অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়েছেন তিন মাসের। এই ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে পার হয়েছে আরও তিন মাস। কিন্তু অফিসে আসছেন না। এখন তার অবস্থানই জানেন না কোনো কর্মকর্তা। অথচ অফিস না করেও তিনি এই তিন মাস বেতন ও সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। যদিও চলতি মাস থেকে তার বেতন বন্ধ করে দেয়ার কথা জানানো হয়েছে।
এসব অভিযোগ ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ট্রেনিং ইন্সপেক্টর (টিআই) পদে কর্মরত রোকসানা বকুলের বিরুদ্ধে। তার এমন কাণ্ডে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে বাহিনীটির মধ্যে।
বাহিনীর ময়মনসিংহ রেঞ্জের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, বিষয়টি জানার পর সদর দপ্তরকে লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে। রোকসানার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, রোকসানা বকুলের বাড়ি শেরপুরের নকলা উপজেলায়। প্রায় ১২ বছর যাবৎ ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত তিনি। ফুলবাড়িয়া আসার আগে কর্মরত ছিলেন মুক্তাগাছা উপজেলায়। অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে ছয় মাস আগে তিন মাসের ছুটি নেন তিনি। এরপর ছুটির মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও কাজে যোগ দেননি। এভাবে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছয় মাস। বর্তমানে রোকসানা কোথায় আছেন, তাও জানেন না কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনসার কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোকসানা বকুলের সঙ্গে ময়মনসিংহের কিছু কর্মকর্তার সম্পর্ক খুব ভালো। এ জন্য তার অনুপস্থিতির বিষয়টি জানা থাকলেও কোনো কর্মকর্তা মাথা ঘামাননি। এখন সমালোচনার সৃষ্টি হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছেন কর্মকর্তারা।
‘তা না হলে, কয়েক বছর অফিসে না এলেও বেতন ঠিকমতোই পেতেন রোকসানা। অসাধু কোনো কর্মকর্তা রোকসানার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন কি না, তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
এসব বিষয়ে জানতে রোকসানা বকুলের মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ফুলবাড়িয়া উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা রত্না নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে রোকসানা লিখিত আবেদন করে তিন মাসের অর্জিত ছুটি নিয়েছিলেন। নির্ধারিত ছুটির মেয়াদ শেষ হলেও কাজে যোগদান না করায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে তার বাড়ির ঠিকানায় তিনবার শোকজ পাঠিয়েছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি তার (রোকসানা) বেতন সাবমিট করেছি ঠিক আছে। কিন্তু আমি নিজে ইচ্ছা করলেই বেতন বন্ধ করতে পারি না। আমি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। তখন অনুমতি না পাওয়ায় রোকসানা বেতন পেয়েছেন। তবে এ মাস (সেপ্টেম্বর) থেকে তার বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’
রোকসানার বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ জেলা আনসার কমান্ড্যান্ট ড. মোস্তারি জাহান ফেরদৌসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এক মাস আগে রোকসানা তাকে ফোন দিয়েছিলেন। তবে কোথায় আছেন সে বিষয়ে কিছুই বলেননি।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ময়মনসিংহ রেঞ্জের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সম্প্রতি ঘটনাটি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক সদর দপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’