চট্টগ্রামে মাহমুদ খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে জড়িয়ে যে প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হয়েছে, তাতে এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ হিসেবে বাবুলের বিয়ে-বহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গায়ত্রী অমর সিং নামের এক এনজিওকর্মীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ঘটনাচক্রে মিতু এটা জেনে যান। এ কারণে মিতুকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন বাবুল।
গায়ত্রীকে এ মামলায় আসামি করা হয়নি। তাকে সাক্ষী করা হয়েছে কি না, সে বিষয়েও স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
পিবিআই বলছে, চেষ্টা করেও গায়ত্রীর সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি বাংলাদেশে নেই।
মিতু হত্যার দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত বুধবার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হালিমের আদালতে অভিযোগপত্রটি জমা দিয়েছে পিবিআই।
অভিযোগপত্রে ২১ ধরনের আলামত, দুই হাজার ৮৪ পাতার কেস ডকেট আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। মামলায় ৯৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
এই অভিযোগপত্র গ্রহণের বিষয়ে আগামী ১০ অক্টোবর শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসান।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় সন্তানের সামনেই খুন করা হয় মিতুকে।
এর আগে বাবুল জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেন। এ কারণে এটি জঙ্গিদের কাজ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়। বাবুল তখন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহানুভূতিও পান। পরে এই হত্যায় তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে নানা তথ্য আসতে থাকলে একপর্যায়ে তিনি চাকরিচ্যুত হন।
শুরুতে মিতুর বাবা বাবুলের পাশে থাকলেও পরে তিনি সন্তান হত্যায় জামাতার দিকে আঙুল তুলতে থাকেন। পরে মামলাও করেন।
এই হত্যার পর ২০১৬ সালে বাবুলই প্রথমে মামলা করেন। এর পাঁচ বছর পর ২০২১ সালে মামলা করেন বাবুলের শ্বশুর। দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে পিবিআই।
এই মামলায় বাবুল ছাড়াও যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা, মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খাইরুল ইসলাম ওরফে কালু ও শাহজাহান মিয়া।
এর মধ্যে মুসা ও খাইরুল ছাড়া বাকিরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে।
মামলায় আরও যে চারজনের নাম ছিল, তাদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন পর পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন রাশেদ ও নুরুন্নবী। সাইদুল ইসলাম শিকদার ওরফে সাক্কু ও আবু নাছেরকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করা হয়েছে।
বাবুল-মিতুর ঝগড়ার শুরু বই নিয়ে
২০২১ সালের ১২ মে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় যে মামলা করেন, তাতে বলা হয়, গায়ত্রীর সঙ্গে প্রেমের বাধা হিসেবে মিতুকে হত্যা করিয়েছেন বাবুল।
পিবিআইয়ের অভিযোগপত্রে বলা হয়, বাবুল আক্তার ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন। এই সময়ে সেখানে কাজ করা একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান তিনি।
গায়ত্রী অমর সিং নামের ওই উন্নয়নকর্মীর নিরাপত্তাকর্মী সরওয়ার আলম ও গৃহকর্মী পম্পি বড়ুয়ার জবানবন্দিতে বিষয়টি উঠে এসেছে।
গায়ত্রী ছিলেন ভারতের নাগরিক। তিনি কবে দেশ ছেড়েছেন, সে তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি কাজ করতেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরে।
গায়ত্রীর বিষয়ে তথ্য জানতে সংস্থাটিকে চিঠিও দেয় পিবিআই, কিন্তু তারা কিছু জানায়নি।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গায়ত্রী বাবুলকে উপহার হিসেবে যে বই দিয়েছিলেন, সেটি মিতু দেখে ফেলার পর সংসারে কলহের সৃষ্টি হয়। এরপর মিতুকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন বাবুল।
সে সময় বাবুল চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ২০১৬ সালের ৫ জুন মিতুকে হত্যার দুই দিন আগে বাবুল বদলি হয়ে ঢাকায় যান।
মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের এজাহারে বলা হয়, গায়ত্রীর দেয়া সেই বইয়ের শেষ দিকে নিজেদের সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় বাবুল নিজ হাতে লেখেন। এটা নিয়েই ঝগড়ার শুরু। বইটি পিবিআইয়ের জব্দের তালিকায় আছে।
অভিযোগপত্রের বিষয়ে কিছুই বলতে রাজি হননি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক এবং পিবিআই পুলিশ সুপার (মেট্রো) নাইমা সুলতানা।
মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি পিবিআইকে একটা নয়, দুটো বই দিয়েছিলাম। এসব বইয়ে বাবুল ও গায়ত্রীর হাতের লেখা ছিল। এই লেখাগুলো যাচাই করলে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যেত।’
বই দুটি কোথায় পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো পেয়েছি; আমার কাছে ছিল; ঘটনার আগে মিতুই দিয়েছিল আরও কাগজপত্রসহ।’
হত্যার পর বাবুলের কথা কেন বলেননি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তখন ঘটনা অন্যদিকে ছিল। সে (বাবুল) আমার বাসায় ছিল। আমার বাসায় প্রশাসনের এত বড় বড় লোকেরা আসছে, তার সঙ্গে কথা বলছে। তখন ভাবলাম যে, না অন্তত তাদের সম্মানে এখন কিছু বলা ঠিক হবে না।’
গায়ত্রী কোথায়
অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, গায়ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হয়নি পিবিআই।
এই বিষয়ে পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে গায়ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের সের্বাচ্চ চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তার কোনো সাড়া পাইনি।’
যোগাযোগ সম্ভব না হওয়ায় গায়ত্রীকে আসামি বা সাক্ষী করা যায়নি বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘গায়ত্রীর বিষয়ে অভিযোগপত্রে বিস্তারিত লেখা হয়েছে। এটা বিচারাধীন বিষয় হওয়ায় কোনো মন্তব্য করা বা বক্তব্য দেয়া সমীচীন হবে না।’
সিআইডির মাধ্যমে ওই বইয়ের শেষের দিকে থাকা লেখাগুলো বাবুলের হাতের বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
‘গায়ত্রী কেন আসামি বা সাক্ষী নয়?’
মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গায়ত্রী মেইন। গায়ত্রী নাই, না থাক। তার যে রেকর্ড, দুটা বই, হাতের লেখা, অফিশিয়াল হাতের লেখা, অফিসে সে কবে জয়েন করছে, কবে চলে গেছে, এসব ডকুমেন্টসই তো প্রমাণ করবে যে, তার সঙ্গে বাবুল আক্তারের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। গায়ত্রীর কারণেই মিতুর মৃত্যু। তার কারণেই মিতু হত্যাকাণ্ড; অন্য কোনো কারণ না।’
গায়ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গায়ত্রী এখন কোনোটাতে (সাক্ষী বা আসামি) আছে কি না, সন্দেহ আছে। আমরা মামলা করেছি, বাবুল ও গায়ত্রীর হাতের লেখা সংবলিত দুটা বই উপস্থাপন করছি।
‘সে আসামি না হলে সাক্ষী হবে, সোজা হিসাব। তার নাম তো আমার এজাহারে আছে। সে তো আর অজ্ঞাত না। আর সে যদি হাজির না হয়, তার অফিশিয়াল রেকর্ড, হাতের লেখা এসব উপস্থাপন করতে হবে। মানুষ মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দেয় না? তার সাক্ষী তো লাগে না। সে রকম তার অনুপস্থিতিতে এসব উপস্থাপন করতে হবে।’
গায়ত্রীকে না পাওয়ার বিষয়ে পিবিআইয়ের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন মিতুর বাবা। তিনি বলেন, ‘গায়ত্রী এক দেশ থেকে আরেক দেশে আসছে হাওয়ার উপর নাকি? তার ভিসা আছে, পাসপোর্ট আছে। এখনও সেই অফিসটা আছে। তাকে না পেলে তাকেও তো পলাতক দেখিয়ে আসামি করা যায়।’
বাবুল আক্তারের ভাই আইনজীবী হাবীবুর রহমান লাভুও গায়ত্রীকে আসামি না করার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যদি বাবুল আক্তারের বিয়ে-বহির্ভূত সম্পর্ক থেকেই থাকে, যাকে নিয়ে এত বড় ঘটনা, সেই গায়ত্রীকে কেন আসামি করা হলো না? আমরা পুরো ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই।’
যেভাবে খুলল রহস্যের জট
আলোচিত মামলাটির তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে অভিযোগপত্রের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, মিতু হত্যার আগে ও পরের কয়েক দিন বাবুলের আর্থিক লেনদেন যাচাই করে দেখা যায়, ঘটনার তিন দিনের মাথায় ৩ লাখ টাকা খরচ করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা।
এর সূত্র ধরে পিবিআই সন্ধান পায় বাবুলের ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল ইসলামের। সাইফুলের কাছ থেকে মুনাফার এই ৩ লাখ টাকা চেয়ে নিয়ে নড়াইলে গাজী আল মামুন নামের এক ব্যক্তির কাছে পাঠান বাবুল। মামুন এসব টাকা মামলার আসামি মুসা, ওয়াসিমসহ অন্যদের মধ্যে ভাগ করে দেন।
২০২১ সালের ১১ মে আদালতে সাক্ষী হিসেবে বাবুলের দুই বন্ধু গাজী আল মামুন ও সাইফুল ইসলাম ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারিতে মিতুর বাবার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার সময় মামলাটি আমার হাতে আসে। তখন আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাবুল আক্তারকে নিজের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তখনই তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমি বুঝতে পারি যে, হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তার জড়িত।’
বাবুল আক্তারের এই টাকা লেনদেনের বিষয়ে পুলিশের দেয়া বর্ণনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার ভাই হাবীবুর রহমান লাভু। তিনি বলেন, ‘আর আমার ভাইয়ের ব্যবসা ছিল, সে তার লাভের টাকা নিতেই পারে। এটা অপরাধ নাকি? তার পার্টনার ছিল সাইফুল, মামুন নামের কাউকে আমরা চিনি না।
‘এরা যদি ঘটনার পর খুনের কাজে টাকা দেয়, তাহলে এরাও তো পরোক্ষভাবে জড়িত; এরাও তো আসামি, কিন্তু তাদের আসামি করা হয়েছে? আর যার কথা বলা হচ্ছে, মুসা, সেই মুসা কই? সবাই তার কথা বলছে, তাকে হাজির করা হোক। তাকে হাজির করলে সব সমাধান হয়ে যাবে।’
যেভাবে হত্যা
অভিযোগপত্রের বর্ণনা অনুযায়ী, বাবুল মিতুকে হত্যার দায়িত্ব দেন তার বিশ্বস্ত সোর্স কামরুল শিকদার মুসাকে। ঘটনার তিন দিন পর মুসাসহ অন্য আসামিদের কাছে ৩ লাখ টাকা পৌঁছে দেয়ার কথাটি আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছিলেন মামুন।
