যে জাতের ধান থেকে চাল উৎপাদন করা হয়েছে সেই জাতের নাম চালের বস্তা ও প্যাকেটে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করতে একটি আইন হচ্ছে। এমনটি জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সংলাপে এসে এ তথ্য জানান খাদ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি চালের কতটুকু অংশ ছাঁটাই করা যাবে তাও সেই আইনে নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি। আইনটির খসড়া মন্ত্রিসভার সম্মতির পর বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ে আছে বলেও জানান খাদ্যমন্ত্রী।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মিনিকেট বলে কিছু নেই। মিনিকেটের উৎপত্তি জানলে আর এই নাম দিত না। একসময় ভারত থেকে চিকন চালের বীজ আনা হতো মিনি সাইজের প্যাকেটে করে। এই হলো মিনিপ্যাক। এই বীজকে আমরা নাম দিয়েছি মিনিকেট চাল। এটা বহুবার বলা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার এই মিনিকেট নাম উচ্ছেদ করতে অভিযান চালাতে পারে। আমাদের সে সক্ষমতা নেই।’
মঙ্গলবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সংলাপে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। ছবি: নিউজবাংলা
‘আমরা আইনটি মন্ত্রিসভায় দিয়েছি। এটার খসড়া অনুমোদন হয়েছে। এখন ভেটিংয়ে আছে। সেখানে বলা আছে ব্র্যান্ড নাম তারা যেটাই দিক, রজনীগন্ধা দিতে পারে, গোলাপ ফুল, জরিনা-সখিনা নাম যাই দিক, কিন্তু ধানের জাতের নাম দিতে হবে। ব্রি-ধান ২৮, ২৯, রোপা আউস, আমন, এমন নাম দিতে হবে। নাম দেয়ার পর ব্র্যান্ড যাই করুক।’
তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি, ধানের ছাঁটাই যেটা সেটারও একটা রেশিও আমরা ঠিক করেছি। বেশি পলিশের ফলে চালের একটা অংশ তো নষ্ট হয়। এই ক্ষয়ে যেটা হয় সেটা সারা দেশের মোট উৎপাদনের একটি অংশ। এ কারণে এটাও আমরা নির্ধারণ করেছি। এটা পাস হলে অনেকেই সোজা হয়ে যাবে।
‘তখন আমরা সাবেক চাল খেতে পারব। তখন প্যাকেট চালও বন্ধ হয়ে যাবে। এত ফাইন রাইস খাওয়ার অবস্থা থাকবে না। তখন চাল খসখস হবে। এখন তো লাল চালের দাম বেশি। সবাই যদি সেদিকে চলে যায় তাহলে তো সব সমান হয়ে গেল।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চালসহ ৯ পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করার যে উদ্যোগ নিয়েছে সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয় কিভাবে বলেছেন। আমার সঙ্গে এটা শেয়ার হয়নি। তবে এটুকু বলতে পারি, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম বেঁধে যে তিনি এটা ধরে রাখতে পারবেন… এটা তো চালটা আমাদের প্রোডাকশনের ওপর যেমন নির্ভর করে আর আমদানিটা আমরা ক্রাইসিস মনে করলে সামান্য করি।
‘উনি যেটা বলেছেন যে আমদানি করা পণ্যে তার দাম নির্ধারণ করে দেয়া সম্ভব। কিন্তু যেটা আমাদের দেশে উৎপাদিত হয় যার সঙ্গে কৃষক জড়িত, উৎপাদন-পরিবহন ব্যয়, তেলের মূল্য, কৃষককে যেমন দামটা পেতে হবে, তেমনি আবার ভোক্তাদের জন্য সহনীয় হতে হবে। নিম্ন আয়ের ভোক্তা যারা তাদের জন্য সরকারের পরিকল্পনা তো আছেই।’
তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে চাল আমদানি করে যদি সারা বছর ওএমএস চালাতে হয় আমরা অবশ্যই চালাব। যারা খুব ভালো চাল খান, প্যাকেট, তারা কিন্তু দামাদামি করে না। কত দাম এই দাম, নিয়ে চলে যায়। এটার পেছনে দৌড়ানো সবার জন্য কষ্টকর।
‘গ্রুপ ব্যবসায়ীরা শুধু চাল না অনেক কিছুই প্যাকেটজাত করে। তারা যেটা করে খোলাবাজারের ফাইন রাইস যদি ৬৫ টাকা হয় তারা সেটা ৯০ টাকায় বিক্রি করে। আমরা আবার এটা আগ্রহ করে নিয়ে যাই। এখানে আমাদেরও চিন্তা করতে হবে প্যাকেট খাব না। যাদের বেশি পয়সা তারা এটা চিন্তা করে না। যারা হীরার মালা গলায় দেয় তাদের কাছে ৮০ টাকা ৯০ টাকা কিছু না। সাধারণের দিকে আমাদের দেখতে হবে।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সুযোগ নেবে অসাধু ব্যবসায়ী তাদের যদি ৯০ টাকায়ও ডলার দেন তারা সুযোগ নেবেই। তাদের পেছনে শক্তিশালী মনিটরিং দরকার, যেটা আমরা করছি। কতখানি চাল কোন বর্ডার দিয়ে আসছে, প্রত্যেক বর্ডারে আমাদের লোক নিয়োগ দেয়া আছে।
‘এটা কার কাছে বিক্রি করল প্রতিদিনের রিটার্ন আমরা নিচ্ছি। অতএব এটা ছাড়া ডলারের দাম ওঠানামার ইমপ্যাক্ট তো আছেই, তবে এটার জন্যই তো আমরা ট্যাক্সটা কমিয়ে দিয়েছি। ট্যাক্স ৫ শতাংশ রাখা হয়েছে।’