এতদিন সমালোচনা করে এলেও জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকেও যুগপৎ আন্দোলনে পাশে পেতে চান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমরা এখনও ফরমাল আলোচনা করিনি। আলোচনার দরজা খোলা আছে। রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি সংগঠন যারাই এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে তাদের সঙ্গে নিয়েই আমরা যুগপৎ আন্দোলন করব।
মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা এ কথা বলেন।
১৯৮২ সালে বিএনপির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রপতি হওয়া হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টি গঠন করেন ১৯৮৪ সালে। এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এক হয়ে আন্দোলন করলেও তার পতনের পর দুই দলই জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করে।
১৯৯৯ সালে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট ও এরশাদের জাতীয় পার্টিকে নিয়ে বিএনপির বেগম খালেদা জিয়া গঠন করেন চারদলীয় জোট। তবে আসন বণ্টন নিয়ে আপত্তিতে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে জোট ছেড়ে যান এরশাদ। তবে তার দলের একটি অংশ বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি গঠন করে থেকে যায় জোটে। সেই বিজেপিও পরে দুই ভাগ হয়। এর মধ্যে আন্দালিভ রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন অংশ ছেড়েছে জোট।
২০০৭ সালের শুরুতে যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, সেটিকে সামনে রেখে পরে জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করে আওয়ামী লীগ। সেই নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভোট আবার জোটবদ্ধভাবে হয়।
২০১৪ সালে বিএনপির ভোট বর্জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি আলাদা নির্বাচন করলেও দুই দলের মধ্যে সমঝোতা ছিল। ২০১৮ সালে আবার জোট করে দুই দল।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টি কোন পথে আগাবে, এ নিয়ে আলোচনা রয়েছে এ কারণে যে বিএনপি আবার ভোট বর্জনের কথা বলছে।
দলটি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে। আর দাবি আদায়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আন্দোলন করছে যুগপৎ আন্দোলন করতে।
ফখরুল বলেন, ‘আগেই বলছি যে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এই সংসদ বাতিল করতে হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, যাদের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে, তারা সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভোটের পরিবেশ তৈরি করবে, যাতে ভোটাররা ভোট দিতে পারেন।
‘তার সঙ্গে আমাদের নেতা বলেছেন, আমরা নির্বাচনের পরে আন্দোলনকারী দলগুলোর সমন্বয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করব। প্রধান কারণ হচ্ছে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে, সেগুলোকে এককভাবে গড়ে তোলাটা সমুচিত হবে না, তাই অন্য দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই।’
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আদালতের রায়ে বাতিলের কারণে এটি আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে আওয়ামী লীগ নেতারা যে বক্তব্য রাখছেন, তার প্রতিক্রিয়াও দেন ফখরুল। বলেন, ‘সংবিধান পরিবর্তন করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান করা হয়েছিল। আবার সংবিধান তারাই পরিবর্তন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে আসে। এখন যেহেতু আপনারা আপনাদের দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি সংসদে তাই সেটা ফিরিয়ে আনা আপনাদের জন্য সহজ। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য এবং বাংলাদেশকে একটি চিরস্থায়ী সহিংসতা থেকে বন্ধ করার একমাত্র পথ নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ নীতি নিয়ে সরকারের বিধান চালু করা।’
তিনি বলেন, ‘সরকার চাইলেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে। আমাদের দাবি একটাই— পরিবেশ তৈরি করো, একটি নিরপেক্ষ অবস্থা তৈরি করো, ভোটাররা ভোট দিয়ে তাদের যেন পছন্দের প্রতিনিধিকে বেছে নিতে পারে।’
‘পুলিশের দায়িত্ব হয়ে গেছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা’
এক প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘পুলিশ প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠান। তার মৌলিক দায়িত্বগুলো হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাশকতা বন্ধ করা। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের দায়িত্ব একটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে; নির্দেশ আসে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গায়েবি মামলা দেয়া।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে আওয়ামী লীগ, হামলা করছে আওয়ামী লীগ আর সেখানে পুলিশ বাদী হয়ে উল্টো বিএনপি নেতা-কর্মীর নামে মামলা দিচ্ছে।’
পুলিশের ওপর আঘাত করলে পুলিশ কি চুপ করে বসে থাকবে- আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপি নেতা বলেন, ‘পুলিশকে কখনও আক্রমণ করা হয়নি। পুলিশ আগ বাড়িয়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র যারা হামলা করে, তাদের সহায়তা করতে গিয়ে ঘটনা ঘটেছে।
‘আমাদের দলের ছেলেরা গুলিতে মারা গেছে, কারো চোখ নষ্ট হয়েছে, আহত হয়েছে অসংখ্য। মামলার ভয়ে অনেকেই আহত হওয়ার কথা বলে না, হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থাকতে চায় না।’