বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফুটবল নিয়ে মারামারি, পরীক্ষার্থীরা জঙ্গলে

  •    
  • ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৮:৫৬

মাগুরায় স্কুল মাঠে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ৬ সেপ্টেম্বর। এরপর মাগুরার অন্যতম বড় এই বাজারে ১৫টির বেশি দোকানে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। তারা লুকিয়ে থেকে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

‘ছোটদের ফুটবল খেলা নিয়ে বিরোধ বড়দের পর্যায়ে ছড়িয়ে গেলে পুরো এলাকায় মারামারি ও লুটপাট শুরু হয়ে যায়। এরপর থেকে বাড়িতে আর থাকা হয় না। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয়েছে পালিয়ে থেকে।

‘ধরেন বনজঙ্গলের ভেতরে মশার কামড় খেয়ে বই পড়েছি। পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। তাই আমরা গ্রামের অনেকে ভালো করে পরীক্ষা দিতে পারব কিনা তা নিয়ে আছে আতংক, ভয়।’

মাগুরা জেলার মহম্মদপুরের বিনোদপুর বি কে মাধ্যমিক স্কুলের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিউজবাংলাকে এসব কথা বলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক এই শিক্ষার্থী জানায়, হামলা মামলার পরে তাদের গ্রাম ঘুল্লিয়া, খালিয়া, বিনোদপুর এলাকার মানুষ বাজারে আসছে না। এক সপ্তাহ ধরে বাজারে কোনো মানুষ নাই। কিছু দোকানপাট খুললেও বেশিরভাগ বন্ধ।

ওই শিক্ষার্থী বলে, ‘আমরা কীভাবে কেন্দ্রে যেতে সাহস পাব? আমরা কি নিরাপত্তা পাব? স্কুল থেকে তো বলা হচ্ছে পরীক্ষা কেন্দ্রে শুধু পুলিশ থাকবে। তাহলে বাড়ি থেকে স্কুল পর্যন্ত নিরাপত্তার কী হবে? আমরা এটা নিয়ে অনেকে ভয়ে আছি।’

স্কুল মাঠে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে এ এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ৬ সেপ্টেম্বর। এরপর মাগুরার অন্যতম বড় এই বাজারে ১৫টির বেশি দোকানে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এলেও বিনোদপুর বাজার এলাকা মানুষশূন্য হয়ে যায়। বুধবারেও বাজার এলাকার অধিকাংশ দোকান বন্ধ থাকতে দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই অচলাবস্থা সমাধানে মাগুরা-১ আসনের সাংসদ সাউফুজ্জামান শিখর গত ১১ সেপ্টেম্বর এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি স্থানীয়দের ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দেন। বিরোধপূর্ণ বিনোদপুর ও ঘুল্লিয়াবাসীদের শান্ত হতে বলেন। পরস্পর মিলেমিশে এলাকায় শান্তি আনার অনুরোধ তিনি করেন। তবে ওই এলাকার থমথমে পরিস্থিতি এখনও কাটেনি।

এসএসসি পরীক্ষার বিনোদপুর বি কে মাধ্যমিক স্কুল কেন্দ্রে রয়েছে ৭৫১ জন শিক্ষার্থী। এর অধিকাংশই এসব বিরোধপূর্ণ এলাকার। ওই সব এলাকার পরীক্ষার্থীদের মনে ভয় কাজ করছে বলে তারা স্কুল কর্তৃপক্ষকে নানা সময়ে জানিয়েছে।

এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পুলিশের টহল সবসময় থাকলেও বিরোধপূর্ণ এলাকার পরীক্ষার্থীদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। একাধিক পরীক্ষার্থী জানিয়েছে, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন তাদের অভিভাবকেরাও।

এক পরীক্ষার্থীর মা মুঠোফোনে জানান, ছেলে এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে। প্রস্তুতি আগে ভাল থাকলেও শেষে এসে ভাল হয়নি। গ্রাম্য মারামারির কারণে এখন ঘরে থাকাই মুশকিল হয়ে গেছে। দিনে বাড়ি থাকে আর রাতে আশেপাশের জঙ্গলে পালিয়ে থাকে।

অপর এক পরীক্ষার্থীর চাচা জানান, ‘ছেলেরা তো কোনো সমস্যা হলে দৌড় দিতে পারে। কিন্তু মেয়ে যারা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে, তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে স্কুল কিংবা প্রশাসন থেকে কোনো আস্থা আমরা পাইনি। আমার নিজের পাটের দোকান,তা লুটপাট করা হয়েছে। আমিই যেতে পারছি না বাজারে।’

এ বিষয়ে বিনোদপুর বি কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস কে নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সব শিক্ষকেরা বসে এটা নিয়ে কথা বলেছি। পরীক্ষার সময়ে বিশেষ নজরদারিসহ নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি যেন না হয় সেদিকে আমরা সচেতন। প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে।’

মাগুরা জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, ‘বিশেষ নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশাসনের সাথে কথা বলা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপত্তার সাথে পরীক্ষা দিতে পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আশা করি পরীক্ষার্থীরা নির্ভয়ে পরীক্ষা শেষ করতে পারবে।’

প্রশাসনের নিরাপত্তা বিষয়ে মহম্মদপুর উপজেলার নিবাহী কমকতা রামানন্দু পাল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। টহল জোরদারসহ পরীক্ষার্থীদের যেন কোনো রকম ভোগান্তিতে না পড়তে হয়, সেটা আমরা দেখছি।’

এ বিভাগের আরো খবর