সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কালনী নদীর ওপর ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে কালনী সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৫ সালে। তবে সংযোগ সড়কের অভাবে ৭ বছর ধরে অব্যবহৃত পড়ে আছে সেতুটি।
এবার এই সেতু চালুর জন্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯ কিলোমিটারের সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এই নির্মাণকাজ করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
চলতি বছর সড়কটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। এর আগে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এই সড়ক নির্মাণের কাজ হওয়ার কথা থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের আপত্তি ও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় টাকা ফিরিয়ে নেয় বিশ্বব্যাংক।
এলজিইডি সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সড়কটি হাওরের মাঝখান দিয়ে নির্মিত হবে। তাই হাওর বা পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয়, সে রকম পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
‘১৯ কিলোমিটার সড়কের আড়াই কিলোমিটারই উড়াল সড়ক হবে। এ ছাড়া হাওরের পানিপ্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে জন্য ৭টি বড় সেতু ও কিছু কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। জমিও অধিগ্রহণ করতে হবে। এ কারণে ব্যয় বেশি মনে হচ্ছে।’
তবে মাত্র ১৯ কিলোমিটার সড়কের জন্য এই বিপুল খরচ এবং এই সেতু ও সড়কের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক তৌফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংযোগ সড়কের কোনো পরিকল্পনা না করেই কেবল উন্নয়ন দেখানোর জন্য এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের জন্য এটি দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এখন এটি চালুর জন্য বিপুল ব্যয়ে সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’
এলজিইডি কর্মকর্তারা বলছেন, দিরাই উপজেলা শহর থেকে জগদল-হোসেনপুর হয়ে জগন্নাথপুরের কলকলি পর্যন্ত এই সড়ক চালু হলে দিরাই ও শাল্লার সঙ্গে ঢাকার সড়ক যোগাযোগ সহজ হবে। হবিগঞ্জের আউশকান্দিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে এই সড়ক যুক্ত হবে। তখন ঢাকা যেতে দুই উপজেলার যাত্রীদের বাঁচবে আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টা সময়। এ ছাড়া কালনী নদীর পূর্ব পারের পূর্ব দিরাইয়ের দেড় লাখ বাসিন্দা সরাসরি সড়কপথে উপজেলা সদরে চলাচল করতে পারবে।
এলজিইডির সুনামগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দিরাইয়ের তৎকালীন সংসদ সদস্য প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের উদ্যোগে ২১০ মিটার লম্বা ও ৬ দশমিক ১০ মিটার চওড়া এই সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ১৮ কোটি ৭২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। পরে ব্যয় পৌঁছায় ২২ কোটি টাকায়। ২০১৫ সালে এই সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।
দিরাই উপজেলা প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে এ সেতু দিয়ে কিছু যানবাহন চলাচল করতে পারে। কারণ সেতুর পূর্ব প্রান্তে একটি ডুবন্ত সড়ক রয়েছে। পানি নেমে গেলে ছোট ছোট গাড়ি এই সড়ক ও সেতু দিয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে সড়ক ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ থাকে।’
প্রকৌশলীর এমন দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন পূর্ব দিরাইয়ের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন সর্দার। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাওর এলাকা বছরের ৮ মাসই পানির নিচে থাকে। ফলে এই সেতু এলাকার মানুষের কোনো কাজেই আসছে না। সব ঋতুতে ব্যবহার উপযোগী (অলওয়েদার) সড়ক নির্মাণ করা হলে এই সেতু এলাকাবাসীর উপকারে আসবে বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরই সংযোগ সড়ক নির্মাণে উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে তখন জমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত জটিলতায় সংযোগ সড়ক নির্মানকাজ আটকে যায়। পরে সড়কের প্রায় ৫ কিলোমিটার নিয়ে আপত্তি জানায় পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই ৫ কিলোমিটার এলাকা হাওরের মধ্যে হওয়ায় সড়ক নির্মিত হলে হাওর ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানায় পরিবেশ অধিদপ্তর। এতে আটকে যায় নির্মাণকাজ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, প্রথমে এই প্রকল্পটি ছিল বিশ্বব্যাংকের অধীনে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় অর্থ ফিরিয়ে নেয় বিশ্বব্যাংক।
এই সড়ক নির্মাণকাজের প্রকল্প পরিচালক গোলাম মওলা মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সড়ক নির্মাণের জন্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব কয়েক মাস আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় থেকে এখনও পাস হয়নি। এখান থেকে অনুমোদন পেলে এটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় হয়ে একনেকে যাবে।’
সড়কটি নির্মিত হলে কালনী সেতু পুরোপুরি কার্যকর হবে এবং দিরাই-শাল্লার মানুষ উপকৃত হবে বলে জানান তিনি।
দিরাই-শাল্লার বর্তমান সংসদ সদস্য প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেন গুপ্তা। এই সড়কের ব্যাপারে মঙ্গলবার তার কাছে জানতে চাইলে জয়া বলেন, ‘সড়কের সর্বশেষ তথ্য আমার কাছে নেই। এটি জেনে বলতে হবে।’
৬০০ কোটি টাকার ডিপিপির বিষয়ে জানতে চাইলে এক সপ্তাহ পরে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন তিনি।