২০১৬ সালে গ্রেপ্তারের পর আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে মুসার নির্দেশে মিতুকে হত্যার কথা জানান ওয়াসিম ও আনোয়ার। গত বছরের ২৩ অক্টোবর এহতেশামুল হক ওরফে ভোলার দেয়া জবানবন্দিতেও মুসার কথা উঠে এসেছে।
ভোলা জানান, ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার থাকাকালে বাবুলের সোর্স ছিলেন মুসা। তার সঙ্গে আগে থেকে পরিচয় ছিল ভোলার। তিনিই ভোলাকে বাবুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর থেকে ভোলা বাবুলকে বিভিন্ন তথ্য দিতেন।
ভোলার দেয়া তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা এলাকায় গুলি করতে যাওয়া এক আসামিকে ধরে বাবুল বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। এরপর থেকে তাদের সখ্য আরও বাড়ে।
ভোলা আদালতে বলেন, ‘২০১৬ সালের মে মাসে মুসা আমাকে জানায়, বাবুল পারিবারিক সমস্যায় আছেন। তার স্ত্রীকে খুন করতে হবে। এ জন্য আমি যেন অস্ত্র সংগ্রহ করে দিই।
‘আমি অস্ত্র সংগ্রহ করে মুসাকে দিই। এরপর মিতু হত্যার দিন ২০১৬ সালের ৫ জুন সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে মুসা আমাকে বারবার ফোন দিতে থাকে। আমি ফোন ধরিনি।
‘বেলা ১১টার দিকে ব্যবসায়িক কাজে খাতুনগঞ্জের শাহজালাল ব্যাংকে গিয়ে টেলিভিশনে দেখি, বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে হত্যা করা হয়েছে। তখন মুসাকে ফোন দিই, কিন্তু তার ফোন বন্ধ ছিল। বিকেলে আমার অফিসে গিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে মুসা। সে আমাকে বলে, তার কোনো উপায় ছিল না। সে যদি মিতু ভাবিকে না মারত, তাহলে বাবুল আক্তার তাকে ক্রসফায়ারে দিত।’
ভোলা বলেন, ‘তখন আমি মুসাকে বলি, এ কাজটা না করলে বাবুল স্যার হয়তো একবার ক্রসফায়ারে দিত, এখন পুলিশ তো তোকে ১০ বার মারবে।’
এরপর মুসা ভোলার অফিসে একটি কাপড়ের ব্যাগ রেখে চলে যান বলে জানিয়েছেন তিনি। পরে রাতে মুসার ঘরের কেয়ারটেকার মনির এসে ব্যাগটি নিয়ে যান। পরে ভোলার তথ্যে ডিবি মনিরের বাসা থেকে ব্যাগটি উদ্ধার করে। সেখানে একটি অস্ত্র ছিল, যা মিতু হত্যায় ব্যবহার হয়েছিল।
ঘটনার কয়েক দিন পর কামরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে পুলিশে ধরে নেয়ার কথা বললেও পুলিশ বলছে, তিনি নিখোঁজ।
বাবুলের বিরুদ্ধে শ্বশুরের মামলা
মিতুকে হত্যার পর পর বাবুল যে মামলা করেন, তাতে সন্দেহভাজন হিসেবে জঙ্গিদের কথা বলা হয়। পরের বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সে সময়ের তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের কাছে ৪ পৃষ্ঠার অভিযোগ জমা দেন মিতুর বাবা।
এর মধ্যে জড়িত সন্দেহে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন অনেকে। ঘটনার পরের সপ্তাহে রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন রাশেদ ও নুরুন্নবী নামে দুজন।
এরপর কেটে যায় ৫ বছর। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআাই। ২০২১ সালের ১০ মে বাবুলকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ডেকে নিয়ে আটক করে সংস্থাটি।
পরদিন আদালতে বাবুলের করা মামলায় তাকেই দায়ী করে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা। একই দিন হত্যায় ‘বাবুল জড়িত’ দাবি করে মিতুর বাবা আরেকটি মামলা করেন। মামলায় মোট আটজনকে আসামি করা হয়। ওই দিনই পুলিশ এ মামলায় বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখায়।
বাবুলের করা মামলায় পিবিআইয়ের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ অক্টোবর আদালতে নারাজি দেন আইনজীবী। আদালত ৩ নভেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করে পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়। পরে আদালত বাবুলকে নিজের করা মামলাতেই গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেয়।