বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টি জোট করার জন্য কোনো বোঝাপড়া করছে কী না এ প্রশ্নে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘আমরা আমাদের রাজনীতি সঠিক লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে ভোট করার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
জাতীয় পার্টির বনানীর দলীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে দলের বর্তমান সংকট নিয়ে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যম কর্মীদের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
চুন্নু বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের জাতীয় পার্টির রাজনীতি গিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। জি এম কাদের এবং আমি বলছি, জাতীয় পার্টি কারও দালাল না। দালালি করবেও না। কারো পকেটের লোক না। জাতীয় পার্টির নিজস্ব অস্তিত্ব আছে, ঐতিহ্য আছে।
‘এটা ঠিক, জোট করেছি কয়েকবার। কিন্তু এখন জাতীয় পার্টি এমন একটা অবস্থায় আছে, সারা দেশের মানুষ গত ৩২ বছরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি বড় দুটি দলের দুঃশাসনে, অন্যায়, দুর্নীতি ও টাকা পাচারের কারণে জাতীয় পার্টিকে চায়।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই এগিয়ে যাওয়ার পথে কেউ কেউ বিভিন্ন কারণে যাত্রা বিঘ্ন করার চেষ্টা করবে। কিন্তু পারবে না। কারণ আমাদের রাজনীতি, সঠিক লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
দল ভাঙ্গা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘অনেকেই দল থেকে চলে যায়। আমি দল থেকে চলে যেতে পারি। কিন্তু জাতীয় পার্টি থাকবে। এরশাদ সাহেবের কাছ থেকে তো অনেকেই চলে গেছে। আমি নিজেও একবার রাগ করে বিএনপিতে চলে গেছিলাম। এক বছর পরে আবার আসছি। অনেকেই দল ছেড়ে চলে যেতে পারে, কিন্তু জাতীয় পার্টি তার জায়গায় থাকবে।’
মশিউর রহমান রাঙ্গাকে কেন দল থেকে অব্যাহতির দেওয়া হয়েছে– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ‘কেন, এটা ওনার চিঠিতে বলা আছে। অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সংগঠনবিরোধী কার্যক্রমের জন্য। উনি প্রায় এক বছর ধরে পার্লামেন্টসহ বিভিন্ন ফোরামে এমন সব কথাবার্তা বলেন, যেগুলো দলের স্বার্থের বিরুদ্ধে। দুই তিন মাস আগেও এমন একটা অবস্থার প্রেক্ষাপট হয়েছিল। তখনই ওনাকে বহিষ্কার কিংবা অব্যাহতি দেওয়া হবে কিনা বিষয়টি চিন্তা করা হয়েছিল। ওই সময় তিনি চেয়ারম্যানের কাছে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে ধরনের কথা তিনি আর বলবেন না।’
বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে অপসারণের জন্য স্পিকার বরাবর চিঠি দেওয়ার কারণ কি– এমন প্রশ্ন করা হলে মহাসচিব চুন্নু বলেন, ‘রওশন এরশাদ অসুস্থ থাকায় জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের কার্যক্রমে অনেক সমস্যা হয়। বিরোধীদলীয় উপনেতা আছেন, কিন্তু উনাকে দলীয় নেতার দায়িত্ব দেননি। এটা একটা কারণ।
‘অন্যদিকে, কয়েকদিন আগে দেখলাম আগামী নভেম্বরের কাউন্সিলের জন্য বলা হয়েছে। এমন একটা চিঠি ওনার (রওশন এরশাদ) সই করা। এটাও একটি কারণ।’
মশিউর রহমান রাঙ্গা অভিযোগ করেন, রওশন এরশাদের অপসারণের চিঠিতে সই না করলে তাকে পদ থেকে সরানোর হুমকি দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে দলের মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা মন্তব্য করার মতো কোনো বিষয় না। উনি তো কয়েকবারের সংসদ সদস্য। উনি বলছেন জোর করে উনার সই নেওয়া হয়েছে। কেউ কি ক্ষেপে গিয়ে গান পয়েন্টে ওনাকে সই করতে বলবে? এগুলো আসলে মনগড়া কথা। যার কোনো ভিত্তি নেই।’
মশিউর রহমান রাঙ্গার অভিযোগের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এখন তিনি যে সমস্ত কথা বলছেন, এসবের আমি জবাব দিচ্ছি না। উনি আজকে আবার বলেছেন, ওনার (রাঙ্গা) অব্যাহতি প্রত্যাহার চান। উনি স্যরি বলছেন, এ জন্য আমি কোনো কিছু বলতে চাই না।’
স্পিকারকে দেওয়া চিঠির বিষয়ে অনিয়ম হয়েছে বলে মশিউর রহমান রাঙ্গা বলছেন। দলের মহাসচিব চুন্নু বলেন, ‘তাহলে সেটা উনি এতদিন পরে বলেন কেন?’
রাঙ্গার অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হবে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে দলের মহাসচিব বলেন, ‘এটা আমার বিষয় না। দলের চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে ওনাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। চেয়ারম্যান যদি ভালো মনে করেন, তাহলে আনতে পারেন।’
রাঙ্গা বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ থাকবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেটাও পার্টির গঠনতন্ত্রের উপর নির্ভর করছে। পার্টির গঠনতন্ত্র অনুসারে দলের চেয়ারম্যান সংসদীয় দলের বৈঠক ডেকে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন। এটা কমপ্লিটলি দলের চেয়ারম্যানের বিষয়ে, উনি রাখলে রাখতে পারেন, না রাখলে নাও রাখতে পারেন।’