বিমানের বিরুদ্ধে অনৈতিক উপায়ে অভ্যন্তরীণ রুটের আকাশপথে অস্থিতিশীলতা তৈরির অভিযোগ এনেছে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর সংগঠন এভিয়েশন অপারেটরস এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (এওএবি)।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ডেইলি স্টার ভবনে ‘এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি ইন বাংলাদেশ: প্রসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এ অভিযোগ তোলা হয়।
এওএবি’র সেক্রেটারি জেনারেল ও নভো এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আমাদের ডমেস্টিক মার্কেটে কী হচ্ছে? এখানে ফেনোমেনা পুরোপুরি উল্টো। ২০১৩ সালে বেসলাইন ফেয়ার ছিল গড়ে ৭৪০০ টাকা, ৬১ ভাগ কমে এখন ভাড়া হয়েছে ৩৭০০ টাকা।
‘পৃথিবীর সব দেশে ডলারের দাম বাড়ল, তেলের দাম বাড়ল, সব জায়গায় ভাড়া বাড়ল, কিন্তু আমরা সেই ৬১ ভাগ কম ভাড়ায় এয়ারলাইনস চালাচ্ছি। এটা কেন হচ্ছে? যেখানে আমাদের ভাড়া সমন্বয় করার কথা ছিল, সেখানে আমরা উল্টো ট্রেন্ডে যাচ্ছি। এটা হচ্ছে কারণ আমাদের ন্যাশনাল ক্য়ারিয়ার ক্যাপাসিটি ডাম্পিং করছে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘যদি পাঁচটা বোয়িং ট্রিপল সেভেন বা সেভেন এইট সেভেনের ফ্লাইট ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে প্রতিদিন অপারেট করে বা সপ্তাহে ৫ দিন করে এবং সেটা থ্রো অ্যাওয়ে প্রাইজে, তাহলে লাভ-ক্ষতির হিসাব সেখানে নেই। ফেয়ার ডাম্পিংও এখানে হচ্ছে। কারণ ব্যয়ের সঙ্গে এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
‘বিমান ডমেস্টিকে লস দিয়ে অপারেট করে। লসের কারণে বিমানের বোর্ড মিটিংয়ে ২০০৭ সালে সিদ্ধান্ত হয় তারা ডমেস্টিকে অপারেট করবে না। কিন্তু ২০১৫ সালে আবার বিমান এলো, কিন্তু লসের সেই ট্রেন্ড পরিবর্তন হয়নি। এখন আমার যে কস্ট অফ অপারেশন, তার অনেক কমে সিট বিক্রি করতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিমান সরকার থেকে সাপোর্ট পাচ্ছে। তারা হয়তো টিকে থাকবে। কিন্তু আমরা বেসরকারি এয়ারলাইনস কিভাবে টিকে থাকব? সাময়িক হয়তো থাকব, কিন্তু লং রানে আমরা থাকব না। এর আগে যেমন ৮টা এয়ারলাইনস বন্ধ হয়ে গেছে আমাদেরটাও বন্ধ হয়ে যাবে।’
বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজারে দেশি এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বেসরকারি দুটি এয়ারলাইনস নভো এয়ার ও ইউএসবাংলার রয়েছে ৮০ ভাগ ক্যাপাসিটি। আর বাকি ২০ ভাগ ক্যাপাসিটি বিমানের।
নভো এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘এখন চট্টগ্রাম থেকে ৫টা ওয়াইড বডি ফ্লাইট, সিলেট থেকে ৩টা ওয়াইড বডি ফ্লাইট, সব যাত্রী বিমান আনছে। আমি নিজে দেখেছি, এক ফ্লাইটে ৩১৪ জন শুধু ডমেস্টিক যাত্রী এনেছে বিমান।
‘আমরা যখন দেখলাম, বিমান প্রতি যাত্রীতে ২ হাজার টাকা লস দিয়ে ডমেস্টিক অপারেট করছে তখন প্রতিমন্ত্রীকে বললাম। জানালাম যে এভাবে তো আমাদের পক্ষে চলা সম্ভব না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প উপদেষ্টাকেও বিষয়টি বললাম। তিনি এটা প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে সমাধান করতে বললেন।
‘সমস্যার সমাধানে আমরা একটি বৈঠকে বসলাম, সেখানে বিমানের এমডি ছিলেন। সেখানে ভাড়া সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত হলেও বিমান তা শোনেনি।’
তিনি বলেন, ‘বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর লোড ফ্যাক্টর ৭০ ভাগের উপরে থাকত। ভাড়া কম হলেও বিমানের থাকত প্রায় ৩০ ভাগ। আমাদের ভাড়া তখন বিমানের চেয়ে ৫শ টাকা বেশি ছিল। কিন্তু তারপরও ইনটাইম সার্ভিসের জন্য আমাদের যাত্রী বেশি ছিল। কিন্তু যখন এ বছর জানুয়ারি থেকে তেলের দাম বাড়া শুরু করল, আমরা ভাড়া বাড়ালাম।
‘কক্সবাজারে আমরা সাড়ে ৭ হাজার টাকা করলাম, অন্যান্য জায়গায় সাড়ে ৫ হাজার টাকা। তখন থেকেই আমাদের যাত্রীরা বিমানে শিফট করা শুরু করল। বিমানের লোড ফ্যাক্টর হলো ৯৪ পারসেন্টে। আমাদের নেমে এল ৫৪ পারসেন্টে। এখন আমাদের কী করার আছে? আমরাও বিমানের মতো সিস্টার কনসার্নের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলছি। জানি না কতদিন চলতে পারব।’
ইউএস বাংলার প্রধান নির্বাহী লুৎফর রহমান বলেন, ‘এখানে প্রফিটটা ক্যালকুলেট করা হয় দুভাবে। একটি রুট বেসড আরেকটি নেটওয়ার্ক বেসড। বিমান বলে, তারা নেটওয়ার্কের ওপর লাভ ক্যালকুলেশন করে।
‘ধরা যাক, একজন ঢাকা-সৈয়দপুরে ট্রাভেল করছেন। তার ভাড়া হওয়া উচিত ৪ হাজার টাকা। কিন্তু দেখা গেল, তিনি শারজাহ থেকে ঢাকায় আসলেন, আবার ঢাকা থেকে গেলেন সৈয়দপুর। তখন সে ভাড়া হয়ে গেল মাত্র ২ হাজার টাকা। এটা চোখে দেখা যাচ্ছে না, এভাবে ধুয়া তুলে তারা ভাড়া কমিয়ে রাখছে নিয়মিত যাত্রীদের জন্য। সিলেট থেকে ২২০০ টাকা দিয়ে সকাল বেলা তারা ঢাকায় যাত্রী নিয়ে আসে ট্রিপল সেভেন দিয়ে, সেটা কিভাবে সম্ভব? আমরা ভালোরকম সমস্যায় পড়ছি। যাত্রী পাচ্ছি না, বিমান আন্ডার কাট ফেয়ার দিয়ে প্যাসেঞ্জার নিয়ে যাচ্ছে।’
বর্তমানে দেশে বিমান ছাড়া দুটি বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস বাংলা ও নভো এয়ার ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এর মধ্যে নভো এয়ারের কার্যক্রম মূলত অভ্যন্তরীণ বাজার কেন্দ্রিক। ইউএস বাংলা দেশের ভেতরের ৭ গন্তব্যের পাশাপাশি ১১টি আন্তর্জাতিক রুটেও ফ্লাইট পরিচালনা করে।