বর্ষা মৌসুম শেষ না হতেই মুন্সীগঞ্জ সদরের চরাঞ্চলের বাংলাবাজারে ফুঁসে উঠেছে প্রমত্তা পদ্মা। টানা বর্ষণ ও স্রোতের তীব্রতায় কয়েক দিনের ভাঙনে তীরের দেড় কিলোমিটার এলাকার ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আতংকে ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন শতাধিক পরিবার।
জেলা সদরের বাংলাবাজার ইউনিয়নের সরদারকান্দি, শম্ভু হালদারকান্দি, মহেশপুর ও শান্তনগর গ্রামে চলছে এ ভাঙন। আতংকে রয়েছে ওই ইউনিয়নের ইসলামপুর, ভুতারচর ও বাংলাবাজার গ্রাম।
এদিকে, বুধবার সকাল থেকে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আপাতত ৪১ হাজার জিও ব্যাগ ও ১ হাজার জিও টিউব ফেলার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সরদারকান্দি গ্রামে একটি মন্দির ও অন্তত ১০টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। সব মিলিয়ে রাতের ভাঙনে অন্তত ৫০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়েছে।
বাংলাবাজার ইউনিয়নের চারটি গ্রামের শতাধিক পরিবার আগেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাতের ভাঙনে ১০টি পরিবারের বসতভিটে রক্ষা হলো না। ভাঙনের তীব্রতায় তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে গেছে পদ্মাগর্ভে।
ইউনিয়নের সর্দারকান্দি গ্রামের আলী মিয়া সৈয়াল বলেন, ‘এ যাবত পদ্মা গর্ভে সর্দারকান্দি ও শম্ভু হালদারকান্দি গ্রামের বিঘার পর বিঘা ভিটেবাড়ি নদীতে ভাইঙা লইয়া গেছে।’
একই গ্রামের মাকসুদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কৃষি কাজ করে। অনেক কষ্টে একটা বিল্ডিং তুলছিল। কিন্তু বিল্ডিংটা নদীতে ভাইঙা লইয়া গেল। এখন আমরা কোথায় যাই? রাতে মানুষের বাড়িতে গিয়ে থাকি। দিনে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি।’
জাহানারা বেগম বলেন, ‘চার-পাঁচ দিন আগে আমার বসতঘর সরিয়ে নিয়েছি। খুব শখ করে অনেকগুলো মুরগি পালতাম। মুরগির খোয়ারটা এখানেই ছিল। আজ মুরগি আর খোয়ার দুইটাই বিক্রি করে গেলাম। নিজেদের থাকারই তো জায়গা নাই, মুরগি পালব কেমনে। ঘর ভেঙে নিয়ে অন্য স্থানে রাখছি। ভিটাটার মায়া ছাড়তে পারি না। রান্না-বান্না করি না। ভিটায় এসে বসে থাকি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রতিদিনই পদ্মায় ভাঙছে। ইতোমধ্যে এক কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন হয়েছে। ভাঙন রোধে আমরা তাৎক্ষণিক ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বরাদ্দ পেয়েছি। এর মধ্যে ৪১ হাজার জিও ব্যাগ ও ১ হাজার জিও টিউব ফেলা হবে। এ কাজ শেষ করতে সাত দিন সময় লাগবে। আশা করি ভাঙনের তীব্রতা কমবে।’