বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ওটিসি মার্কেটে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানি রোজ হ্যাভেন বলপেনের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ১০ টাকায়। কিন্তু তদন্তকারীরা দেখতে পেয়েছেন কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে আগেই। কোম্পানির জমির বড় একটি অংশ বিক্রি করে দেয়া হয়েছে আরেক কোম্পানির কাছে।
সম্প্রতি দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একটি চিঠিতে রোজ হ্যাভেন বলপেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এসব বিষয়ে জবাব দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
বিএসইসি বলছে, তারা সরেজমিন দেখতে পেয়েছে কোম্পানি বন্ধ। কোম্পানির বাইরে কোনো সাইনবোর্ড ঝোলানো নেই। কারখানা প্রাঙ্গণে একটি দোতালা ভবন দেখতে পেয়েছে তারা।
তদন্ত দলটি কারখানার পাশের লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে, কারখানার বেশির ভাগ জমি শুধু দোতলা ভবন ছাড়া বিক্রি করে দেয়া হয়েছে পাশের কোম্পানি ইউনাইটেড লেদার ইন্ডাট্রিজের কাছে।
তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিএসইসি রোজ হ্যাভেন বলপেনের কাছে জমির বর্তমান মালিকানার কাগজপত্র চেয়ে পাঠিয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে দেশের পুঁজিবাজারে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল কি না জানতে চেয়েছে বিএসইসি।বিএসইসি জানতে চেয়েছে, রোজ হ্যাভেন আইপিওর মাধ্যমে টাকা তুলে সেই টাকা কীভাবে ব্যবহার করেছে। আর বর্তমানে কোম্পানির কী পরিমাণ ঋণ আছে।
রোজ হ্যাভেন বলপেন বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ১৯৯৭ সালে। কিন্তু ২০১৫ সালে কোম্পানিটি শেষ এজিএম করেছে, এরপর আর কোনো এজিএম করেনি। কোম্পানিটি ২০০৩ সাল থেকে নগদ লভ্যাংশ দেয়নি। এসব কারণে কোম্পানিটির পাঁচ বছরের আর্থিক তথ্য চেয়েছে বিএসইসি।
বারবার বলার পরও কেন কোম্পানটি ওটিসি মার্কেট থেকে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে যাওয়ার আবেদন করেনি জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
২০০৯ সালে বাংলাদেশের মূল পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত কোম্পানির এবং অতালিকাভুক্ত শেয়ার লেনদেন করার জন্য ওটিসি মার্কেট চালু হয়।
২০২১ সালে ওটিসি মার্কেটকে অকার্যকর ঘোষণা করা হয়। তখন ওটিসি মার্কেটে তালিকাভুক্ত ২৩টি কোম্পানিকে স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্মে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ১৮টি কোম্পানিকে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। বাকি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজার থেকে বের করে দেয়ার পরিকল্পনায় রাখা হয়।
রোজ হ্যাভেন বলপেনের এটিবিতে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা আবেদন করেনি। ১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির শেয়ার বর্তমানে ওটিসি মার্কেটে লেনদেন হচ্ছে ‘এন’ ক্যাটাগরিতে।
পুঁজিবাজারে এ কোম্পানির ১ কোটি ২৫ লাখ শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ আছে পরিচালকদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, বিদেশিদের হাতে রয়েছে ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৫০ দশমিক ৫২ শতাংশ শেয়ার।