের মুখে।
পঞ্চগড় জেলা সদর ইউনিয়নের ডুডুমারী এলাকার কৃষক আফাজুল ইসলাম জানান, ‘এবার আমি ১৫ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছি। গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে পরিমিত বৃষ্টি না হওয়ায় এবার আগেভাগেই বীজতলায় চারা প্রস্তুত করি। শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিয়ে জমিতে চারা লাগিয়েছি। নির্ধারিত মূল্যের অনেক বেশি দামে বাজার থেকে সার কিনে জমিতে দিতে হয়েছে। এতে করে খরচের পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।
‘এখন জমিতে পানি জমেছে। মাঝেমধ্যে বৃষ্টিও হচ্ছে। আর দুই-তিন সপ্তাহ এমন আবহাওয়া বিরাজ করলে এবার বেশি আমন ধান ঘরে তুলতে পারব। তবে ধান ঘরে আনার পর যদি সঠিক মূল্য না পাই, তাহলে আমরা মহাবিপদে পড়ে যাব।’
আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর এলাকার চাষি আজাহার আলী বলেন, ‘প্রথম দিকে বৃষ্টিপাত কম হলেও শেষ পর্যায়ে পরিমিত বৃষ্টিপাতের কারণে এখন পর্যন্ত আমন ধানের ভালো ফলন আশা করা যায়। অতিরিক্ত দরে সার কীটনাশক কিনতে হয়েছে। ধানের বাজার দর ভাল থাকলে চাষিরা অতিরিক্ত খরচ পুষিয়ে নিতে পারবে।’
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রথম দিকে সারের সংকট থাকায় কৃষকরা চাহিদামতো সার পায়নি, বর্তমানে সমন্বিত প্রচেষ্টায় চাষিদের সার সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে।’
চলতি আমন মৌসুমে পঞ্চগড় জেলায় ১ লাখ ১০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে মৌসুমের শেষে বৃষ্টিতে শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ৩০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ হেক্টর বেশি। এতে করে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও অনেক বেশি হবে।