‘টাকা পাব ভাবি নাই। টাকা তো দূরের কথা, মেয়ে জীবিত না মরে গেছে তা-ই জানতাম না। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শোকর। ইউএনও স্যারসহ সবাইকে ধন্যবাদ।’
মেয়ে ও মেয়ের ছয় বছরের পারিশ্রমিক একসঙ্গে পেয়ে এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করছিলেন রাঙ্গুনিয়ার নোয়াগাঁও এলাকার ষাটোর্ধ্ব আবুল কালাম।
পরিবারে সুদিন ফেরাতে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে ৬ বছর আগে সৌদি আরব যাওয়ার পর আর খোঁজ পাননি মেয়ে নুর নাহারের। আবুল কালাম এই সময়টাতে হন্যে হয়ে মেয়ের খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেছেন। দীর্ঘদিন খোঁজ না পেয়ে মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি।
৮ জুলাই সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় দেশে ফিরেছেন তিনি। সোমবার নুর নাহারের ৬ বছরের পারিশ্রমিক ১৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা জমা হয়েছে নুর নাহারের ব্যাংক একাউন্টে।
আবুল কালাম বলেন, ‘টাকা কেন, তারে পাব তা-ই তো ভাবি নাই।
‘২০১৬ সালে মেয়ে সৌদি আরব গিয়েছিল টাকা কামাইতে। তারপর আর কোনো খোঁজ পাইনি। আসার কয়েকদিন আগে তার সাথে যোগাযোগ হইছে। মেয়েকে পাইছি, টাকাও পাইছি। তবে তার সব মিলিয়ে ২২ লাখ টাকার মতো হয়েছিল। এখন ১৯ লাখ টাকা পাইছি, কিছু রয়ে গেছে। কারণ প্রতি দুই বছর পর পর দেশে আসার কথা ছিল ওর। আসা-যাওয়ার বিমান ভাড়া তাদের দেয়ার কথা ছিল। সে টাকাও তো পাবে সে। সেগুলো দেয়নি।’
এই বৃদ্ধ বলেন, ‘নুর নাহারের একটা মেয়ে আছে। সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তার স্বামী নুরুল ইসলাম মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় পরিবারের আর্থিক খরচ যোগাতে কষ্ট হয়ে যেত। তাই পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে বিদেশে গিয়েছিল সে।’
সৌদি আরব যাওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন নুর নাহার। খবর পেয়ে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস রিয়াদের হোতা বনি তামিম এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে সেফ হোমে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় নিজের ঠিকানা বলতে পারছিলেন না নুর নাহার। তবে পাসপোর্টের মাধ্যমে তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বলে জানতে পারেন দূতাবাস কর্মকর্তারা। সে অনুযায়ী রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গনি ওসমানীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার পরিবারের সন্ধান পান তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, ‘৩০ জুন সৌদি আরবের বাংলাদেশ অ্যাম্বেসি থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করা হয় যে নুর নাহার নামের এরকম কেউ আছে কিনা। তখন আমি সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বিষয়টা নিশ্চিত হয়ে নুর নাহারের বাবার সাথে যোগাযোগ করি। তখন অ্যাম্বেসি তাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
‘৮ তারিখ তিনি দেশে আসেন। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন তখন। তাছাড়া তার কাছে ফোন ছিল না। এতে তিনি ভুল করে রাজশাহীতে চলে যান। পরে খোঁজখবর নিয়ে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার নিজবাড়িতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করি।’
আতাউল গনি ওসমানী বলেন, ‘অ্যাম্বেসি থেকে নুর নাহারের কষ্টার্জিত অর্থ উদ্ধার করে দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয় তাদের। শুরুতে একটি একাউন্ট করতে বলা হয়। কিন্তু তারা না বুঝে একাউন্টটি নুর নাহারের বাবার নামে করেন। এ কারণে টাকাটা একাউন্টে আসেনি। তারা আবার আমার সাথে যোগাযোগ করলে অ্যাম্বেসিতে কথা বলে বিষয়টা বুঝতে পেরে নুর নাহারের নামে সোনালী ব্যাংকে একটা একাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করি। সোমবার ওই একাউন্টে ১৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা জমা হয়।’
এই কর্মকর্তা জানান, মেয়ে ও তার কষ্টার্জিত বেতন-ভাতার টাকা পেয়ে পুরো পরিবার অনেক খুশি হয়েছে। নুর নাহারের বাবা আবুল কালাম এখানে অফিসে এসে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।