বছর জুড়ে যমুনা নদীর ভাঙন দেখতে দেখতে ক্লান্ত দু চোখ। নদী ভাঙনে দিশেহারা সিরাজগঞ্জের চৌহালী, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুরের নদী পাড়ের মানুষ।
নদী ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারাচ্ছে খুকনী, জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নের শত শত পরিবার। গত তিনদিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টির কারণে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাপক নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বালির বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের নামমাত্র চেষ্টা করছে।
ভাদ্র মাস শেষ। প্রচলন আছে পচা ভাদ্রে মানুষকে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয় টানা বৃষ্টির কারণে। এমনিতেই মাঝে মধ্যে হালকা বৃষ্টিপাত হলে যমুনা নদীতে জোয়ার শুরু হয়। বর্ষা মৌসুম শেষের দিকে তবুও বেড়েই চলছে নদীর পানি। বর্তমানে বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনার পানি।
নদীতে প্রবল স্রোত থাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে শঙ্কা নিয়ে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী মানুষদের।
যমুনা তীরবর্তী পাঁচ কিলোমিটার এলাকা কয়েক বছর ধরে ভাঙনের কবলে। বাড়িঘর, ফসলি জমি হারিয়েছে খুকনী, জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নে ব্রক্ষানগ্রাম, আরকান্দি, পাকুরতলা, জালালপুর, হাটপাচিল, ঘাটাবাড়ি গ্রামের মানুষ।
গত কয়েক বছরের ভাঙনে মানচিত্র থেকে মুছে যেতে বসেছে গ্রামগুলো। গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টি ও নদী ভাঙন তাদের কষ্টের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। নদীতে ঘরবাড়ি বিলিন হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে শত শত পরিবার।
পাকুরতলা গ্রামের আকবর আলী বলেন, ‘আমরা নদী ভাঙন নিয়ে আতঙ্কে আছি। নদীতে বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এলাকার মানুষ বিপদগ্রস্ত। আমরা ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছি না। কেউ খোঁজও নিচ্ছে না। গত কয়েক দিনে নদী ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পাড়ের মানুষ।’
আরকান্দি গ্রামের আব্দুল মমিন বলেন, ‘সমস্যা অনেক। একদিকে নদী ভাঙন, অন্য দিকে মুষলধারে বৃষ্টি। গত রাতে আমার ঘর, বসত ভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের তো ঘর নাই, মাথা গোজার ঠাঁই নাই, এখন কোথায় যাব? নদীতে ভেঙ্গে যাচ্ছে পুরো আরকান্দি গ্রাম।’
জাললপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘ভাঙনের ভয়াল থাবায় দিশেহারা নদী পাড়ের মানুষ। প্রত্যেকটি মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। সবাই এখন বেকার। এ জন্য খাদ্য সহায়তার চাহিদা বেশি। আমরা ভাঙন কবলিতদের খাবার সহায়তা দিচ্ছি। কোনো লোকই না খেয়ে থাকবে না। পর্যায়ক্রমে আমরা সবার ঘরে খাদ্য পৌঁছে দেব।’
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন ঠেকাতে বালির বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলা হচ্ছে। এনায়েতপুর থেকে হাটপাচিল পর্যন্ত বালির বস্তা দিয়ে নদীর পাড় ঢেকে দেয়া হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম এখন নদীতে অনেক স্রোত। তাই কাজ করা সমস্যা হচ্ছে। এখানে স্থায়ী ভাঙন রোধে সাড়ে ৬শ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়ে গেলে আর এই অঞ্চলের মানুষকে নদী ভাঙন আতংকে থাকতে হবে না। আশা করি আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প এলাকায় নদী ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব হবে।’