বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘এনা বাসের গতি থাকে নিয়ন্ত্রণে’

  •    
  • ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৮:১৯

এনা পরিবহনের বাস নিয়ে বরাবর যে প্রচার আছে, সেটা হলো এর চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। এ কারণে ঘটে দুর্ঘটনা। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে নানা সমালোচনাও হয়। এই সমালোচনাকে বিবেচনায় নিয়ে বাস কোম্পানিটি গতি কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।

সেবার মান ভালো, ভাড়া কম বা অন্য বিশেষ কোনো সুবিধার কথা বলে না, বাস মালিকদের নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহর মালিকানাধীন এনা পরিবহন যাত্রীদের প্রলুব্ধ করতে চাইছে এই বলে যে, তাদের গাড়ি অতিরিক্ত গতিতে চলে না।

এনার ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে জানানো হয়েছে, তাদের বাসগুলো যেন কোনোভাবেই সরকার নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি গতিতে চলে না। ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এই পোস্ট দেয়ার পর শত শত মানুষ হাহা রিঅ্যাক্ট দিয়ে এনার বাসগুলোর বেপরোয়া গতি নিয়ে একের পর এক ট্রোল করে পোস্ট দিচ্ছে।

এনা পরিবহনের শক্তি বোঝাতে কেন এই প্রচার, প্রশ্ন ছিল পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক আতিকুল আলম আতিকের কাছে। জবাবে তিনি সরাসরি সুস্পষ্ট জবাব দেননি। বলেন, ‘আমরা জিপিএস ট্র্যাকিং করিয়েছি। খুলনা ও বৃহত্তর সিলেট রুট দিয়ে শুরু করেছি। আমাদের দেড় শ গাড়িতে ট্র্যাকিং লাগিয়েছি। গাড়ি কত কিলোমিটার চলে সেটা আমরা অফিসে বসে দেখতে পারি। আগে এসি গাড়িতে এই ব্যবস্থা ছিল, এখন নন এসি বাসেও এই ব্যবস্থা নিয়ে এসেছি।’

‘জিপিএস ট্র্যাকারের পরে থেকে আমাদের বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে নাই, নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। এটা অনেক বড় বিষয়।’

এনা পরিবহনের বাস নিয়ে বরাবর যে প্রচার আছে, সেটা হলো এর চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। এ কারণে ঘটে দুর্ঘটনা। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে নানা সমালোচনাও হয়।

পরিবহন কোম্পানিটির মহাব্যবস্থাপকের কথায় এটা স্পষ্ট যে, তারা এই সমালোচনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। এখন নিজেদের সংশোধন করতে চাইছেন।

জিপিএস ট্র্যাকার বসিয়ে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ কীভাবে সম্ভব- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সরকারের নিয়ম সর্বোচ্চ গতি ৮০ কিলোমিটার। কেউ ৮০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চললে আমরা তাকে ফোন করে তাকে কমাতে বলতেছি।

‘এতদিন তো তারা তাদের মন মতো চালিয়েছে। তবে গত ২০ দিনে অনেক কমেছে গতি। আগে প্রত্যেকটা গাড়িতে ওভার স্পিড পাওয়া যেত, এখন ৫০ শতাংশের নিচে নেমে চলে এসেছে। আর আমাদের নিয়ে এমনিতেই একটু মাতামাতি বেশি। আগে যে দুর্ঘটনা হয়েছে সেই বদনাম তো এখন দিতে পারেবেন না। গত ছয় মাসে আমাদের দুর্ঘটনার রেজাল্ট খুব ভালো।’

এই পোস্ট দিয়ে সমালোচনার ‍মুখে পড়েছে এনা পরিবহন।

এভাবে কি গতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব?

