বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সুন্দরবনের বেশিরভাগ এলাকায় জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট পানি বেড়েছে। এতে বন্যপ্রাণী ভেসে যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় বন বিভাগ।
প্রাণীদের রক্ষায় বন সংলগ্ন এলাকায় ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের (ভিটিআরটি) সদস্যদের মধ্যে সতর্কতা (এলার্ট) জারি করা হয়েছে।
সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের করমজল ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবীর বলেন, ‘জোয়ারের সময় স্বাভাবিক যে পানি হয় তাতে বন্যপ্রাণীদের কোনো সমস্যা হয় না। তবে গত শনিবার থেকে জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে বনে তিন থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘এতে বনের প্রাণীরা বেশ কষ্টে আছে। বিশেষ করে হরিণ, শুকর ও বাঘের বাচ্চারা বেশি পানি হলে ঠাই পাই না। আবার তারা গাছেও উঠতে পারে না। অনেক সময়ে বাচ্চা ভেসে যায়। তখন প্রাণীরা বনের মধ্যে উচু যায়গা খুঁজতে চেষ্টা করে।’
পশ্চিম বন বিভাগের কালাবগী স্টেশনের স্টেশন অফিসার (এসও) জহিরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘জোয়ারের সময়ে পানিতে বনের উঁচু জায়গাও ডুবে গেছে। আমরা লক্ষ্য রাখছি কোথাও বন্যপ্রাণী ভেসে যায় কিনা।’
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে গত রোববার সর্বোচ্চ ৪ ফুট পর্যন্ত পানি বেড়েছিল।’
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে খুলনাঞ্চলের নদ-নদীগুলিতে জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা বিপৎসীমার চেয়ে ৩ ফুট পর্যন্ত বেড়েছে।
পাউবোর খুলনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে পানির চাপ কমে গেছে। আজকে পানির উচ্চতা ছিল এক থেকে দেড় ফুট। আগামীকাল পানির উচ্চতা আরও কম হবে।’
খুলনার আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, ‘ভারতের দক্ষিণ মধ্যপ্রদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় একটি নিম্নচাপ অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি হয়েছে।
‘যে কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে পূর্ণিমা ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১-২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে।’
পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেশি পানি হওয়ার কারণে বন্যপ্রাণী ভেসে লোকালয়ে চলে যেতে পারে। সেজন্য বন সংলগ্ন গ্রামগুলিতে ভিটিআরটি সদস্যদের মাঝে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কোনো বন্যপ্রাণী ভেসে গেলে, তাদের উদ্ধার করতে বা বন বিভাগকে তাৎক্ষণিক জানাতে বলা হয়েছে।’
খুলনাঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, ‘উচ্চ জোয়ারের ফলে যাতে বন্যপ্রাণীদের ক্ষতি না হয়, সেজন্য সুন্দরবনের কিছু কিছু স্থানে টিলা নির্মাণ করা হবে। বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ওই প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়া গেছে। তবে এখন অর্থ ছাড়া পাওয়া শুরু হয়নি।’