নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার আদায়সহ নানা দাবিতে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে রাজপথে সক্রিয় বিএনপি কর্মসূচি আরও বাড়ানোর পাশাপাশি কঠোর করার ইঙ্গিত দিয়েছে। দলটির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, তারা আসলে কেবল মাঠে নামতে শুরু করেছেন, এখনও পুরোপুরি নামেননি।
বিএনপি রাজপথে নামার পর দেশের নানা প্রান্তে হামলা এবং সহিংসতার ঘটনায় পুলিশের মামলায় দলটির নেতাকর্মীদের আসামি করার বিষয়ে বলা হয়েছে, হামলা-গ্রেপ্তার করে আন্দোলনকে দমানো যাবে না।
শুক্রবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় দলটির নেতারা এসব কথা বলেন।
আগের দিন রাজধানীর মিরপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই সংঘাত নিয়েই বক্তব্য রাখেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘গতকাল পল্লবী জোনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশের জন্য যখন মঞ্চ তৈরি করছিলেন এবং মাইক লাগাচ্ছিলেন ঠিক তখনই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে আক্রমণ। এই আক্রমণে আমাদের প্রায় ৭৫ জন আহত হয়েছেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন ৮ জন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এভাবে সন্ত্রাসী হামলা করে, এভাবে আহত করে, জখম করে, হত্যা করে, গ্রেপ্তারর করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে কখনই আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না, বিএনপিকে রাজপথ থেকে সরানো যাবে না।’
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পুনঃপ্রবর্তন, জ্বালানি তেলের দাম হ্রাসসহ নানা দাবি এবং নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে গত ২২ আগস্ট থেকে প্রায় নিয়মিত রাজপথে কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।
তারা সক্রিয় হয়ে ওঠার পর ভোলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দুজন ও নারায়ণগঞ্জে একজনের মৃত্যু হয়েছে। হামলা-পাল্টা হামলা হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও। এতে আহত হয়েছেন শত শত নেতাকর্মী। আর পুলিশের মামলায় আসামি হয়েছেন হাজার হাজার।
তবে হামলা-মামলার কারণে বিএনপি রাজপথ থেকে সরে যাবে না জানিয়ে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, তারা কর্মসূচি আরও বাড়াবেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের একটাই কথা, মাঠে আমরা এখনও নামি নাই, নামছি। মাঠ থেকে গুলি করে মৃত্যু হলেও আমাদের ওঠাতে পারবে না। সরকারকে চিন্তা করতে হবে তারা লাশ চায় না অন্য কিছু চায়।’
মিরপুরের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারকে বলছি, এই হামলার ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘এই সব আক্রমণ করে কোনো লাভ হবে না। ঢাকায় আমাদের যে কর্মসূচি ২৮ তারিখ পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়েছে, সেই কর্মসূচি চলবে। যেকোনো প্রতিকূলতার মধ্যে এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা
বৃহস্পতিবার মিরপুরে সংঘর্ষের সময় পুলিশ আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘সবচাইতে দুঃখজনক, ভয়াবহ হচ্ছে, গতকাল আক্রমণকারীদের প্রতিহত করার জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা যখন দাঁড়িয়ে থাকে, তখন আমাদের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস এবং শেষে গুলিবর্ষণ করে।
‘আমরা বারবার বলে আসছি যে পুলিশের ভূমিকা হওয়া উচিত রক্ষা করা, নিরপেক্ষ থাকা। কিন্তু পুলিশ পুরোপুরিভাবে এই হামলাকারীদের তথা আওয়ামী লীগের ও সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে গণতন্ত্রকামী যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনকে তারা নস্যাৎ করার জন্য কাজ করছে।
‘আমরা মনে করি, পুরোপুরিভাবে উসকানি দিয়ে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট করা, বিরোধী দলকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া এবং নির্বাচনি মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য তারা এই কাজগুলো করছে।’
বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান রতন, নাজিম উদ্দিন আলম, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, যু্বদলের শফিকুল ইসলাম মিল্টনও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।