নির্বাচন কমিশনের (ইসি) রোডম্যাপ মূল্যহীন বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেছেন, যে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নেই তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে বলে মনে হয় না।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় ভূমিহীন আন্দোলন সুরক্ষা পার্টি নামে জাতীয় পার্টির একটি সহযোগী সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় পার্টি মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ মূল্যহীন। আইনে আছে, নির্বাচনের সময় দেশের নির্বাহী বিভাগ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করবে। কিন্তু নির্বাহী বিভাগ যদি নির্বাচন কমিশনের কথা না শোনে তাহলে কী হবে তা বলা নেই। তাই নির্বাচন কমিশনের কথা নির্বাহী বিভাগ মানতে বাধ্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দিয়ে আইন করা হোক। কেউ নির্দেশ অমান্য করলে যেন কমিশন সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনই ক্ষমতা চায় না।’
এসময় তিনি আরও বলেন, শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশন স্ববিরোধী কথা বলছে। তারা বলছে, কাউকে হাতে-পায়ে ধরে নির্বাচনে আনা নাকি তাদের কাজ নয়। তাহলে এতগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এত আলোচনা করলেন কেন? আবার তারা বলেছেন, সবাই চাইলে নাকি ব্যালটে নির্বাচন হবে। শাসক দল তো ইভিএম চায়, তাহলে কি বেশিরভাগ দলের মতামত উপেক্ষা করে ইভিএম-এ নির্বাচন করবে কমিশন?’
জাতীয় পার্টি মহাসচিব বলেন, ১৫০ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন আরও ২ লাখ ইভিএম কিনতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া ইভিএম সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেশের ১০টি অঞ্চলে ১০টি ওয়্যার হাউস নির্মাণ করবে তারা। এজন্য প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার একটি বাজেটও তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন।’
দেশের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘ইভিএম হচ্ছে ভোটের রেজাল্ট কারচুপির সিস্টেম। ১৫০ আসনে ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত উচ্চাভিলাষী। দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় ইভিএমের বিপক্ষে মতামত দিয়েছে। শুধু সরকার ও তাদের কয়েকটি মিত্র রাজনৈতিক দল ইভিএমে নির্বাচন চেয়েছে। এমন বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করে ইভিএমে নির্বাচন করতে চাচ্ছে।‘
ইভিএমে ভোট কারচুপি করলে তার কোনো প্রমাণ থাকে না বলে মন্তব্য করেন চুন্নু। বলেন, ‘আবার প্রমাণের অভাবে সংক্ষুব্ধ হয়ে কেউ আইনের সহায়তা নিতে পারবে না। আমরা এখনও ইভিএম-এ নির্বাচন চাই না।’
চুন্নু আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ আর আওয়ামী লীগ- বিএনপিকে চায় না। দুটি দল দেশে সুশাসন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে একটি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি দেখতে চায়। জাতীয় পার্টি সেই বিকল্প শক্তি হতে চেষ্টা করছে। জাতীয় পার্টি কারো সঙ্গে জোট করবে না।’
জাতীয় পার্টি তিনশ আসনেই নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আর কারো জোটে যাবে না। কোনো রাজনৈতিক শক্তি জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব মেনে আমাদের সঙ্গে জোট করতে চাইলে আমরা বিবেচনা করব।’