বাসে জিপিএস ট্র্যাকার বসিয়ে গতি নিয়ন্ত্রণের যে কথা এনার মহাব্যবস্থাপক বলছেন, সেটি কি আসলে কার্যকর?-প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামানের কাছে।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জিপিএস ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে বাসের গতি পর্যবেক্ষণ করা। শুধু গতি নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করছে না। আমাদের চালকরা যেখানে সেখানে বাস থামায়। জিপিএস ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী নিচ্ছে কি না সেটাও তদারকির আওতাভুক্ত হবে। এনা পরিবহনের পাশাপাশি অন্যদেরও এই পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত বলে আমি মনে করি। এটা সঠিকভাবে মনিটরিং করলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে।’

হাদিউজ্জামান বলেন, ‘এই উদ্যোগকে আরেকটু সামনে নিয়ে যাওয়া যায়। যিনি ডেস্কে বসে মনিটরে সব কিছু তদারকি করছেন, একসঙ্গে অনেক বাস খেয়াল রাখা সম্ভব হয় না, বা সব সময় মনিটরিং করা যায় না। তাই একটা ‘ওয়ার্নিং দেয়ার’ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন, যেটা খুবই সহজলভ্য। গতি বাড়লেই এই প্রযুক্তি সতর্কতা জানাবে। আবার ২০১৬ সালে হাইকোর্টের একটা নির্দেশনা ছিল যে, স্পিড গভর্নর লাগাতে হবে। সেটিও করা যায়।’

এনার পোস্টের নিচে ট্রোল

এনা ট্রান্সপোর্ট সেফ ড্রাইভিং ট্রেনিং প্রোগ্রাম নামে একটি পেজ থেকে ‘এনা বাসের গতি থাকে নিয়ন্ত্রণে’ এমন পোস্টটি দেয়া হয়। এতে লেখা হয়, ‘২৪ ঘণ্টা জিপিএস ট্র্যাকারের মাধ্যমে আমাদের বাসের গতি পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং অতিরিক্ত গতির ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক বাসের সুপারভাইজারের সাথে যোগাযোগ করে গতি নিয়ন্ত্রিত করা হয়।’

এই পোস্টের নিচে ২৩ ঘণ্টায় রিঅ্যাক্ট পড়ে এক হাজার ৬০০টি, এর মধ্যে এক হাজার ৫০০ টিই হা হা রিঅ্যাক্ট। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩৫৭টি কমেন্ট পড়েছে। এর সিংহভাগই অতীতে নানা দুর্ঘটনার ছবিসহ করা হয়েছে।

পোস্টটি তখন পর্যন্ত ৩৩৭টি শেয়ার হতে দেখা যায়, যারা নিজের ওয়ালে শেয়ার করছেন, সিংহভাগই ঠাট্টা মশকরা করছেন।

গাড়িচালকদের জন্য সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন দেয় এনা

শহিদুল ইসলাম সজিব নামে একজন কমেন্টে এনা পরিবহনের গতি ১০০ কিলোমিটারের একটি ছবি পোস্ট করেছেন। এছাড়া অনেকেই এনার গতি ১০২ পর্যন্ত চলে এমন কমেন্ট করেছেন।

নানা সময় এনা পরিবহনের বাসের ধাক্কায় প্রাণহানি, বেপরোয়া গতিতে চালাতে গিয়ে বাসের খাদে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে অহরহ। তবে এটা ঠিক যে ইদানীং এসব দুর্ঘটনার খবর কিছুটা কম আসছে।

সবশেষ গত ৪ মে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সফিপুর এলাকার উড়াল সড়কের পূর্ব পাশে সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে এনা পরিবহনের একটি বাস চাপা দিলে ৪ জন নিহত হয়।

গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার রশিদপুরে একটি পেট্রলপাম্পের কাছে এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেসের দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জন ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়।

এর মৃত্যুর ভিড়ে তুমুল আলোচিত ছিল অন্য একটি ঘটনা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় সড়ক বিভাজক ভেঙে রাস্তার অপর পাশ দিয়ে আসা একটি মাইক্রোবাসের ওপর উঠে যায় এনার একটি বাস। এতে অবশ্য কারও প্রাণহানি হয়নি।

পরে বাসটি পুলিশ জব্দ করলে এনা পরিবহন সেই মাইক্রো মালিকের সঙ্গে সমঝোতা করে ক্ষতিপূরণ দেয়। এরপর বাসটি ছাড়িয়ে নেয়া হয়।পাশাপাশি সড়ক বিভাজক ভাঙার জন্যও ক্ষতিপূরণ দেয় এনা।

এ বিভাগের আরো খবর